ঘুরে দাড়িয়েছেন শায়লা সাবি

বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক হলেও শায়লা সাবি আলো ছড়ালেন ভিন্ন ধারার সিনেমা ‘ঘাসফুল’-এ। নার্গিস চরিত্রে শায়লার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আপাতত নাটকে ব্যস্ত হলেও শায়লা ক্রমেই নিয়মিত হয়ে উঠছেন বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2015, 10:21 AM
Updated : 21 June 2015, 10:21 AM

গ্লিটজ: ‘ঘাসফুল’ সিনেমাটি মুক্তির পর দশর্কের কাছ থেকে কেমন সাড়া মেলেছে?

শায়লা: অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শককের হৃদয় স্পর্শ করা মোটেই সহজ নয়। সিনেমাতে আমার অভিনয়ে দশর্কের চোখে পানি এসেছে। আমার মনে হয়েছে, আমি সাথর্ক।

গ্লিটজ: সমালোচকরা বলছেন, ‘ঘাসফুল’ সিনেমায় আপনার অভিনয় সাবলীল ছিল। আপনার ব্যক্তি জীবনের কোনো ঘটনা কি সিনেমার কোনো অংশের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল?

শায়লা: ‘ঘাসফুল’ সিনেমার গল্পের সঙ্গে মিলে যাওয়ার মতো কোন গল্পই আমার জীবনে নেই। তবে আমি তো একজন সাধারন মেয়ে। নার্গিস চরিত্রটিতে অভিনয় করতে গিয়ে মনে হয়েছে,  আমি যদি সত্যি নার্গিস হতাম! আমি চরিত্রটির খুব ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। নার্গিস হিসেবে সেই মূর্হূতগুলোতে আমার ভেতরের টানাপড়েন, উপলব্ধি কি হতে পারে কিংবা আমি কিভাবে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবো সেই বিষয়গুলো ভেবেই আমি অভিনয়ের চেষ্টা করেছি। শতভাগ চরিত্রায়ন সম্ভব হয়ে ওঠে না তবুও আমি আমার জায়গা থেকে প্রায় শতভাগ উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।

গ্লিটজ: ‘ঘাসফুল’ কতটা সফলতা বয়ে এনেছে আপনার জন্য?

শায়লা: যদিও সবসময় গ্ল্যামারাস লুকেই আমি বেশি অভিনয় করে থাকি কিন্তু এই সিনেমায় দর্শক নন গ্ল্যামারাস লুকে আমার অভিনয় দেখেছে। চেষ্টা করেছি আমার পারদর্শিতা ফুটিয়ে তুলতে। নিঃসন্দেহে এই সিনেমাটি আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট।

গ্লিটজ: তো এখন অফট্র্যাক না বাণিজ্যিক সিনেমাতে থিতু হবেন?

শায়লা: আগামীতে যদি ভালো গল্পের অফট্র্যাক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাই, তাহলে অবশ্যই লুফে নিবো। কিন্তু বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অবশ্যই আমি অভিনয় করবো। ইতোমধ্যে আমি সাইমন তারিক পরিচালিত ‘ক্রাইম রোড’ সিনেমায় কাজ করছি, যা পুরোমাত্রায় বাণিজ্যিক।

সোহেল আরমান পরিচালিত ‘ভ্রমর’ও কিন্তু বাণিজ্যিক ধাঁচেরই হবে। রোমান্টিক সিনেমাতে আমার বিপরীতে থাকছেন আরেফিন শুভ।

গ্লিটজ: ‘ক্রাইমরোড’ সিনেমায় আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন?

শায়লা: সিনেমাতে আমাকে ‘আয়না’ চরিত্রে দেখা যাবে। আয়না নিতান্ত গরীব ঘরের মেয়ে। যেখানে রাজু নামের এক গ্যাংস্টারের সঙ্গে আয়নার প্রেম হয়। এরপর বিভিন্ন ক্লাইমেক্সের মাধ্যমে এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প। রাজু চরিত্রে অভিনয় করছেন মিলন। ক্রাইমরোড সিনেমাটির শুটিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

গ্লিটজ: সিনেমাতে ঠিক কোন ধরনের চরিত্রে আপনি স্বচ্ছন্দ্য?

