তামাকের সতর্কবার্তায় আইন উপেক্ষা

বাংলাদেশের ৫৪ শতাংশ সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা সংক্রান্ত আইন মানা হচ্ছে না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2016, 04:27 PM
Updated : 30 Jan 2016, 05:47 AM

আইন মানার এ নিম্ন হারের কারণে ছবিযুক্ত সতর্কবার্তা কার্যকরে সরকারের জোরাল পদক্ষেপের দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের দ্য ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল টোব্যাকো কন্ট্রোল।

তাদের উদ্যোগে করা এই গবেষণার ফল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।

জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন (বিসিসিপি) এবং প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)’র যৌথ আয়োজনে “ট্যোবাকো প্যাক সার্ভিস সিস্টেম বাংলাদেশের সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বার্তার উপস্থিতি” শীর্ষক সাংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে সংগৃহীত ১৯১টি সিগারেটের প্যাকেট বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল তৈরি করা হয়।

ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশি এমন ১৪টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে করা এই গবেষণার বাংলাদেশ অংশে সহায়তা করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন।

অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল, চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেইন এবং ভিয়েতনাম।

দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটায় ছয়টি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের জন্য দুটি সতর্কবাণী ব্যবহার করতে বলা আছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ২৯ শতাংশ প্যাকেটে আইন নির্ধারিত এসব সতর্কবাণী ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ৭১ শতাংশ সিগারেটের প্যাকেটে হয়তো কোনো সতর্কবার্তা পাওয়া যায়নি বা বিদেশি সতর্কবার্তা রয়েছে।

যেসব প্যাকেটে আইন নির্ধারিত সতর্কবাণী পাওয়া গেছে, সেগুলোর মাত্র ৪৬ শতাংশ প্যাকেটের উভয় পাশে আইন অনুসারে ৩০ শতাংশজুড়ে সতর্কবাণী মুদ্রিত হয়েছে, অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ সিগারেটের প্যাকেটে আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি।

“৯৩ শতাংশ প্যাকেটে সতর্কবার্তা সাদা জমিনে কালো অক্ষর দ্বারা মুদ্রিত রয়েছে এবং ৯৬ শতাংশ প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা আইনে নির্ধারিত ১৮ পয়েন্ট-এ ছাপা হয়েছে।”

গবেষণার বাংলাদেশি সহযোগী বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নজরুল হক বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশে বাজারজাত করা সব সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

“কেউ এক প্যাকেট দুই প্যাকেট সিগারেট বিদেশ থেকে নিজের জন্য আনতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করতে হলে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের আইন মেনে তা তৈরি করতে হবে।”

আগামী ১৯ মার্চ থেকে সব তামাকজাতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনে ছবিযুক্ত সতর্কতা আসছে। প্রায় দুই মাস পূর্বে প্রকাশিত এই ফলাফলে উদ্বেগ এসেছে সংবাদ সম্মেলনে।

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল হক বলেন, “মার্চ থেকে ছবিযুক্ত সতর্কবার্তা আসছে। সতর্কবার্তা প্রকাশের বর্তমান প্রবণতা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে।”

তামাকপণ্যের মোড়কে সতর্কবার্তায় আইন যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা প্রজ্ঞা।

তামাক কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য সতর্কবাণী সংক্রান্ত আইন ঠিকমত প্রতিপালন করছে কি না- তা দেখতে সরকার, তামাকবিরোধী সংগঠন এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ গবেষকদের দ্বারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের দাবি করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের দ্য ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল টোব্যাকো কন্ট্রোলের অধ্যাপক (কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর) ড. জোয়ানা কোহেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক (যুগ্ম সচিব) মো. রুহুল কুদ্দস, ওয়ার্ল্ড লাং ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ অনুসারে, বাংলাদেশে চার কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক সেবন করেন; যার মধ্যে দুই কোটি ১৯ লাখ ধূমপায়ী।

গ্লোবাল ইয়ুথ টোবাকো সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও তিন লাখ ৮২ হাজার।