রাজশাহীতে কাক মরছে বার্ড ফ্লুতে

রাজশাহীতে সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে কাক মৃত্যুর মূলে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে।

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2016, 08:33 PM
Updated : 18 Feb 2016, 08:35 PM

ঢাকায় গবেষণাগারে মৃত কাকের নমুনা পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওই এলাকায় বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়েছে সরকার। তাদের মধ্যে মানুষ ও পশুপাখির রোগ বিশেষজ্ঞ এবং নৃতত্ত্ববিদও রয়েছেন।

দলটি বুধবার কাজ শুরু করেছে বলে সরকারের রোগ পর্যবেক্ষণকারী শাখা আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রাজশাহীর কাকের শরীরে বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত এইচ৫এন১ এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ধরা পড়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় হাজার হাজার কাক থাকে। এসব কাক রোগী ও তাদের স্বজনদের ফেলা বর্জ্য খায়।

এক সপ্তাহ আগে হাসপাতাল এলাকায় বেশ কিছু কাক মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। নগরীর আরও কিছু এলাকায়ও অস্বাভাবিক হারে কাক মরার খবর পাওয়া যায়। এরপর সেখানকার অসুস্থ ও মরা কাকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজামউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, এত কাক এর আগে কখনও মরেছে বলে তিনি শোনেননি।

বাংলাদেশে প্রথম ২০০৭ সালে পোল্ট্রিতে এইচ৫এন১ (যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে বার্ড ফ্লু হয় ) ধরা পড়ে। এরপর হাজার হাজার পোল্ট্রি মুরগি নিধন করা হয়।

সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ করার পর পোল্ট্রিতে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর কমে আসে।

বার্ড ফ্লু বিশ্বব্যাপী মানবদেহের জন্য খুবই ভয়ানক হিসেবে বিবেচিত হলেও বাংলাদেশে এর যে প্রজাতি ধরা পড়েছে তা ‘তেমন ভয়ানক নয়’। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে মানবদেহে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এ পর্যন্ত মাত্র আটজন আক্রান্ত হয়; তাদের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও ভাইরাসটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি মনে করে; এজন্য সব দেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছে তারা।  

অধ্যাপক মাহমুদুর বলেন, বিজ্ঞানীদের দলটি রাজশাহীতে কাকগুলো কীভাবে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলো এবং কোনো মানুষের দেহে সেটি ছড়িয়েছে কি না- তা খুঁজে বের করবে।

“আমাদের ধারণা পোল্ট্রি থেকে কাকগুলোর শরীরে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। কাক ময়লা- আবর্জনা খায় এবং মানুষ মাঝেমধ্যে মরা পোল্ট্রি মুরগি যেখানে-সেখানে ফেলে রাখে।

“এ কারণে আমরা ‘এক স্বাস্থ্য’ উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে সব বিভাগ একসঙ্গে কাজ করবে।”

মানব স্বাস্থ্য, প্রাণি ও পশু-পাখির স্বাস্থ্য বিভাগ, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি এবং ইকোহেলথ অ্যালায়েন্স- সবাই এখানে রয়েছে বলে তিনি জানান।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. এএসএম আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রিতে ভাইরাসটি আছে।

“মনে হচ্ছে, কাকগুলো পোল্ট্রি থেকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স ও রেসপন্স’ বিভাগে কাজ করে আসা এই বিশেষজ্ঞ ঝুঁকি এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

“আমাদেরকে এখন মৃত কাক যেখানে-সেখানে ফেলা বন্ধ করতে হবে। মানুষ যাতে মরা কাক না ধরে সে ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এই সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

এর আগে ২০০৯ ও  ২০১১ সালে ধামরাই ও ঢাকায় কাকের শরীরে এ ধরনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।

সোয়াইন ফ্লু নামে পরিচিত এইচ১এন১ এবং এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ চারটি ফ্লু ভাইরাস বাংলাদেশে আছে।

২০০৯ সালের মহামারীর পর সোয়াইন ফ্লু বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ও এইচ৩ এর মতোই মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জায় পরিণত হয় বলে পর্যবেক্ষণ আইইডিসিআর’র।