মঙ্গলবার রাতে মধুমিতা সিনেমা হলের কার্যালয়ে গ্লিটজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ বিষয়ে কথা বলেন ভারতীয় হিন্দি সিনেমা আমদানিকারক ইনউইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত দাশ।
ইনউইন এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ‘দেশীয় সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র ধ্বংসে’র অভিযোগ প্রত্যাখান করে নওশাদ বলছেন, “আমরা তো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই সিনেমা আমদানি করছি। সাফটা চুক্তির বাইরে আমরা যাইনি। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব নিয়মকানুন মেনে আমরা সিনেমাগুলো আমদানি করেছি। বেআইনি কিছু তো আমরা করিনি।”
নওশাদের মতে, “বাংলা সিনেমার বাজার খুব ভালো যাচ্ছে না। হলমালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। হল বন্ধ হলে আমরা সিনেমা চালাবো কোথায়?”
নওশাদ জানালেন, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বেশকটি সিনেমা নিয়ে তারা ভারতীয় প্রদর্শকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায় সিনেমাগুলো ভারতের বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত সিনেমার অনুকরণে নির্মিত। তারা এসব সিনেমা ভারতের সেন্সর বোর্ডে জমা দিলে উল্টো তাদেরই ক্ষতি হবে।
নওশাদ মনে করছেন, বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশের দর্শকদের ভারতীয় হিন্দি সিনেমার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে। এখন ঘরে বসেই স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে তারা হিন্দি সিনেমা দেখছে। তাই তারা হলে ভারতীয় সিনেমা চালাতে চাইছেন।
নওশাদের অভিযোগ, “ঐক্যজোট নেতারা বলছেন ভারতীয় সিনেমা তারা এ দেশের হলে প্রদর্শন করতে দেবেন না। কিন্তু তারা কি পারবেন ভারতীয় চ্যানেলগুলোর প্রচার বন্ধ করতে? আমরা তো একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন ঐক্যজোট নেতারা তো কেউ আসেননি।”
হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের পক্ষে নওশাদের যুক্তি , এদেশের চিত্রনাট্যকার, নির্মাতারা এখন ঘরে বসে ভারতীয় সিনেমা দেখে ফ্রেম টু ফ্রেম ‘কপি’ করছে। চ্যানেল থেকে হোক আর ইউটিউব থেকেই হোক, তারা কোনো না কোনোভাবে সিনেমাগুলো দেখছে। দুবাই থেকে ভারতীয় সিনেমার ‘পাইরেটেড’ সিডিও আসছে তাদের কাছে।
তিনি বলছেন, “আমরা যদি ভারতীয় সিনেমাগুলো প্রদর্শন করতে শুরু করি তবে তারা আর নকল সিনেমা বানাতে পারবে না। দর্শকও খুব সহজে তাদের নকলবাজি ধরে ফেলতে পারবে। তাই তারা এখন একজোট হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।"
তার মতে, “আমাদের আর্টিস্টদের ভারতে চেনে না বলে প্রায় শোনা যাচ্ছে। আমাদের সিনেমা ওদেশে চললে আমাদের শিল্পীদের পরিচয় বাড়বে।”
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত দাশ বলছেন, “হালের বাংলাদেশের সিনেমার অবস্থা নেহায়েত খারাপ। সিনেমা চালিয়ে হল মালিকরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। অনেক সিনেমাহল বন্ধের উপক্রম। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি সিনেমা চালিয়ে হলমালিকরা যদি টাকা পায়, তবে তাতে তো তাদেরই লাভ।”
সিনেমাহল প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক শাকিব খানের এক অভিযোগের ভিত্তিতে সুদীপ্ত বলছেন, “শাকিব বলছে, আমরা মেশিন ভাড়ার টাকা দিতে চাই না। হল আধুনিকায়ন করতে চাই না। তার যদি এতই দরদ সিনেমার প্রতি, তবে তার পারিশ্রমিক কমিয়ে আনুক। সে তো তার পারিশ্রমিক বাড়িয়েই চলেছে। মন্দার বাজারে তার পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে তো প্রযোজক হিমশিম খাচ্ছেন।”
সুদীপ্ত জানিয়েছেন, প্রদর্শক সমিতি ও হলমালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পরিবেশক ও প্রযোজক সমিতির তরফ থেকেও হিন্দি সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’ প্রদর্শনের ব্যাপারে ‘অনাপত্তি’ জানানো হয়েছে।
তবে এই চারটি হিন্দি সিনেমার পর কোনো আমদানিকারক নতুন কোনো হিন্দি সিনেমা আমদানি করলে তা প্রদর্শনের ব্যাপারে আদালতের রায় জেনে তবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুদীপ্ত।
নওশাদ জানিয়েছেন, ইনউইন এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশ থেকে ‘প্রাণের মানুষ’, ‘জোসনার প্রেম’, ‘তুমি আমার মনের মানুষ’ সিনেমা তিনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হলে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ সিনেমাগুলোর বিপরীতে আরেক আমদানিকারক খান ব্রাদার্স আমদানি করছে ‘খোকাবাবু’ এবং ‘খোকাবাবু ৪২০’ সিনেমা দুটি।
শুক্রবার ৮০টি হলে ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তির খবর নিশ্চিত করেছেন প্রদর্শক সমিতির নেতা সুদীপ্ত।