বুকের দুধের প্রোটিন থেকে নতুন এন্টিবায়োটিক রুখবে ‘সুপারবাগ’

বুকের দুধ থেকে নতুন এক এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ‘এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2016, 08:55 AM
Updated : 24 Jan 2016, 08:55 AM

ব্রিটেনের টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরি ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকদের উদ্ভাবিত এই এন্টিবায়োটিক কোষীয় রূপান্তরের কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতার চিকিৎসায়ও সহায়ক হবে।  

রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মায়ের দুধে থাকা ল্যাকটোফেরিন নামের একটি প্রোটিন নবজাতককে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। ওই প্রোটিনের মাধ্যমে গবেষকরা একটি ক্যাপসুল তৈরি করেছেন, যা ভাইরাসের মতো কাজ করে।

এই ক্যাপসুল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে ধ্বংস করতে পারে অন্য কোষের ক্ষতি না করেই। 

এই গবেষক দলের সদস্য হাসান আলকাশেমকে উদ্ধৃত করে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের খবরে বলা হয়, ক্যাপসুলের কার্যকারিতা দেখতে তারা অ্যাটমিক মাইক্রোস্কোপসহ বিশেষ একটি প্ল্যাটফরম ব্যবহার করেন।

“আমাদের লক্ষ্য কেবল ক্যাপসুল ছিল না, ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লি বা পর্দার উপর এই ক্যাপসুল কী মাত্রায় আক্রমণ করে তাও আমরা দেখতে চেয়েছিলাম।

“পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে দুর্দান্ত। এটি বুলেটের বেগে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লিতে আক্রমণ শানিয়েছে।”

গবেষকরা দেখতে পান, এই প্রোটিন ক্যাপসুল ব্যাকটেরিয়ার জৈব কাঠামোকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে সেটি আর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে না।

আর এ কারণেই সাধারণ এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক নিরাময়ে গবেষকরা নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।    

প্রচলিত এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা এ ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে বলা হচ্ছে ‘সুপার বাগ’। প্রতিবছর সুপার বাগের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের গঠিত একটি গবেষক প্যানেলের হিসাবে এখনই এসব সুপার বাগ প্রতিরোধের নতুন চিকিৎসা তৈরি না হলে ২০৫০ সালে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ১ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াতে পরে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেন, সুপারবাগের বিরুদ্ধে জয়ী হতে না পারলে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ‘অন্ধকার যুগে’ ফিরে যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ল্যাকটোফেরিন থেকে তৈরি নতুন এ এন্টিবায়োটিক সুপারবাগের পাশাপাশি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রক্তকণিকার রোগ নির্মূলেও ভালো কাজ করবে।

এ বিষয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডেম স্যালি ডেভিস টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতি দশকে আমাদের এ ধরনের দশটি নতুন এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন।… আমি কেবল আমার বৃদ্ধ বয়সের কথা ভাবছি না; আমার সন্তানরাও যাতে তাদের বৃদ্ধ বয়সে ব্যবহার করতে পারে।”