‘ইনসাইড আউট’: অনুভূতির ভুবনে স্বাগতম

ডিজনি পিক্সার তাদের প্রতিটি সিনেমাতেই অভিনব এবং নান্দনিক বিষয়বস্তুর অবতারণা করে আসছে। একজন সাধারণ মানুষের জীবনের নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়গুলোকে অন্য আলোয় দেখানোর চেষ্টা করেছে এই অ্যানিমেশন স্টুডিও। তারই ধারাবাহিকতায়, একজন মানুষের আবেগ ও অনুভূতিগুলোকে চরিত্রের রূপ দিয়ে অন্যরকম একটি সিনেমা উপহার দিল পিক্সার।

শরীফুল হক আনন্দবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 06:22 AM
Updated : 1 July 2015, 06:28 AM

কাহিনি সংক্ষেপ

সিনেমার মূল চরিত্র এগারো বছর বয়সী মেয়ে রাইলি। মৌলিক পাঁচটি অনুভূতি- আনন্দ, দুঃখ, বিতৃষ্ণা, ভয় এবং ক্ষোভ দিয়েই গড়া তার অস্তিত্ব। এই অনুভূতিগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাইলির মস্তিষ্ক। রাইলিকে সব সময় হাসিখুশি রাখতে বদ্ধপরিকর আনন্দ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল দায়িত্বও তার হাতে। রাইলির জন্মের সঙ্গেই জন্ম নেয় এই অনুভূতিগুলো। প্রাত্যহিক জীবনে রাইলির কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা হয় ছোট ছোট স্মৃতির স্মারক, যেগুলোতে জমা থাকে রাইলির উচ্ছ্বাসময়, দুঃখ ভারাক্রান্ত বা ভয় তাড়িত স্মৃতিগুলো। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কেন্দ্রীয় স্মৃতি স্মারকগুলো- যেগুলো মিলে গড়ে ওঠে রাইলির ব্যক্তিত্বের পাঁচটি আলাদা অংশ।

বন্ধুবৎসল, হকিপ্রেমী রাইলির বড় হওয়া মিনেসোটা শহরে নির্জন খোলামেলা এক এলাকায়। কিন্তু হঠাৎ করেই পুরো পরিবার চলে আসে স্যান ফ্র্যান্সিসকোতে। একেবারেই অপরিচিত নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয় রাইলির, এমনকি নতুন স্কুলে প্রথম দিনের স্মৃতিটাও জমা হয় নীলাভ বিষাদে। এদিকে রাইলির পাঁচ অনুভূতির মধ্যেও শুরু হয় অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে আনন্দ মনে করে, দুঃখ অনুভূতিটি রাইলির ব্যক্তিত্বে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলছে বেশি। এভাবেই এক জটিল অভিযানে জড়িয়ে পড়ে অনুভূতিগুলো।

অনুভূতিগুলোর অনুভূতি

শুরুটা হয়েছিল পুরোনো হয়ে যাওয়া এক দল পুতুলের গল্প নিয়ে। মাঝে পর্দায় এসেছে হারিয়ে যাওয়া একটি মাছকে খুঁজে পাওয়ার অভিযান, সাধারণ এক পরিবারের দৈব ক্ষমতা কিংবা নিজের বহু পুরোনো স্বপ্নকে অবশেষে সার্থক করায় প্রবীণ এক মানুষের উচ্ছ্বাস। পিক্সার বরাবরই অভিনব সব ধারণার রূপায়ন ঘটিয়েছে পর্দায়। এবারের কাজটা ছিল অনুভূতির ‘অনুভূতি’ পর্দায় ফুটিয়ে তোলা।

মানুষের কল্পনার জগত কতটা বৈচিত্রময় হতে পারে সেটাও ‘ইনসাইড আউট’ সিনেমার একটি বিরাট অংশ। কল্পনার জগতের সঙ্গে বাস্তবের জগত যে প্রায়শই সাংঘর্ষিক, এই কঠোর সত্যিও উঠে এসেছে এখানে সিনেমাতে। তারপরও সিনেমাটির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে কষ্ট হবে না সব বয়সের দর্শকদের।

পেছনের গল্প

গল্পটা সাদামাটা মনে হলেও এর পেছনের গল্পের আকার নিতে সময় লেগেছে অনেক। পরিচালক পিট ডকটারের মাথায় প্রথম ধারণাটি আসে ২০০৯ সালে। এরপর পিক্সারের সৃজনশীল দল এবং অসংখ্য স্বনামধন্য মনোবিদের মিলিত গবেষণায় জন্ম নেয় সিনেমার পাঁচটি মৌলিক অনুভূতি। আর তাদের কণ্ঠ দিয়েছেন আনন্দ - এমি পোলার, দুঃখ - ফিলিস স্মিথ, বিতৃষ্ণা - মিন্ডি কেলিং, ভয় - বিল হেইডার এবং ক্ষোভ - লিউয়িস ব্ল্যাক।

পরিচালক পিট ডকটার এর আগে পর্দায় দেখিয়েছেন একটি রোবটের অনুভূতি, তার ‘ওয়াল-ই’ সিনেমায়। এবারও অনুভূতি পর্দায় রূপায়নের কাজটি দক্ষতার সঙ্গেই করেছেন। সিনেমার আবহ সংগীতের দায়িত্বে মাইকেল গিয়াচ্চিনোর কাজও অনবদ্য। প্রত্যেক ঘটনা প্রবাহে সিনেমার আবহ সংগীত নিজস্ব গুরুত্ব বহন করে। অ্যানিমেশনের সঙ্গে থ্রিডি ইফেক্ট মিলে সিনেমাটিকে দারুণ প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

শেষ কথা

কাজেই ‘ইনসাইড আউট’ সিনেমাটিকে পিক্সারের অন্যতম সেরা সাফল্য বলাই যায়। দুই বছর বিরতির পর অ্যানিমেশন ভক্তদের বিশেষ অপেক্ষা ছিল সিনেমাটিকে নিয়ে। বক্স-অফিসে 'জুরাসিক ওয়ার্ল্ড'-এর দাপটের মধ্যেও দুর্দান্ত সূচনা হয়েছে সিনেমাটির। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে সিনেমাটির আয় ২৬ কোটি ৬৬ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। সমা