শায়লা: যে চরিত্রটি আমার সঙ্গে খাপ খায়, আমি সেই চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তবে দর্শককে চমক দেওয়ার মতো চরিত্রের নায়িকা  হতে চাই আমি। দর্শক সবসময়ই নতুন কিছু দেখতে চায়। আমার টার্গেট চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করা। ভিন্ন কিছু করতে না পারলে দর্শক আমার অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে না। আমি মনে করি, একজন অভিনেতার সব সময়ই দর্শককে নতুন কিছু উপহার দেয়া উচিত।

গ্লিটজ: যদি কোনো সাহসী দৃশ্যের প্রস্তাব আসে....

শায়লা: আমি খোলামেলা দৃশ্যে কাজ করতে ইচ্ছুক না। তবে আমার যদি মনে হয়, কোনো চরিত্র সত্যিই আলাদা কিছু, আমি ভেবে দেখবো। তবে এমন চরিত্রই হতে হবে যে চরিত্রটি অন্যদের পক্ষে দুরুহ এবং সেই চরিত্রটি আমার ক্যারিয়ারের জন্যও ইতিবাচক।

গ্লিটজ: অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা যাচ্ছে আপনাকে। কোন মাধ্যমটিকে আপনি বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন?

শায়লা: এখন আমি টিভি নাটকেই নিয়মিত কাজ করছি।  যদি আগামীতে দর্শকের গ্রহনযোগ্যতা পাই সিনেমাকে বেশি প্রাধান্য দেব। দর্শক সিনেমার নায়িকাকে নিয়মিত টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পছন্দ করে না।

তবে  নাটককে আমি খুব ভালোবাসি।  সিনেমাতে নিয়মিত হওয়ার পরেও যদি কোনো ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই সেক্ষেত্রে যদি সময় -সুযোগ হয় তাহলে হয়তো সেই নাটকে অভিনয় করব। আর ভালো বিজ্ঞাপনে কাজের প্রস্তাব পেলে অবশ্যই করবো।

গ্লিটজ: অভিনয় করতে গিয়ে অভিনয় শেখার জায়গা কতটুকু আপনি পাচ্ছেন?

শায়লা: অভিনয় শেখার জন্য আগ্রহ থাকাই মুখ্য। এজন্য নিয়মিত কাজ করতে হবে এমনটি নয়। অভিনয়ের অনুশীলন করতে চাইলে আয়নার সামনে একলাই করা যায়। যেমনটি আমি নিয়মিতই সময় পেলেই আয়নার সামনে যে কোনো চরিত্রের চরিত্রায়ন করে থাকি।

গ্লিটজ: অভিনয়ের প্রস্তুতি কিভাবে নিচ্ছেন?

শায়লা: আমি প্রচুর নাটক ও সিনেমা দেখি, তা যে ভাষার হোক না কেন। সেখানে পছন্দের চরিত্রটি বারবার নিজের মতো করে অভিনয়ের চেষ্টা করি। আর আগে থেকে হাতে চিত্রনাট্য পেলে সেক্ষেত্রে আমার চরিত্রটি খুব ভালো মতো আয়ত্ব করে সেই চরিত্রের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত আমার আশে পাশের মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষন করি।

গ্লিটজ: বিশেষ কোনো অভিনেতা, যার অভিনয় খুব টানে..

শায়লা: বিশেষ কারো নয় বরং সবার অভিনীত নাটক দেখা হয়। কোনো চরিত্র ভালো লেগে গেলে সেই চরিত্র খুব মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়।

গ্লিটজ: অনেক নাট্যপরিচালকই শুটিংয়ের আগে চিত্রনাট্য দেন না। সেক্ষেত্রে আপনি কিভাবে প্রস্তুতি নেন?

শায়লা: তখন আমি পরিচালকের কাছ থেকে আমার চরিত্রটি নিয়ে জেনে নিই। চরিত্রটি আয়ত্বে আনতে পরিচালকের সঙ্গে বোঝাপড়া সেরে নিই। যাই হোক, চরিত্রটিকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে চেষ্টা করি।

গ্লিটজ: মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে নারী হওয়ার কারণে কোনো সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে?

শায়লা: কর্পোরেট জগত হোক কিংবা মিডিয়া, নারীরা যে ক্ষেত্রেই কাজ করুন না কেন অনেকেই কিন্তু আমাদের খুব ভালো চোখে দেখছেন না। এক্ষেত্রে আমাদের মেয়েদেরই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের পারিবারিক সমর্থন দরকার। আমার পরিবারের অনেকেই শুরুতে আমাকে সমর্থন করেনি।