'মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি'

নেপালে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সে সময় নেপালে আটকে পড়া অভিনেত্রী রুনা খান, নোমিরা আহমেদ ও অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়া।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2015, 09:56 AM
Updated : 29 April 2015, 09:56 AM

বুধবার দুপুরে চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘তারকা কথন’-এর অতিথি হয়েছিলেন তারা। শোনালেন, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার গল্প।

শনিবার দুপুরে যখন ভূমিকম্প নেপালে আঘাত হানে তখন নাগরকোটে নাটকের শুটিং করছিলেন তারা। সেখানে আরও ছিলেন অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়, শাহাদাৎ হোসেনসহ আরও অনেকে।

‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানের শুরুতে অভিনেত্রী রুনা খান বলেন, “আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। নেপালের ঘটনাগুলো শুনলে মনে হবে আমরা গল্প বলছি। কিন্তু আমরা সত্যিই অনুভব করেছি মৃত্যুভয় কাকে বলে, জীবনের সংকট আসলে কি। প্রকৃতি কত ভয়ংকর,বিভৎস আর নিষ্ঠুর হতে পারে তা সচক্ষে দেখে এসেছি।”

কল্যাণ জানালেন, ভূমিকম্প যখন হয় তখন কল্যাণ ও নোমিরার ক্লোজ শট চলছিলো। দলের সদস্যরা একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

রুনা খান রিসোর্টের কক্ষ থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যান। হাত-পায়ে মারাত্মকভাবে জখম হয় তার। কল্যাণরা এসে রুনা খানকে উদ্ধার করেন, জয়েরও দেখা মেলে তখন। তখন সবাই দ্রুত পাহাড়ি রিসোর্ট থেকে নেমে আসেন।

রুনা বললেন, “একই রিসোর্টে আমি এর আগে শুটিং করেছি। নাগরকোটে এত ঠাণ্ডা পড়ার কথা ছিলো না। সেদিনের আকাশে কালো মেঘের আনাগোণা ছিল। পরিবেশ কেমন গুমোট মনে হচ্ছিলো। আমি জয়কে বলছিলাম, পরিবেশ তো এমন হওয়ার কথা নয়।”

ভূমিকম্প শুরু হলে প্রথমে রুনা বুঝতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন ছাদের উপরে পানির ট্যাঙ্ক পড়ে গেছে বুঝি। কিন্তু প্রচণ্ড কম্পন শুরু হলে রুনা বুঝতে পারেন ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। তিনি দ্রুত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন।

কল্যাণ বলেন, “প্রচণ্ড কাঁপুনি শুরু হলে আমি একটি লোহার টেবিল আঁকড়ে ধরেছিলাম। নোমিরাও আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো। যুবরাজ তখন ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করছে। আমি কী করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।”

নোমিরা বলছেন, “দশ থেকে পনের সেকেণ্ডের মধ্যে সবকিছু তছনছ হয়ে গেলো। আমি তখন ভাবছিলাম আব্বু-আম্মু সঙ্গে থাকলে মারা গেলে কোনো আপত্তি নাই।” এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

কল্যাণ বলছিলেন, “রিসোর্ট থেকে নেমে আসার পর অন্যান্যরা নানা কথা বলছিলেন। কেউ বলছিলেন, খোলা জায়গায় চলে যাও। কেউ বলছিলো, পাহাড়ের খাদের দিকে যেতে। কিন্তু আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা খোলা কোনো জায়গায় যাবো। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্ট ও পাশের একটি মন্দির ভেঙ্গে পড়েছে।”

কল্যাণ বলছিলেন, “বাস্তবে আমি মনের দিক থেকে খুব শক্ত। খুব সহজে আমাকে বিচলিত করা যায় না। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় আমি প্রথমবারের মতো ভেঙ্গে পড়েছিলাম। দেশে আমার পরিবার, বন্ধুদের কথা ভেবে সত্যি খারাপ লাগতে শুরু করেছিলো।”

কল্যাণ জানালেন, তাদের কাছে নেপালি রুপি থাকলেও তাতেও কোনো কাজ হচ্ছিল না। নাগরকোট থেকে কাঠমান্ডু আসার উপায় খুঁজছিলেন তারা। রেস্তোরাঁ, ক্যাসিনোতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছিলেন। কিন্তু কোথাও মিলছেনা ঠাঁই। তখন ভয়াবহ ঠাণ্ডা পড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে আর সব অসহায় মানুষের মতোই রাত কাটাতে হলো তাদের।

রোববার যখন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের উদ্ধার করা হলো তখন যেতে যেতে চারপাশে মৃত মানুষের সারি, কাঠমাণ্ডু শহরজুড়ে রক্তের স্রোত বইতে দেখার কথা জানালেন নোমিরা।

রুনা কাঁদো-কাঁদো গলায় বললেন, “আমি ফোনে জয়িতাকে (আত্মীয়া) বলছিলাম, আমি যদি ফিরতে না পারি তবে সে যেন আমার মেয়ে রাজেশ্বরীকে দেখে….”

বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে তারা যখন রওনা হবেন, তখন শুরু হল আরেক দফা ভূমিকম্প। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসার পাশের সাততলা ভবনটি ধসে গেলো। রুনা খান, যুবরাজ, কল্যান, নোমিরাদের জীবন তখন ঘোর শঙ্কায়।

ভূমিকম্প থামলে তারা রওনা হন বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। বিমানবন্দরে এসেও তারা পড়েন বিড়ম্বনায়। বাংলাদেশ থেকে উদ্ধারকারী বিমান তাদের উদ্ধার করতে গেলেও বিমানের কাছে পৌঁছুতে পারছিলেন না তারা। হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে তবেই বিমানে চড়তে হয়েছে তাদের।