‘সিনেমা হতে পারে সচেতনতার মাধ্যম’

বাল্যবিবাহ কেবল বাংলাদেশেই নয়, পুরো উপমহাদেশেই একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত। গণমাধ্যম, বিশেষ করে সিনেমা এই সমস্যা সমাধানের একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে - অষ্টম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের আসরে এ কথা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 12:32 PM
Updated : 27 Jan 2015, 12:32 PM

চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে ২৪শে জানুয়ারি থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ সেমিনার, যার বিষয় ছিল ‘বাল্যবিবাহ এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে’। এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং গণস্বাক্ষরতা অভিযানের মহাপরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং গণ বিষয়ক প্রধান ড্যানিয়েল লুফি।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রাশেদা কে চৌধুরী জানান, ২০১২ সালে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর এক জরিপে উঠে আসে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ শিশু হয়েছে বাল্যবিবাহের শিকার। আর চীনকে বাদ দিলে এর একটি বড় অংশ হল দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা।

"বাংলাদেশের গ্রাম কিংবা শহর, সবখানেই কিন্তু বাবা-মাদের বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে ধারণা আছে। কিন্তু জেনে শুনেই তারা নিজের মেয়েকে সময়ের আগে বিয়ে দেন। কেন? কারণ আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ হচ্ছেনা।"- বলেন রাশেদা কে চৌধুরী।

তার মতে, বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে যদি সমাজকে সচেতন করা যায় তবে এই ক্ষতিকর প্রথার প্রয়োগ বেশি মাত্রায় কমতে পারে। এক্ষেত্রে সিনেমা হতে পারে অনেক বড় একটি মাধ্যম।

তিনি বলেন, "বিভিন্ন জরিপের পরিসংখ্যানে প্রকাশ করা সংখ্যাগুলো মানুষ প্রতিবছরই দেখছে, কিন্তু তাতে অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না। এই সংখ্যাগুলোকে শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে সমাজের চোখের সামনে। শুধু সিনেমা নয়, যে কোনো গণমাধ্যম হতে পারে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার।"

সাবেক উপদেষ্টা আরও বলেন, বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবার অনেক সফল গল্প ছড়িয়ে আছে আমাদের দেশে। এই গল্পগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরলে তা থেকে অনেকেই অনুপ্রাণিত হতে পারে।

শিশু নির্মাতা সাদমান বলেন, "ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের পরের সম্পদ ভাবা হয়। মেয়েরা পরীক্ষায় ফেল করলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু ছেলেদের ভাল রেজাল্ট করার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করে বাবা-মা। মেয়েরা বাবা-মাকে দেখবে না, এই বদ্ধমূল ধারণাকে বদলাতে হবে।"

বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের মানসিক দূরত্ব একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন শিশু নির্মাতা রায়হান।

অপরদিকে ১৬ বছর বয়সী সাথী বলেন, "আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে মানুষ নয়, বরং শুধুমাত্র মেয়ে ভাবা হয়। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে শেখে না। শিশুকালে বিয়ে হবার পর তার শৈশব বলে যা অবশিষ্ট ছিল তাও শেষ হয়ে যায়।"

২৩ বছর বয়সী নির্মাতা তাসনীমের মতে, শিক্ষাই পারে বাল্যবিবাহের এই সমস্যার সমাধান করতে। এজন্য দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক পড়াশুনা করার আইন তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামবে ৩০ জানুয়ারি। ৪৮টি দেশের দুই শতাধিক চলচ্চিত্র দেখানো হবে এই উৎসবে, এর মধ্যে থাকবে বাংলাদেশি শিশু নির্মাতাদের সিনেমাও। উৎসবটি সবার জন্যে উন্মুক্ত।


ছবি: চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি