'মনে হতো অস্কার পেয়েছি'

বাচসাস পুরস্কার পেলে মনে হতো অস্কার পেয়েছি - বাচসাস আজীবন সম্মাননা পুরস্কার হাতে এমনটাই বললেন রাজ্জাক। ঢাকাই সিনেমার প্রাচীনতম পুরস্কার বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার - জৌলুশ হারিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু এর ৩৮তম আসর যেন ছিল হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের আসর।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 08:54 AM
Updated : 29 Dec 2014, 08:54 AM

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) শনিবার রাতে বিএফডিসিতে আয়োজন করেছিল বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের। আর এ উপলক্ষে বিএফডিসির কড়ইতলায় যেন বসেছিল তারার মেলা।

এবারের আসরে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল অবধি ৭৭ জন শিল্পী ও কলাকুশলীকে বিভিন্ন শাখায় পুরস্কৃত করা ছাড়াও আজীবন সম্মাননা জানানো হয়েছে চিত্রনায়ক রাজ্জাক, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী ও চিত্রপরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে। বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন।

বড়বোন সুচন্দার হাত থেকেই ‘রূপগাওয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য পাশ্বর্-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন চম্পা। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেয়ে উচ্ছসিত ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী । ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে আসা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দাবি করে বলেন, “চলচ্চিত্র শিল্পীদের প্রতি আমার অগাধ আস্থা রয়েছে। তারা চাইলেই কলকাতা, লাহোর, বোম্বের চলচ্চিত্রকেও হার মানাতে পারে। আমি অশালীন-নকল-উস্কানিমূলক চলচ্চিত্র চাই না, চাই গণমুখী মুক্ত মন্ত্রে উজ্জীবিত চলচ্চিত্র।”
কবরী তাদের সময়কে ঢাকাই সিনেমার ‘সোনালী যুগ’ দাবি করে বলছেন, “রাজ্জাক-কবরী জুটি নিয়ে দর্শকের মধ্যে বিশেষ কৌতুহল সবসময় থাকবে। তাদের জুটি নিয়ে গুঞ্জন গুঞ্জরিত হতেই থাকবে।”
কবরী- রাজ্জাক কিন্তু তখনও নামলেন না। একটু পরই নিজেদের অভিনীত সিনেমার গানগুলোর সঙ্গে নাচতে শুরু করলেন দুজনে। ফিরে গেলেন ফেলে আসা সোনালী অতীতে।

অপুকে সঙ্গী করে আসরে এসেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এ সময়ের ‘নাম্বার ওয়ান’ নায়ক শাকিব খান। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায় না’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জেতা শাকিব বললেন, “চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা চলচ্চিত্র পরিবারেরই সদস্য। আমি ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। কিন্তু এটা আমার ঘরের মানুষের পুরস্কার। আমার পরিবার আমাকে প্রথমবারের মতো পুরস্কৃত করল। এটি অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য।"

বাচসাস ‍পুরস্কার পেলে মনে হতো অস্কার পেয়ে গেছি - বাচসাসের একাল-সেকাল নিয়ে বলছিলেন রাজ্জাক। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাজ্জাক-কবরী জুটিকে নিয়ে দর্শকের মধ্যে এখনও কৌতুহল রয়েছে - বলছিলেন কবরী। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এসেছিলেন ‘তিন কন্যা’ সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খোদার পরে মা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া ববিতা ও ২০১২ সালে ‘রুপগাওয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য পাশ্বর্-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া চম্পার হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন তাদের ‘বুজি’ চিত্রনায়িকা সুচন্দা। তিন বোন একসঙ্গে মঞ্চে ওঠার ঘটনা বিরল। মঞ্চে উঠে আবেগপ্লুত হয়ে পড়লেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই তিন মহারথী।
বাচসাস পুরস্কার হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত ববিতা বলেই ফেললেন, “এই সিনেমার জন্য আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আশা করেছিলাম। কিন্তু তা আর হল না। তবে বাচসাস পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যি আনন্দিত।”
২০০৯ সালে ‘গঙ্গাযাত্রা’র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার নিতে এসেছিলেন ফেরদৌস ও পপি। ২০১০ সালে ‘গোলাপী এখন বিলাতে’ চলচ্চিত্রের জন্য মৌসুমীর ঝুলিতে গেছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারটি।
বাচসাস অ্যাওয়ার্ডের রাতে আরও এসেছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, শাহনূর, অঞ্জনা, চিত্রনায়ক আমিন খান, ইলিয়াস কাঞ্চন, অমিত হাসান, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরীর মতো তারকারাও। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর নেচে-গেয়ে বা আবৃত্তি করে দর্শক মাতিয়ে রেখেছেন এই তারকারা।
২০০৯ থেকে ২০১৩ প্রতি বছরের জন্য ১৭টি ক্যাটাগরিতে দেয়া বাচসাস পুরস্কারের আসরে সর্বোচ্চ ১৩টি পুরস্কার জিতেছে ‘গেরিলা’।

ইলিয়াস কাঞ্চন আর অঞ্জনা ফিরে গেলেন তাদের সময়ে। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অনুষ্ঠানের ফাঁকে দর্শক সারিতে আড্ডামুখর মাহি ও শিমলা। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

২০০৯ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে মোরশেদুল ইসলামের ‘প্রিয়তমেষু’। চলচ্চিত্রটির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে ‘প্রিয়তমেষু’। ২০০৯ সালে ‘গঙ্গাযাত্রা’ এবং ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রের জন্য ফেরদৌস ও চঞ্চল চৌধুরী যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ‘গহীনে শব্দ’। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু। এছাড়া এ চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে। ২০১০ সালে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায় না’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার পেয়েছেন জাকির হোসেন রাজু।
২০১১ সালে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার। ‘গরীবের মন অনেক বড়’ সিনেমার জন্য ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আমিন খান, ‘গেরিলা’র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান।

নেচে-গেয়ে দর্শক মাতিয়ে মৌসুমী জানান দিলেন, নায়িকা হিসেবে এখনও তার আবেদন ফুরিয়ে যায়নি। ছবি -তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

২০১২ সালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে প্রয়াত চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে সিনেমাটি। সে বছরের ‘পিতা’ সিনেমার জন্য মাসুদ আখন্দ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।
জুরি বোর্ডের বিচারে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এর প্রধান অভিনেতা রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী এবং ‘প্রজাপতি’র জন্য অভিনেতা মোশাররফ করিম পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার।
২০১৩ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকা মায়া’। এ চলচ্চিত্রের জন্য গাজী রাকায়েত শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কাটাগরিতে সাতটি পুরস্কার জিতেছে এটি। একই সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন তিতাস জিয়া। ‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমার জন্য অপু ও ‘ভালোবাসা আজকাল’ এর জন্য মাহির হাতে গেছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার।