‘বৃক্ষ মানব’ আবুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল সরকার

ত্বকে ভাইরাসের সংক্রমণে হাত-পায়ে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আবুল বাজানদারের (২৫) চিকিৎসার সব খরচ চালাবে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 12:05 PM
Updated : 4 Feb 2016, 02:05 PM
বিরল রোগে আক্রান্ত খুলনার আবুলকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে দেখতে গিয়ে এ ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “বিরল রোগে আক্রান্ত দরিদ্র আবুল। পৃথিবীতে এই ঘটনা তৃতীয় আর বাংলাদেশ প্রথম। আমি তাকে দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। সত্যিই বিরল এক রোগ এটি।”

বাবুলকে দেখতে আসা উৎসুক জনতা ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দর্শনার্থী ও আপনারা (সাংবাদিক) আবুলের কক্ষে যত কম যাবেন তা তার জন্য ভালো।”

আবুলের দুই হাতে প্রায় ১০ কেজি ওজনের আঁচিল; পায়েও প্রায় কাছাকাছি। দেখে মনে হয় হাত-পা থেকে গাছের শাখা-প্রশাখা গজিয়েছে, এরই মধ্যে ‘ট্রি ম্যান’ বা ‘বৃক্ষ মানব’ নামে পরিচিত হয়ে গেছেন তিনি।

বিরল এই রোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আবুলকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এক সময় বাবার সঙ্গে ভ্যান চালিয়ে সংসারের আর্থিক যোগানে সহযোগিতাকারী আবুল এখন ‍পরিবারের বোঝা, খেতে হয় অন্যের হাতে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “চেষ্টা করব তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। যেভাবে হোক রোগের তথ্য সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আবুলের চিকিৎসা করা হবে।”

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালাম জানান, যে কোনো ধরনের শারীরিক ‘ডিফেক্ট’র চিকিৎসা প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ থেকে দেওয়া হয়। তাই আবুলকে সেখানে রাখা হয়েছে।

আবুলের চিকিৎসার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।  

ডা. আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, “তার সবকিছু বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন আমরা বলতে পারব না এই রোগের চিকিৎসা সার্জারি বা লেজারের মাধ্যমে করা যাবে কি না।

“প্রাথমিকভাবে রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আবুল খুব সম্ভবত ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরুসিফরমিস’ (Epidermodysplasia verruciformis) রোগেই আক্রান্ত এবং এই রোগ ‘ট্রি ম্যান সিনড্রম’ (Tree man syndrome) হিসেবে পরিচিত।”

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নরিস কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের চিকিৎসক মার্টিন কাস্টের সঙ্গে আবুলের রোগ নিয়ে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান।

তিনি বলেন, “মার্টিন কাস্ট গত বিশ বছর ধরে এই সিনড্রোমের রোগীর গবেষণায় এবং ইন্দোনেশিয়ার রোগী ডেডীর চিকিৎসার সাথে জড়িত। মার্টিন কাস্ট কিছু রক্ত, টিস্যু বায়োপসি পরীক্ষার জন্য পাঠাতে বলেছেন।

“আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি এবং তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।”

শিগগির আবুলের রক্ত ও টিস্যু পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।

৩০ জানুয়ারি খুলনা থেকে এসে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন আবুল বাজানদার। গত ১০ বছর ধরে আবুল এই রোগে আক্রান্ত।