ফেনসিডিল নিয়ন্ত্রণে ‘কঠোর হচ্ছে’ ভারত

বাংলাদেশের উদ্বেগের মধ্যে ফেনসিডিলের মতো কফ সিরাপের অপব্যবহার বন্ধে ওষুধ কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে ভারত সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2015, 04:56 PM
Updated : 28 Oct 2015, 04:56 PM

নেশাউদ্রেককারী কোডেইন উপাদান সমৃদ্ধ কফ সিরাপ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে তা সিদ্ধ। এই ফেনসিডিল সিরাপ বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে, যা নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত।

ফেনসিডিল নামে পরিচিত কোডেইন মিশ্রিত সিরাপ বাংলাদেশে নেশা উদ্রেককারী হিসেবে ১৯৮০ সালে নিষিদ্ধ করা হয়।

সিদ্ধ হলেও কোডেইন সমৃদ্ধ সিরাপের অপব্যবহার বন্ধে এক বছর আগে একটি নীতিমালা করে ভারত সরকার। কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলো তা মেনে চলছিল না।

এখন সেই নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে আসছে।

মাদক হিসেবে পাচার ঠেকাতে বাজারজাত সিরাপের বোতলগুলোর বিষয়ে তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাওয়া সহজ করতে গত বছর থেকে ভারতের ওষুধ কর্তৃপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানিগুলোকে বলে আসছিল।    

কিন্তু কোম্পানিগুলো এক ব্যাচে তৈরি ওষুধের বোতলের সংখ্যা কমিয়ে আনলেও অন্য নিয়মগুলোর তোয়াক্কা করছে না বলে চলতি বছরই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

এক ব্যাচে উৎপাদন করা সিরাপগুলো একজন ক্রেতার কাছেই বিক্রি করা, বোতল মোড়কজাত করার ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গা করছিল না কোম্পানিগুলো।

ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওষুধ বরাদ্দের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রেশমি বর্মা বলেন, কিছু কিছু জেলায় এ ধরনের ওষুধের বিক্রি ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোকে নতুন নিয়মাবলি মেনে চলতে আবার চাপ প্রয়োগ করা হবে।

চলতি বছরের শেষের দিকে ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সভা হবে। তখন এই ‘চাপ’ দেওয়া হবে বললেও নিয়ম মানতে কোম্পানিগুলোকে কীভাবে বাধ্য করা হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি বর্মা।

চলতি বছরের মার্চ থেকে গত ছয় মাসে ৮৩ হাজার বোতল কোডেইন মিশ্রিত সিরাপ জব্দ করে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত বছর ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি বোতল ফেনসিডিল জব্দ হয় বাংলাদেশে।

বুধবার বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকেও ফেনসিডিল পাচার ঠেকানো নিয়ে আলোচনা হয়।   

ওষুধ কোম্পানিগুলোর কোডেইন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এর আগে ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় কারখানার মাধ্যমে এর বিতরণের ব্যবস্থাও করেছে বলে জানান রেশমি বর্মা।

ভারতে কোডেইন মিশ্রিত কফ সিরাপের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ফাইজার ও অ্যাবোট। ভারতে এই সিরাপের প্রায় ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বাজার রয়েছে, যার বড় অংশ এই কোম্পানি দুটোর।

সরকারের নতুন করে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনার বিষয়ে কোম্পানি দুটির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অ্যাবোট হেলথকেয়ারের ওষুধ ‘ফেন্সিডিলে’ মাত্রাতিরিক্ত কোডেইন ব্যবহারের আভিযোগও এনেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তবে সেই ৮০ হাজার বোতল সিরাপ বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়নি কোম্পানিটি।

সেসময় অভিযোগ ওঠে বোতলের লেবেলে ১০ মিলিগ্রাম কোডেইনে থাকার কথা লেখা থাকলেও পাওয়া যায় দ্বিগুণেরও বেশি মাত্রা।

এই ধরনের ওষুধের অপব্যবহার ব্যাধির মতো বেড়ে যাওয়ায় ভারত সরকার এই ধরনের ওষুধ উৎপাদন অবৈধ ঘোষণা করা নিয়েও ভাবছে বলেও দেখা গেছে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত একটি সরকারি সভার কার্যবিবরণীতে।

তবে সরকার এই ওষুধটি নিষিদ্ধের পক্ষে নয় জানিয়ে বর্মা বলেন, “ওষুধটির সত্যিকারের চাহিদা রয়েছে।”