গণজাগরণ মঞ্চের এবারের দাবি যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। এ দাবিকে সামনে নিয়ে তারা ছড়িয়ে দিতে চায় জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।
গণজাগরণ মঞ্চের দাবির মশালে সুরের আগুন জ্বালিয়ে ব্যান্ডশিল্পীরা কনসার্টে পরিবেশন করেন ‘দেশ ছাড় রাজাকার’, ‘পারওয়ারদিগার’, ‘স্বাধীনতার মূলমন্ত্র’, ‘বাংলাদেশ’, ‘জ্বালো আগুন জ্বালো’র মতো গানগুলো।
গান কত শক্তিশালী এক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে ১৯৫২ সাল থেকেই তার প্রমাণ পেয়েছে বাঙালি। আরও একবার সে কথা প্রমাণের দায়িত্ব যেন কাঁধে তুলে নিয়েছেন হাল আমলের ব্যান্ডগুলো।
স্বাধীনতা কনসার্ট ২০১৫র মঞ্চে এদিন একে একে উঠেছে কানেক্টেড, ওল্ড স্কুল, অবসকিওর, সহজিয়া, শহরতলী, আরবোভাইরাস, শিরোনামহীন, মাকসুদ ও ঢাকা, মেকানিক্স, আর্টসেল, অ্যাশেজ, মির্নাভা।
কনসার্ট শুরু হয় বিকাল ৫টায়। এর আগে নির্ধারিত পতাকা মিছিল, সংক্ষিপ্ত আলোচনা ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ।
কনসার্টের মঞ্চে প্রথম পা রাখে ব্যান্ড কানেক্টেড। কনসার্টের উদ্বোধনী গান হিসেবে আযম খানের গাওয়া ব্যাপক জনপ্রিয় ‘বাংলাদেশ’ পরিবেশনা করে ব্যন্ডটি। এরপর তারা নিজেদের ‘গতি’ গানটি পরিবেশন করে।
ওল্ড স্কুল মঞ্চে ওঠে দ্বিতীয় ব্যান্ড হিসেবে। লালন সাইজির ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ গেয়ে তারা শুরু করে ‘আজ রাতে কোনও রূপকথা নেই’। এই গানটি পরিবেশনের সময় ব্যান্ডের ভোকাল মোহাম্মদ মোবাশ্বের চৌধুরীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান দর্শকরাও।
সন্ধ্যার দিকে মঞ্চে ওঠা নব্বইয়ের দশকের ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকার রূপও যেন খোলতাই হয়েছে। ‘গণতন্ত্র’, ‘পাওয়ারদিগার’-এর মতো ‘স্পর্শকাতর’ এবং ‘রাজনৈতিক’ গানগুলো গাওয়ার দাবিকে প্রায় ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যান ব্যান্ডের প্রধান মাকসুদুল হক। স্বাধীনতা কনসার্টের মঞ্চে উঠে প্রথমেই গাইলেন এ দুটি গান। এরপর ব্যান্ডের প্রথম প্রকাশিত গান ‘বাংলাদেশ’ শোনালেন। লালন সাঁইজির ‘আমি পেয়েছি এক ভাঙ্গা তরী’ গেয়ে সবশেষে ২৫ বছরী বয়সী ‘মেলায় যাইরে’ শুনিয়ে, নাচিয়ে, গাইয়ে পুরো চত্বরে আলোড়ন তোলেন তারা।
আরবোভাইসের ‘জ্বালো আগুন জ্বালো’ সত্যিই আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো একটি গান। শতাব্দীর প্রথম দশক শেষে ‘দেশছাড় রাজাকার’-এর মতো স্পষ্ট উচ্চারণের পাশাপাশি তুলনামূলক তরুণদের ‘জ্বালো আগুন জ্বালো’ গানটি উদ্দীপনা ছড়ানোর যথেষ্ট রসদ ধারণ করে। ‘হারিয়ে যাও’ শ্রোতা চাহিদাসম্পন্ন একটি গান, ‘সব ভেঙ্গে যায়’, ‘আদিম উল্লাস’ও উপভোগ্য। তাদের উপস্থিতির সময়টুকুতে আরও ছিল ড্রামার নাফিসের ক্রাউড সার্ফিং।
থিয়েট্রিক্যাল রক ব্যান্ড শহরতলী, যাদের প্রায় গানেই জনপ্রিয় কবিদের জনপ্রিয় ও বিষয়সংশ্লিষ্ট কবিতা উচ্চারিত হয়, তাদের পরিবেশনায় শোনা যায় ‘ফেলানি- ২০১১’, ‘গণজোয়ার’, ‘খোলা চিঠি-৩ দেশ মাতার কাছে’ গান তিনটি।
ভক্তদের গগণবিদারী দাবির মুখে ‘আর্টসেল’কেও মঞ্চে উঠতে দেখা যায় স্বরূপে। তাদের প্রথম গান ‘আর্তনাদ’। তারা আরও শোনায় ‘পথচলা’, ‘দুর্গমগিরি’, ‘চিলেকোঠার সেপাই’।
দুটি গান শোনায় ব্যান্ড জাগরণ। হেভি মেটাল ব্যান্ড মেকানিক্স শোনায় প্রথম অ্যালবামের দুটি গান। ব্যান্ড অ্যাশেজ নিজেদের একটি গান গেয়ে জেমসের ‘এই শহরের অট্টালিকার ভীরে’ গানটি শোনায়। পরিবেশনায় সবশেষ ব্যান্ড হিসেবে অংশ নেয় মির্নাভা।
গানের ফাঁকে নিজেদের কথা বলেন শিল্পীরা, যে কথাগুলো গাওয়া হয়ে ওঠেনি। স্বল্পভাষী টিপু জানালেন ‘দেশছাড় রাজাকার’ গানটির নেপথ্য তথ্য। মাকসুদ বললেন, ‘পারওয়ারদিগার’ গানটি যে সময় তৈরি করা হয়, সে সময় জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরীরের মতো ধর্মীয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছিল আগে থেকেই। আর তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত এই গানটিতে।
প্রজন্ম চত্বরে দাড়িয়ে শিল্পীদের নিয়ে রাজনৈতিক দলাদলি এবং হয়রানি না করার আহবান জানান শিরোনামহীনের শিল্পী তুহিন।