'বাংলা সিনেমা বাঁচাতে যৌথ প্রযোজনাই ভরসা'

হিন্দি, তামিল চলচ্চিত্রের দাপটে টালিগঞ্জের ব্যবসায় যখন মন্দার ঘনঘটা, তখন প্রসেনজিৎ-গৌতম ঘোষের চোখ বাংলাদেশের বাজারে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2015, 01:26 PM
Updated : 21 Feb 2015, 01:32 PM

অন্যদিকে হিন্দি সিনেমার আমদানি ঠেকাতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের প্রতিই গুরুত্বারোপ করছেন দেশি নির্মাতারা। আর তাই দুই বাংলার চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমাই ভরসা বলে মনে করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।  

শনিবার সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মান, নির্মাণের নীতিমালা তৈরি করা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের পেশাগত মান উন্নয়নসহ নানা পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে আলাপই ছিল মুখ্য।  

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু,  বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সহসভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান, সহসভাপতি ওমর সানি, অভিনেত্রী সিমলা, মেহের আফরোজ শাওন, ভারতের অভিনেতা প্রসেনজিৎ, নির্মাতা গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, ভেঙ্কটেস ফিল্মসের কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে।

নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, “বাংলা সিনেমার অভিনেতা, অভিনেত্রী আর কলাকুশলীরা এখন যেন কুয়োর ব্যাঙ! উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য কোথাও আমাদের বাংলা সিনেমার বাজার ভালো না। এখন দুই বাংলা একযোগে কাজ না করলে বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে।”

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের তাগাদা দিয়ে গৌতম ঘোষ বলছেন, “যৌথ প্রযোজনার ব্যাপারে অন্যভাবে ভাবতে হবে। এসব সিনেমা নির্মাণের নিয়মকানুন দুই বাংলার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। সিনেমার বাণিজ্যিক দিকটি মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। একইসঙ্গে দুই দেশের চলচ্চিত্রের শিল্পীদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।”

তার কথার সূত্র ধরেই ভারতীয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ দুই বাংলার চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানির ইস্যুতে একটি যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ কমিটি ঠিক করে দেবে কোন সিনেমাগুলো বিনিময় হবে, কোন সিনেমাগুলো সেন্সর করা যাবে।

অভিনেতা প্রসেনজিৎ-এর মতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের প্রক্রিয়া এবং কাঠামো ‘খুব সোজা’ নয়।তিনি বলেন, “যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ফরম্যাট ঠিক না হলে যৌথ প্রযোজনার সিনেমার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।”

বৈঠকের সঞ্চালক এস এম হারুন-অর-রশীদ বলেন, “যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলোর মান ওঠানামা করছে। এ সিনেমাগুলো দুদেশে প্রদর্শন করতে গিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে না।  অথচ উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র আমদানি করতে আইন খুব কঠিন নয়।”

সম্প্রতি হিন্দি সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’ প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতা সোহানুর রহমান সোহান চলচ্চিত্র বিনিময় প্রথার বিষয়টি তুলে এনে বলেন, “বিশ বছর আগে নির্মিত বাংলাদেশি সিনেমা সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত কোনো ভারতীয় সিনেমার বিপরীতে রপ্তানি হবে, ব্যাপারটি দুঃখজনক। এটা চলতে পারে না।”

বাংলাদেশী নির্মাতা এস এ হক অলিক প্রশ্ন ছোঁড়েন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রসেনজিৎকে এদেশের মানুষ এখন ভালোভাবেই চেনে, জানে। কিন্তু আমাদের শাকিব খান বা অন্য অভিনেতাদের পশ্চিমবঙ্গের দর্শক চেনে না। যাদের চেনেই না, তাদের সিনেমা কেন দেখবে সে দর্শক।”

অলিকের প্রশ্নে প্রসেনজিৎ এর জবাব, “এক্ষেত্রে সিনেমার প্রযোজকরা বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে প্রচারণা করতে পারেন।”

বৈঠকের শেষে হারুন-অর-রশীদ বলেন, “এখন বাংলা চলচ্চিত্রে বাজার আরও বড় করতে হলে, যৌথ প্রযোজনার বিষয়ে আরও বেশি করে ভাবতে হবে। আমরা দশ বছরে দশটি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারি। যৌথ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে এসব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, নির্মাতা, কলাকুশলীদের বিষয়ে।”

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবেরও দায়িত্ব পালন করা রশীদ বৈঠকে উপস্থিতদের দৃষ্টি  আকর্ষণ করে ত বলেন, “আপনারা আপনাদের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আমাদের কাছে নিয়ে আসুন । আমরা সরকারি মহল থেকে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবো।”