কানে স্পটলাইটে নারীরা

গত ২৮ বছরে প্রথম বারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে এক নারী নির্মাতার সিনেমা দিয়ে। শুধু তাই নয়, ক্যামেরার সামনে ও পেছনে- নারীদের সম অধিকার নিশ্চিত করতে এবারের উৎসবে নেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। আর তাই ৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে নারীরা কেবল লাল গালিচার উপস্থিতি দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে কেড়ে নেবেন সব আলো - এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2015, 11:07 AM
Updated : 17 May 2015, 11:07 AM

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হওয়া উৎসবের প্রথম দিনেই প্রদর্শিত হয় ফরাসি নারী নির্মাতা ইমানুয়েল বেরখোর সিনেমা ‘লা তেতে ঔত’ (স্ট্যান্ডিং টল)। বিষয়বস্তুর কারণেই এর মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে সিনেমাটি।

সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি নয় জন পুরুষ নির্মাতার বিপরীতে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেন মাত্র একজন নারী। অভিনেত্রী সালমা হায়েক এবারের উৎসবে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে অংশ নিয়ে এক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে সমতা আনার ব্যাপারে জোর দেন। তবে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ফলে এখন স্রোত উল্টো দিকেও ছুটতে শুরু করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিবিসিকে এব্যাপারে তিনি বলেন, “নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে এখন আর ছোট করে দেখা যাবে না। আমরা সবাই এখন কাজ করি। বিশেষ করে আমরা, যাদের বয়স চল্লিশের উপরে, তারা এখন বিশ্বব্যাপী কাজ করছি, এবং অর্থনৈতিক লেনদেন করছি। আর তাই নারীদের গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারটি এখন আর বিবেকের খাতিরেই তারা করছে না। তারা আমাদেরকে সমীহ করছে কারণ, আমরা আসলে তাদের জন্যই আরও ভাল এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব করছি।”

নারীদের সম অধিকার আলোচনা কিংবা সিনেমা প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না এবারের উৎসবে। প্রথম বারের মতো কোনো নারী নির্মাতার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অনানারি পাম দ’র। বর্ষীয়ান ফরাসী নির্মাতা অ্যাগনেস ভারদা অর্জন করেছেন এই সম্মাননা। ওদিকে আরব নারী নির্মাতাদের জন্য বৈরী পরিবেশে থেকেও সিনেমা তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে এবারের উৎসবেই চালু করা হচ্ছে বৃত্তি।

তবে এতে করে নারীদের লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি খুব একটা যে কমবে - এ ব্যাপারে আশাবাদী নয় অনেকেই। কারণ এবারের উৎসবেও প্রতিযোগিতা বিভাগের নয়টি সিনেমার মধ্যে কেবল দুটি সিনেমাই নারী নির্মাতাদের তৈরি।

লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে আওয়াজ তোলা অনেক মার্কিন অভিনেত্রী এখন পুরুষ সহকর্মীদের সমান পারিশ্রমিক দাবি করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জেনিফার লরেন্স, যিনি তার পরবর্তী সিনেমায় পুরুষ সহশিল্পীর সমান পারিশ্রমিকই পাচ্ছেন। ‘ম্যাডম্যাক্স: ফিউরি রোড’ সিনেমাতেও পুরুষ সহশিল্পী টম হার্ডির সমান পারিশ্রমিক পেয়েছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন। তার চরিত্রটি অ্যাকশনধর্মী হলেও দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে - এ ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নন তিনি।

“আমরা এখনও সমাজে পুরুষদের সমান অবস্থানে আসতে পারিনি। আমার চিন্তা হয় এটা নিয়ে যে, মাঝে মধ্যে নারীপ্রধান সিনেমা মুক্তি পেলেও দর্শকেরা এরকম চরিত্রে নারীদের দেখতে খুব একটা আগ্রহবোধ করে না। কেবলমাত্র নারীপ্রধান হওয়ার কারণেই অনেকে উৎসাহ বোধ করেনা সিনেমাটি দেখার ব্যাপারে। আর এটাই মূল সমস্যা বলে আমি মনে করি।”

লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্যই তিন বার অস্কারজয়ী অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ নিজ উদ্যোগে নারীদের জন্য তহবিল গঠন করছেন। মেরিল স্ট্রিপের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এমা স্টোন, যার অভিনীত এবং উডি অ্যালেন নির্মীত ‘ইর‌্যাশনাল ম্যান’ মুক্তি পেয়েছে এবারের উৎসবে।

তিনি বলেন, “লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বিনোদন জগতের নারীদেরও অনেক কিছু করার আছে। এই বিষয়ে আওয়াজ তুলে, নারীদের কাজের ক্ষেত্র আরও বাড়িয়ে, নারী নির্মাতাদের এগিয়ে আসার সুযোগ দিয়ে, অভিনেত্রীদের জন্য আরও ভাল চরিত্রের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে এই লড়াইয়ে যোগ দেওয়া, এখন নারীদের নিজেদেরই কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।”