মিউজিক ভিডিওতেও থাকবে রেটিং

যুক্তরাজ্যে এখন থেকে সিনেমার মতো মিউজিক ভিডিও প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও যোগ করা হচ্ছে বয়সসীমার রেটিং।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2015, 10:23 AM
Updated : 27 March 2015, 10:26 AM

বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে। তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিশুদেরকে তাদের বয়স উপযোগী নয়, এমন ভিডিও দেখা থেকে বিরত রাখতে।

মূলত মাইলি সাইরাস, রবিন থিকে আর রিহানার মতো মার্কিন পপ তারকাদের ভিডিওতে নগ্নতা এবং সহিংসতার প্রদর্শনের বিষয়টি নজরে আসাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন।

ব্রিটিশ সরকারের এই তৎপরতা অবশ্য শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকেই। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে ইউটিউব আর ভেভোতে প্রকাশিত কিছু মিউজিক ভিডিওতে পরীক্ষামূলকভাবে রেটিং দিয়ে আসছিল তারা।

ব্রিটিশদের এই তৎপরতা অবশ্য এখনও পর্যন্ত প্রযোজ্য কেবল সনি, ইউনিভার্সাল এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মিউজিক ভিডিওগুলোর জন্য। কারণ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে চুক্তি সই করেছে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এবং রেটিং-এর জন্য জমা দিয়েছে তাদের ভিডিওগুলো।

এ সমস্ত ভিডিওর ২০ শতাংশই ১২, ১৫ অথবা ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য দেখার অনুপযুক্ত হিসেবে রায় দিয়েছে বিবিএফসি।

এরকম রেটিং পাওয়া ‍ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এলি গুডলিং-এর ‘লাভ মি লাইক ইউ ডু’। কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ইরটিক ড্রামা ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’র এই গানটিতে ব্যাবহৃত হয়েছে সিনেমাটির বেশ কিছু দৃশ্য। ভিডিওটিতে ‘শক্তিশালী যৌন দৃশ্য’ থাকার কারণ দেখিয়ে ১৫ বছর কিংবা তার বেশি বয়সীদের দেখার উপযুক্ত হিসেবে রায় দিয়েছে বিবিএফসি।

একইভাবে অক্টোবরে প্রকাশিত ক্যাসাবিয়ানের ‘স্টিভি’ মিউজিক ভিডিওটিকে রেটিং দেওয়া হয় ১২ বছর কিংবা তার বেশি বয়সীদের জন্য উপযুক্ত হিসেবে। ভিডিওটিতে এক মানবশিশুর গল্প বলা হয়, যাকে জন্মের পর থেকে একটি গবেষণাগারে বন্দি থাকতে হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় হিসেবে। ভিডিওটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর- এমন কারণ দেখিয়ে বিবিএফসি এই রেটিং দেয়।

ওদিকে ডিজি রাসকেলের ‘কাপল অফ স্টেকস’ ভিডিওটির রেটিং দেওয়া হয় ১৮ কিংবা তার বেশি বয়সীদের উপযুক্ত হিসেবে। ভিডিওটিতে অত্যধিক নৃশংসতা, রক্তপাত এবং খারাপ ভাষা ব্যাবহারের যুক্তি দেখিয়ে এই রেটিং দেওয়া হয়।

প্রথমবারের পরীক্ষায় ব্রিটিশ সরকারের রেটিং পায় ৮৪টি মিউজিক ভিডিও। যার মধ্যে ২৭  ছিল ১২ কিংবা তার বেশি বয়সীদের উপযোগী এবং ৩৯টি ছিল ১৫ কিংবা তার বেশি বয়সীদের উপযোগী। একটি মাত্র ভিডিও ১৮ কিংবা তার বেশি বয়সীদের দেখার উপযোগী হিসেবে রেটিং পায়।

এছাড়া, ছয়টি মিউজিক ভিডিওকে বিবিএফসি ইউনিভার্সাল অর্থাৎ সবার দেখার উপযোগী হিসেবে সনদ দিয়েছে। অন্যদিকে ১১টি ভিডিও পেয়েছে প্যারেন্টাল গাইডেন্স সনদ অর্থাৎ এগুলো দেখা যাবে বাবা-মার অনুমতি সাপেক্ষে।

ভিডিও গুলো রেটিং করা শেষ হলে এগুলো ব্রিটিশ সরকার পাঠিয়ে দিচ্ছে ইউটিউব এবং ভেভোর মতো অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলোকে। ব্রিটেনে এই দুই সাইট সরকারের পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ীই এই রেটিং প্রদর্শন করছে।

অবশ্য রেটিং কিভাবে প্রদর্শন করা হবে, সে ব্যাপারে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই বলেই জানিয়েছে বিবিসি।

ইউটিউবে ভিডিও সম্পর্কে তথ্য এর নিচে একটি বক্সে প্লেইন টেক্সট হিসেবেই দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেই ভিডিওর রেটিং সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকবে বলে জানা গেছে।

ওদিকে ভেভো বলছে, তারা তাদের সাইটে এই রেটিং-এর কারণে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না। তারা কেবল এ সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শন করছে।

ভেভোর নিক জোন্স এ ব্যাপারে বলেন, “ভিডিও প্রদর্শনে বাধা সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা কেবল ভিডিও সম্পর্কে তথ্যগুলো সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই। এরপর কেউ এগুলি দেখবে, নাকি দেখবে না, সেটা সম্পূর্ণই তার নিজস্ব ব্যাপার।”

ব্রিটিশ সরকারের এই পদক্ষেপ এলো দীর্ঘদিন ধরে মিউজিক ভিডিওতে নগ্নতা এবং সহিংসতার যথেচ্ছ ব্যাবহার নিয়ে দর্শক, বিশেষ করে অভিাভবকদের দুশ্চিন্তা প্রকাশ করার পর।

পপ তারকা অ্যানি লেনক্স বিবিসিকে এর আগে বলেছিলেন, কিছু কিছু মিউজিক ভিডিও অনেক সময় পর্নোগ্রাফির কাতারে চলে যায়।

“আমি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তি এটা নিঃসন্দেহেই স্বাধীনতার বিষয়টিকে ছাড়িয়ে যায়। এবং পরিস্কারভাবেই এগুলো পর্নোগ্রাফির কাতারে পড়ে।”

বিবিএফসির সহকারী পরিচালক ডেভিড অস্টিনও এ ব্যাপারে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কথা জানান।

“২০১৩ সালে বিবিএফসি ক্লাসিফিকেশন গাইডলাইন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেওয়া অভিভাবকদের সবাই অনলাইনে প্রকাশ করা মিউজিত ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ভিডিওগুলোতে নারীদের যৌনকরণ, মাদকের ব্যবহার, সহিংসতা- এসব নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন।”