বর্ষার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ

বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 06:55 AM
Updated : 27 July 2015, 01:00 PM

চলতি শতকের শুরুতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এডিস মশাবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসার ধরন নিয়ে চিকিৎসকদের ধাঁধায় পড়তে হয়েছিল।

তবে তারা চিকিৎসার ‘গাইডলাইন’ তৈরি করার পর এবং সাধারণ মানুষ এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠায় ধীরে ধীরে ডেঙ্গু সাধারণ মৌসুমি জ্বরের পর্যায়ে নেমে এসেছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন আর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন সবাই ডেঙ্গু সম্পর্কে জানে।”

কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ঠিকঠাক না হলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যুও হতে পারে। এ কারণে জ্বর হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেন টিটো মিয়া।       

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়মিত নজর রাখে।  

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে।”

২০১৩ সালে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন বা বাহক মশার প্রজনন পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এ জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও এর মৌসুম দীর্ঘায়িতও হতে পারে।

মাহমুদুর রহমান জানান, চলতি বছর প্রথম ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর তাদের কাছে আসে গত জুন মাসে। এরপর থেকে মোট ৮৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এসেছে।

“এর বাইরে আরও কিছু ঘটনা থাকতে পারে। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী বলতে পারি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ রোববার এক বৈঠকের আয়োজন করে, যাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে আঞ্চলিক গান বা পল্লীগীতির মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, সোমবার তারাও এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন।

“তবে আমরা ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোতে নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা নেব এবং সে অঞ্চলগুলোতে আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়াব।”   

মশক নিধনে সিটি করপোরেশনগুলোর নিয়মিত কার্যক্রম চালু থাকলেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা না গেলে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কঠিন, কেননা ঘরের ভেতরে ফুলদানিতে বা বাড়ির পাশে জমে থাকা পানিতে এ মশা ডিম ছাড়ে।

মশার মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পেশী ও গাঁটে ব্যথা, কখনো গায়ে ফুসকুড়ি, মাঝেমধ্যে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, গলা ব্যথা এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে নাক, দাঁতের মাড়ি বা মুত্রের সঙ্গে রক্তপাতের মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। 

হাড়ের জোড়ায় তীব্র ব্যথার কারণে ডেঙ্গুকে ‘হাড়ভাঙ্গা জ্বর’ বলা হয় অনেক সময়।

অধ্যাপক টিটো মিয়া বলেন, “জ্বরের সঙ্গে যদি কাশি বা সর্দি হয়, তাহলে তা ডেঙ্গু না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”