‘যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’

নাচ-গান-নৃত্য আলেখ্য আর দেশজ পণ্যের মেলায় বঙ্গাব্দ ১৪২১কে বিদায় জানালো ঢাকাবাসী। চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপনে নগরজুড়ে ছিলো নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

জয়ন্ত সাহাও তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2015, 03:53 AM
Updated : 14 April 2015, 03:53 AM

চৈত্রসংক্রান্তির সবচেয়ে বড় আয়োজনটি ছিল সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার। সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবটি ছিলো মূলত সুরের ধারার ২২ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠানটি এবারের উৎসব উৎসর্গ করেছে বাংলার পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-কাজী নজরুল ইসলাম-অতুল প্রসাদ সেন-রজনীকান্ত সেন- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে।

সুরের ধারার চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। উৎসবের মূল আয়োজক ও সুরের ধারার অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গ্লিটজকে জানান, সংস্কৃতিসেবীদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সুরের ধারার কার্যক্রম ও পরিসর আরও বেড়েছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নৈতিক ও মানবিক উন্নয়নেও কাজ করছে সুরের ধারা। ইতোমধ্যে ৩০ জন শিশুকে নিয়ে একটি প্রকল্প শুরু করেছেন তারা। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো শিশুদের ব্যক্তিত্ব-মূল্যবোধ-দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত করা।

তিনি আরও বলেন, “বাংলা কবিতা ও গানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম যতটা পরিচিত পেয়েছেন, তার সিকিভাগও পাননি অন্য তিন কবি। সেই তিন কবিকে প্রণতি জানাতে এবারের উৎসবটি তাদের গান ও কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে।”

বন্যার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন উৎসবে হাজির হন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সঙ্গে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

ততক্ষণে সুরের ধারার প্রারম্ভিক পযর্ায়ের শিশু শিক্ষার্থীরা গাইতে শুরু করেছে ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদেরই রাজার রাজত্বে…’। সুরে সুরে নামতাও বলছিলো তারা। কচি কণ্ঠগুলো আরও গাইলো ‘ওরা অকারণে চঞ্চল’, ‘আমরা মলয় বাতাসে’, ‘মনের রঙ লেগেছে’। শিশুদেরই আরেকটি দল এসে নেচে গেল গানের তালে।

শিশুদের পর বড়রা এসে গাইলো ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। কবি অতুল প্রসাদকে প্রণতি জানিয়ে তারা গাইলো ‘মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা।”

একজন এসে শুনিয়ে গেলো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ব্যঙ্গাত্মক কবিতা ‘নন্দলাল’। রজনীকান্ত সেনের গণসংগীত ‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড়’, নজরুলের ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি’,  দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ সহ বেশকটি দেশাত্মবোধক গান। স্মৃতিময় বছরের জানানো হলো সুরের আহ্বান, ‘যাও গো যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’।

এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পী সেমন্তী মঞ্জরী শোনালেন ‘সুখে আমার তৃষ্ণা’। তার মতোই এমন অনেক নবীনের একক পরিবেশনায় প্রাণবন্ত ছিলো উৎসব প্রাঙ্গন। প্রবীণরা রবীন্দ্রনাথ—নজরুলগীতির পাশাপাশি শুনিয়েছেন তিন কবির গান। সঙ্গে তরুণদের মনমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা মাতিয়ে রেখেছিলো উপস্থিত দর্শকদের।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা উঠলেন সাড়ে ন’টায়। তিনি শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’। রাত গভীর হচ্ছে। নববর্ষের আলো ফোটার অপেক্ষায় বাঙালির সংক্রান্তি পার্বন তখনও চলছে।

অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছিল বর্ষবিদায় আর নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি। সোমবার বিকালে একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র চত্বরে ঘুড়ি উৎসব ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ঘুড়ি উৎসব শেষে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় তিনদিনব্যাপী আলপনা কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিশুকিশোরসহ প্রায় ১৬৩ জন প্রশিক্ষণার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

সন্ধ্যায় একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন উপলক্ষে দায়সারা গোছের আয়োজন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

এর পরে শাহাদাত হোসেন খান এবং তার দুই মেয়ে রুখসানা খান ও আফসানা খানের সেতার পরিবেশনায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। গ্রুপ থিয়েটারেরর বিভিন্ন দলের কর্মীরা কেউ এসে গাইলেন, কেউ নাচলেন আর কেউবা আবৃত্তি করলেন। অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় দুটি কবিতা আবৃত্তি করলেন। তারপর শুরু হয় সঙ পালা।