শুরু হলো জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব

‘হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ, যাক যাক ভেঙ্গে যাক যাহা জীর্ণ’ - শিরোনামে ঢাকার জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে শুরু হলো ষড়বিংশ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 04:06 AM
Updated : 6 May 2015, 05:28 AM

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদ ও ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিনের এই উৎসব হয়ে উঠেছে একাল-সেকালের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের মিলনমেলা।

মঙ্গলবার গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় উপ-হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী।

প্রথম দিনের স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আকবর। গত বছর মৃত্যুবরণ করা শিল্পীদের সম্মান জানাতে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে সংস্থার অগ্রজ শিল্পী মীর মহিউদ্দিন সোহান, জেসমিন নাহার মোস্তফা পিনু, বেহালা বাদক সুবল দত্তকে।

রবীন্দ্রসংগীতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ষাটের দশকের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী নাসরিন শামসকে সম্মাননা জানানো হয়। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার বাইরে শিল্পীকে সম্মাননা জানিয়েছে রবিরাগ, রবিরশ্মি, বিশ্ববীণা, গীতাঞ্জলি, সংগীতভবন, গীতশতদলসহ বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতভিত্তিক সংগঠন।

সম্মাননার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শিল্পী নাসরিন শামস বলেন, ‘‘আমি ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নিতে শুরু করি। তখন থেকে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছি। এই অর্জন আমার বড় পাওয়া।’’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ভারতীয় উপ-হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য যে, ভারত সরকার আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এখানে এসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ভারতীয় হাইকমিশন যেসব সাংস্কৃতিক আয়োজনে সহযোগিতা করেছে, সেগুলোর মধ্যে এই আয়োজনকেই আমি বড় বলে মনে করছি।’’

উৎসবের শুরুতেই ছিল বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার দলীয় পরিবেশনা। জাতীয় সংগীত  দিয়ে শুরু করে তারা পরিবেশন করে ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘আকাশ ভরা সূর্যতারা’, ‘বাঁধ ভেঙে দাও’।

আলোচনা পর্বের পর আবারও শুরু হয় গান। ‘আমার যা আছে’ গেয়ে শোনান ইন্দ্রানী কর্মকার। মামুন জাহিদ খান গেয়েছেন ‘দিবস রজনী আমি যেন কার’। এ প্রজন্মের শিল্পী সেমন্তি মঞ্জরী শোনালেন ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না’। শিমু দে গাইলেন ‘আজি তোমায় আবার চাই’। নবীন-প্রবীনের সংগীত পরিবেশনার মধ্যে কবি আসাদ চৌধুরী এসে আবৃত্তি করে গেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমি’ কবিতাটি।

এছাড়াও একক সংগীত পরিবেশন করেন আঁখি বৈদ্য, স্বাতী সরকার, তানজিমা তমা, জান্নাতুল ফেরদৌস ঊর্মি, প্রান্তিকা সরকার, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্তসহ আরও অনেকে।

উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি রবীন্দ্রচর্চা আরও বাড়াতে প্রস্তাবনা এসেছে উৎসবের প্রথম দিনেই। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে দেশের সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন বাধ্যতামূলক করা, রবীন্দ্রচর্চা ও গবেষণার জন্য সরকারি উদ্যোগে অবিলম্বে রবীন্দ্র একাডেমি ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু ও দৃশ্যমান করা, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেসরকারি স্থাপনা অপসারণ ও রবীন্দ্র স্মৃতিসমৃদ্ধ স্থাপনাগুলোর যথাযথ সংস্কার, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে রবীন্দ্রসংগীতমূলক অনুষ্ঠান বৃদ্ধি।

যারা নানাভাবে রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, “বিকৃতভাবে গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার অনুগ্রহ করে বন্ধ করুন।”

এই উৎসব চলবে ৯ মে পর্যন্ত। উৎসবের শেষ দিনে সংস্থাটি তাদের প্রতিষ্ঠাতা কলীম শরাফীর ৯২তম জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করবে। সেদিন সম্মাননা জানানো হবে প্রবীন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কাজী শাহজাহান হাফিজকে।
 

ছবি: জয়ন্ত সাহা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম