'স্বাগতম সবার সেরা এবং সবচেয়ে সাদা অস্কারে!'

এবারের অস্কারের সবচেয়ে বড় বিতর্কটি ছিল মনোনয়ন তালিকার সবার শ্বেতাঙ্গ হওয়া এবং কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের পুরোধা ব্যাক্তিত্ব মার্টিন লুথার কিং-এর জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘সেলমা’র মাত্র দুটি মনোনয়ন পাওয়া। আর তাই শুরু থেকেই ৮৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসকে বলা হচ্ছিল শ্বেতাঙ্গদের অস্কার।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2015, 07:07 AM
Updated : 23 Feb 2015, 07:07 AM

অস্কারের উপস্থাপক নিল প্যাট্রিক হ্যারিসও বিষয়টি নিয়ে মজা করার সুযোগ ছাড়েননি। নিজের সূচনা বক্তব্যেই হ্যারিস সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, “সবাইকে স্বাগতম ৮৭ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে…. সবার সেরা এবং সবচেয়ে সাদা, থুক্কু, উজ্জ্বল অস্কারে!”

এছাড়াও এবারের আসরের বেশ কয়েকটি মুহূর্তের কথা বছরজুড়ে মনে রাখবে সবাই। 

অন্তর্বাসে নিল প্যাট্রিক হ্যারিস


উপস্থাপক হিসেবে নিল প্যাট্রিক হ্যারিস একাই জমিয়ে দিয়েছেন অস্কারের আসর। অনুষ্ঠানের মাঝপথে হঠাৎ করেই তাকে দেখা যায় ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাকস্টেজ হয়ে মঞ্চে কেবল একটি সাদা অন্তর্বাস পড়ে দৌড়ে আসতে। ‘বার্ডম্যান’ সিনেমায় প্রধান অভিনেতা মাইকেল কিটনের এমনই এক দৃশ্যের নকল করে নিল এই কাণ্ডটি ঘটান।

পরের অংশেই আবার কেতাদুরস্ত পোশাকে ফিরে এসে নিলের বক্তব্য, “এবারে আমি সত্যিই এক ‘বদলে যাওয়া’ মানুষ!”

'একে গ্রিনকার্ড কে দিল!'

অস্কারের শেষ মুহূর্ত প্রায় উপস্থিত। অস্কারজয়ী অভিনেতা শন পেন মঞ্চে উঠেছেন সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে। ডলবি থিয়েটারজুড়ে পিনপতন নিরবতা, মনোনীতরা দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করছেন ফলাফলের জন্য। এমন সময়ে খাম থেকে বিজয়ীর নাম লেখা কার্ডটি বের করে শন পেন-এর চিৎকার- “কে এই উটকো লোকটাকে গ্রিনকার্ড দিল?”

শন পেন আসলে ঠাট্টাচ্ছলে বলছিলেন আলেহান্দ্রো গনসালেস ইনিয়ারিতুর কথা। মেক্সিকোর এই পরিচালকের হাতেই এবারের আসরে উঠেছে তিনটি অস্কার - সেরা পরিচালক, সেরা চিত্রনাট্যকার এবং সেরা সিনেমা বিভাগে।

'পরপর দুই মেক্সিকান- ব্যাপারটা সন্দেহজনক!'

মজার ব্যাপার হল, গত বছরের অস্কারেই সেরা পরিচালকের খেতাব জিতেছিলেন আরেক মেক্সিকান- আলফন্সো কুয়ারন, ‘গ্র্যাভিটি’ সিনেমার জন্য। নিজের অস্কার বক্তব্যে কুয়ারনের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি ইনিয়ারিতু। 

ঠাট্টা করে বলেন, “পরের বছরই হয়তো অস্কার কর্তৃপক্ষের ওপর কোনো না কোনো অভিবাসন আইন জারি করবে সরকার। পরপর দুই মেক্সিকানের জয়- ব্যাপারটা সন্দেহজনক!”

‘গ্লোরি’র গৌরবময় মুহূর্ত

অর্ধ শতাব্দী আগে কৃষ্ণাঙ্গদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান মার্টিন লুথার কিং। তার স্মরণেই তৈরি সিনেমা ‘সেলমা’র গান ‘গ্লোরি’ এবার জিতে নিয়েছে সেরা অরিজিনাল সং-এর অস্কার।

পুরস্কার গ্রহণের ঠিক আগেই গানটি পরিবেশনের জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন জন লেজেন্ড এবং কমন। তাদের দারুণ পারফর্ম্যান্স তৈরি করে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির। গানের শেষে পুরো ডলবি থিয়েটার উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় এই শিল্পীদের। ‘সেলমা’ সিনেমার মূল অভিনেতা ডেভিড ওয়েলো এবং ক্রিস পাইনদের মতো তারকাদের চোখে তখন আবেগের অশ্রু।

লেডি গাগার ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’

পপশিল্পী লেডি গাগা তার অদ্ভুতুড়ে পরিচ্ছদের জন্যই পরিচিত। কখনো কাঁচা মাংসের জামা তো কখনো ডিমের খোলসের পোশাক- দর্শকদের চমকে দিতে লেডি গাগার আবির্ভাবে বৈচিত্রের অভাব ছিলনা কখনোই।

সেই গাগাই চমকে দিলেন আরেকবার, তবে সম্পূর্ণ অন্যভাবে! শ্বেতশুভ্র এক রাজকীয় সান্ধ্যপোশাক আর খোলা রুপালি চুলে গাগাকে দেখাচ্ছিল স্বর্গের অপ্সরীদের মতোই। এই সাজেই অর্ধ শতক আগের হলিউডি ক্লাসিক ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’-এর গানগুলোর দারুন শ্রুতিমধুর একটি মেডলি পরিবেশনা করেন তিনি। মূল সিনেমার অভিনেত্রী স্বয়ং জুলি অ্যান্ড্রুজও গাগার এই পরিবেশনার প্রশংসা না করে পারেননি।

'সময় এসেছে নারীদের অধিকার বুঝে নেওয়ার'
 

পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার যখন গ্রহণ করছেন প্যাট্রিশিয়া আর্কেট, প্রথাগতভাবেই পরিবার এবং সহকর্মীদের ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি তুলে ধরেন অভিনেতাদের তুলনায় অভিনেত্রীদের কম পারিশ্রমিক পাওয়ার বিষয়টি।

উচ্চকণ্ঠে তিনি বলেন, “প্রত্যেক নারীকে বলছি। আমরা সবসময়ই অন্যের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে এসেছি। সময় হয়েছে, এবার নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার।”

প্যাট্রিশিয়ার এই বক্তব্যকে দর্শক সারি থেকে করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানান মেরিল স্ট্রিপ এবং জেনিফার লোপেজের মতো তারকারা।