'হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন চলবে না'

হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনী ও আমদানির বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোট। সম্প্রতি বেশকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়ায় ঐক্যজোটের আন্দোলনে শরিক হয়েছে চলচ্চিত্র বিষয়ক বেশ কটি সংগঠনের নেতারা।

বিনোদন প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2015, 06:03 AM
Updated : 21 Jan 2015, 06:03 AM

মঙ্গলবার দুপুরে এফডিসিতে ঐক্যজোটের ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন যে কোনো উপায়ে তারা হিন্দি সিনেমার প্রদর্শনী ও আমদানি বন্ধ করবেন। প্রয়োজনে বুকের রক্ত ঢালতেও প্রস্তুত তারা।

ইন উইন এন্টারপ্রাইজের উদ্যোগে শুক্রবার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সালমান খান অভিনীত ভারতীয় সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’। এছাড়াও ‘ডন-২’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘তারে জামিন পার’ সিনেমা তিনটিও সেন্সর বোর্ডে ছাড় পেয়ে গেছে। তারই প্রেক্ষিতে এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ঐক্যজোট।

ঐক্যজোট নেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি চিত্রপরিচালক সোহানুর রহমান সোহান গ্লিটজকে জানিয়েছেন, হিন্দি সিনেমা আমদানি ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করবেন। তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের ব্যাপারে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারির নির্দেশনা দেবেন।

শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি চিত্রনায়ক শাকিব খান বলছেন, “আইনের ফাঁকফোকড় গলে দেশের শত্রুরা সেন্সর বোর্ডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আঁতাত করে ভারতীয় হিন্দি সিনেমা সেন্সর করিয়ে নিচ্ছেন। এই কুচক্রী মহল বিভিন্ন হলে ডিজিটাল মেশিন ভাড়ার টাকা দিতে চান না, অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে পারেন। তখন তাদের টাকার অভাব হচ্ছে না।”

শাকিব জানান, শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কলাকুশলীরা হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে আন্দোলনে মাঠে থাকবেন।

সোহানুর রহমান সোহান বলছেন, “হিন্দি সিনেমা আমদানির বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়াধীন। ভারতীয় বা উপমহাদেশীয় যে কোনো সিনেমার ব্যাপারে এখনও কোনো চূড়ান্ত রায় আসেনি। কিন্তু তারা আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করেই আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে অনুমতি এনে তথ্য মন্ত্রণালয় তথা সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।”

নির্মাতা সোহানও দুষলেন সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে। 

“আইনের ফাঁকফোকড় গলে তারা সেন্সর বোর্ডের দুর্নীতিগ্রস্থ ভাইস চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বাংলাদেশি সিনেমা শিল্পে ধস নামাতে চাইছে।”

অবশ্য নিজেদের পক্ষে কোনো আইনি কাগজপত্র দেখাতে পারেনি পরিচালক সমিতি।

২০১০ সালে ইনউইন এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করলে তার বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন একাট্টা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বাদী হয়ে রিট আবেদন করেন। ইনউইনও আদালতে যায়। আদালত পরে মামলাটির কার্যক্রম মুলতবি রাখেন।

তখন ইনউইনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয় দ্বারস্থ হয় আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের। আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মতামত নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় জানায় ‘ওয়ান্টেড’, ‘ডন-২’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘তারে জামিন পার’ মুক্তির ব্যাপারে কোনো আইনগত বাধা নেই।

২০১৪ সালের ১২ই নভেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অধিশাখার পক্ষ থেকে উপসচিব জি.এন. নজমুল হোসেন খান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, “চারটি ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র সেন্সর করার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই, সেহেতু চারটি চলচ্চিত্র বিধি মোতাবেক সেন্সর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”

মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ইনউইন এন্টারপ্রাইজ এ চারটি সিনেমা আমদানি করেছে ও তা বিভিন্ন হলে প্রদর্শনেরও উদ্যোগ নিয়েছে।

সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতীয় সিনেমা আমদানির বদলে ইতোমধ্যেই ভারতে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশি সিনেমা শাকিব খান অভিনীত ‘মা আমার স্বর্গ’ ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘বৈষম্য’।

তবে খোদ শাকিব খান এতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলছেন, “চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী সমিতি কারও সঙ্গে কথা না বলে যেনতেন সিনেমা মুক্তি দিলেই তো হলো না।”

চিত্রনায়ক অমিত হাসান বলছেন, “তারা আমাদের পেটে লাথি মারলে, আমরা তাদের বুকে লাথি মারব।”

প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আশা করছেন, “মোসাহেবদের অলীক স্বপ্ন খোদ প্রধানমন্ত্রী সত্যি হতে দেবেন না।”