সমকামী ছিলেন মেরিলিন মনরো

তার মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়। অসামান্য যৌনাবেদনের জন্য সেলুলয়েডের দর্শকদের মনে আজও তার জ্বলজ্বলে উপস্থিতি।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2014, 02:05 PM
Updated : 10 Sept 2014, 04:56 PM

 লাস্যময়ী মেরিলিন মনরো ৩৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে বার বার শিরোনাম হয়েছেন নানা সম্পর্কে জড়িয়ে। তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আর তার প্রেমিকদের তালিকায় রয়েছে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, জন এফ কেনেডি। সেই মেরিলিনই সমকামী ছিলেন বলে নতুন পাওয়া তথ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।

তারকাদের ব্যাবহৃত সরঞ্জাম নিলামে তোলার জন্য পরিচিত অনলাইন প্রতিষ্ঠান অকশনমাইস্টাফ ডটকম নিলামে তুলতে যাচ্ছে মেরিলিনের একটি জিন্সের প্যান্ট। তাদের দাবি, এই প্যান্টটি তিনি ভালবেসে উপহার দিয়েছিলেন তার 'সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু' অভিনয়ের প্রশিক্ষক নাতাশা লাইটেসকে। সেইসঙ্গে মনরোকে পাঠানো লাইটেসের হাতে লেখা একটি চিঠিও নিলামে তুলছে তারা। 

যদিও সেই চিঠিতে নিজেদের সম্পর্কের কথা খুলে বলেননি, জার্মান এই অভিনয়ের প্রশিক্ষক। তবে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল বলছে, ১৯৬২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাইটেস বলেছিলেন মেরিলিনের সঙ্গে তার প্রণয়ের কথা। তিনি এও বলেছিলেন যে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পযর্ন্ত একসঙ্গে বসবাস করেন তারা।

মেরিলিন মনরোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা টেড জর্ডানও নিশ্চিত করেছেন বিষয়টির সত্যতা। জর্ডানকে নাকি মেরিলিন বলেছিলেন, নাতাশার সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল।

তিনি বলেছিলেন,“কেন নয়? মানুষ তার সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক তৈরি করে যাকে সে পছন্দ করে। এরকম একটি প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে সমস্যাটা কোখায়?”

নাতাশা লাইটেসের সঙ্গে মেরিলিনের পরিচয় ঘটে, যখন তার বয়স মোটে কুড়ি। হলিউডে তখনও নিজের পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজে পাননি তিনি। নাতাশার ভাষ্যে, “সে তখনও সুন্দরী হয়ে ওঠেনি। সে জানতো না কিভাবে কথা বলতে হয়। সবকিছু নিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতো সে।”

তবে খ্যাতি পাওয়ার পরও নিজের ভেতর থেকে ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারেননি মেরিলিন। নাতাশা বলেছিলেন, “তার মধ্যে সবসময় এক ধরনের নিরাপত্তাহীণতা কাজ করতো। তার ভয় ছিল, বিশ্বজুড়ে সেক্স সিম্বল হিসেবে তার যে ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তা মুহূর্তেই হারিয়ে যাবে। তার সাজগোজ, পোশাক-পরিচ্ছদ, এসব কিছু নিয়েই তাই সব সময় তঠস্থ থাকতো।”

“অথচ মেরিলিন নিজে কিন্তু যৌনতাকে ঘৃণা করতো। কেউ যখন তাকে আবেদনময়ী বলত সে বিরক্ত হতো।”

নাতাশা আরও জানান, “আমাদের বাসায়, মেরিলিণ সারাক্ষণ বিবসনা হয়ে থাকতো। ৬, ৭ বা ৮ ঘণ্টা যতক্ষণই সে বাসায় থাকতো না কেন, তার শরীরে একটা সুতোও থাকতো না। আমি কিন্তু একটুও বাড়িয়ে বলছি না।”

নাতাশার ওপর অনেকটাই নির্ভর করতেন মেরিলিন। লুইস ব্যানারের লেখা মেরিলিনের জীবনীভিত্তিক বই ‘মেরিলিন: দ্য প্যাশন অ্যান্ড দ্য প্যারাডক্স’-এ বলা হয়েছে, মেরিলিন এর জন্য দারুণ কৃতজ্ঞ ছিলেন নাতাশার প্রতি।

“মিস লাইটেস আমাকে মুক্ত করেছেন। তিনি আমার জীবনকে ভারসাম্য দান করেছেন। আজ আমি যা, তার সবকিছুর জন্যই তার কাছে পুরোপুরি কৃতজ্ঞ।”

লুইস ব্যানার বইটিতে মেরিলিন আর নাতাশার সম্পর্ককে বর্ণনা করেছেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকভাবে মেরিলিন অবশ্য বিয়ে করেছেন তিনবার। প্রথম স্বামী জেমস ডাওয়েট্রি, দ্বিতীয় স্বামী আর্থার মিলার আর তৃতীয় স্বামী জো ডিম্যাজিও।

এছাড়াও, তখনকার পর্দা কাঁপানো দুই অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডো আর ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার সঙ্গে তার প্রণয়ের ব্যাপারটিও গোপন ছিলনা। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও তার ভাই ববি কেনেডির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কও ঝড় তুলেছিল হলিউডজুড়ে।

মেরিলিনের সমকামিতার বিষয়টি সামনে আসার পর এখন শোনা যাচ্ছে সহ-অভিনেত্রী জোয়্যান ক্রফোর্ড, মার্লিন ডিয়াট্রিচ এবং বারবারা স্ট্যানউইকের সঙ্গেও নাকি প্রেম করেছিলেন তিনি। রূপ আর রহস্যে মোড়া মেরিলিনের জীবনে আরও কত অধ্যায় এখনও প্রকাশের অপেক্ষায়, দেখার বিষয় সেটাই।