জিকা নিয়ে উদ্যোগী বাংলাদেশ

মশাবাহিত জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে পরিকল্পনা তৈরিতে বৃহস্পতিবার একটি ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ বসছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2016, 07:02 PM
Updated : 2 Feb 2016, 07:02 PM

রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক শামসুজ্জামান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জিকা ভাইরাসের কারণে ব্রাজিলে হাজারো শিশুর ত্রুটি নিয়ে জন্ম হয়েছে। এই ভাইরাস ঠেকাতে নজরদারি জোরদারের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল, যার সদস্য বাংলাদেশ।

ব্রাজিলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক বছরে তিন থেকে চার কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

অধ্যাপক শামসুজ্জামান জানান, তারা বৃহস্পতিবার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত হবে।

“স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন।”

জিকার পোষক এডিস এজিপ্টি মশা বাংলাদেশে থাকায় এই ভাইরাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আলোচিত ডেঙ্গু জ্বরের জন্যও এই মশা দায়ী।

তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে জিকা ভাইরাস নেই।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেবেন তারা।

“ভাইরাসটি না থাকায় এই মুহূর্তে শিশুর জন্মের ওপর আমরা নজরদারির কথা ভাবছি না। আমাদের মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”

তবে বাড়ি-ঘর ও এর আশপাশের পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করায় তা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রধানত জনসাধারণের ওপর নির্ভর করবে।

“প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে মানুষের বাড়ি-ঘরের ভিতরে গিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের সুযোগ দিতে ব্রাজিলে একটি আইন পাশ হয়েছে,” বলেন অধ্যাপক রহমান।

জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেছেন, “এই অঞ্চলের অনেক মানুষের মধ্যে জিকা ভাইরাসের প্রতিরোধক থাকার কোনো প্রমাণ নেই।

“অতীতে থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপে এই ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।”

দ্রুত সনাক্তকরণ এবং এই অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে তথ্য বিনিময়ের জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান আহ্বান জানান তিনি।

১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সাধারণত হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়।

এই ভাইরাস সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে এসেছে নবজাতকদের নিয়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী মা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।

এর ফলে আক্রান্ত শিশু ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী’ হতে পারে; কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিকশিত মস্তিষ্ক শিশুর মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তবে জিকা ভাইরাস ঠিক কীভাবে গর্ভের শিশুর এই ক্ষতি ঘটায় তা এখনো উদ্ঘাটন করা যায়নি।

এই রোগের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই। এটা আমেরিকান দেশগুলোতে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে, কলাম্বিয়া, ইকুয়েডরসহ বেশ কয়েকটি দেশে দম্পতিদের ‘গর্ভধারণ’ পেছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওই সব দেশে ভ্রমণ না করতে গর্ভধারিণীদের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিলক মার্গারেট চ্যান এই ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।