আপত্তির মুখে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেশা - দ্য লিডার'

জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত মাহি-শিপন অভিনীত ‘দেশা-দ্য লিডার’-এর বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র মুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি বলছে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হলে আদালতের শরণাপন্ন হবেন তারা। এদিকে জাজ বলছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করলেও, সিনেমাটি তারা শুক্রবারেই মুক্তি দিচ্ছেন।

জয়ন্ত সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2014, 10:03 AM
Updated : 25 Dec 2014, 06:32 PM

চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতা এবং এফবিসিসিআইয়ের চলচ্চিত্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কো-চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খসরুর অভিযোগ, জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি নির্ধারিত সিনেমা মুক্তির ফরম পূরণ না করে এবং তাদের কাছে তারিখ না চেয়েই ‘দেশা-দ্য লিডার’ মুক্তি দিচ্ছে।

খসরু গ্লিটজকে বলেন, “জাজ মাল্টিমিডিয়া একের পর এক নিয়মনীতি ভাঙ্গছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সমিতি তাদের সদস্যপদ স্থগিত করলেও তারা নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা না করে সিনেমা মুক্তি দিয়েই যাচ্ছেন। আমরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে এবার ‍রুখে দাঁড়িয়েছি।”

তিনি আরও বলছেন, “জাজ যদি নিয়ম না মেনে সিনেমাটি মুক্তি দিয়েই ফেলে তাহলে আমরা আবার  আদালতে যাব। এভাবে নিয়মনীতি ভঙ্গের বিষয় তো মানা যায় না।”

খসরুর এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিম উল্যাহ খোকন বলেন, “সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েই তো আমরা সিনেমা মুক্তি দিচ্ছি। এখন প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিতে যারা আছেন তারা কেউ নির্বাচিত সদস্য নন। এছাড়াও প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সিনেমা মুক্তির তারিখ নির্ধারণ কমিটির প্রধান মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনিও আমাকে জানিয়েছেন, ‘দেশা’ মুক্তিতে কোনো সমস্যা নেই।”

গ্লিটজের সঙ্গে আলাপচারিতার ফাঁকেও খোকন কথা বললেন মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে। হোসেন তখনও বলেন, ‘দেশা’ সিনেমাটি মুক্তিতে ‘কোনো বাধা’ নেই।

প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ এনে খোকন বলেন, “সিনেমা মুক্তি ও হলের মেশিন ভাড়া বাবদ তাদের কারও কাছে ১০ লাখ,  কারও কাছে ২৫ লাখ টাকা পায় জাজ মাল্টিমিডিয়া। নিয়মনীতি ভঙ্গের অভিযোগগুলোকে আমার কাছে টাকা না দেওয়ার অজুহাত বলেই মনে হচ্ছে।”

বিভিন্ন সিনেমা হলে জাজ মাল্টিমিডিয়া তাদের নিজস্ব প্রজেক্টর বসিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির তরফ থেকে। তাদের দাবি, যেসব হলগুলোতে জাজের প্রজেক্টর রয়েছে, সমিতি তাদের ইতোমধ্যেই তিন মাসের মধ্যে তা ফেরত দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সমিতি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান খোরশেদুল আলম খসরু।

খসরু বলছেন, “আমরা অনেক টাকা লগ্নি করে সিনেমা নির্মাণ করছি। এসব সিনেমা মুক্তি দিতে গেলে দেখা গেছে জাজের প্রজেক্টরের ভাড়া বাবদ প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রযোজক ও পরিবেশককে বহন করতে হয়। এ তো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ইতোমধ্যে নোটিশ পাঠিয়েছি হলগুলোতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল মালিকদের নিজস্ব প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আরও জানান, চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির উপদেষ্টা কমিটিতে যারা সিনেমা হলের মালিক তারা এক মাসের মধ্যেই নিজেদের হলে নিজস্ব প্রজেক্টর স্থাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।

জাজের প্রজেক্টর প্রতিস্থাপনের প্রসঙ্গটি নিয়ে আলিম উল্যাহ খোকন বলেন, “আমরা তো কোনো হল মালিককে জোর করিনি যে আমাদের প্রজেক্টরেই সিনেমা চালাতে হবে। যার ইচ্ছা হবে না সে ফেরৎ দিয়ে যাবে।”  

এদিকে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির ডাকা সভায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সদস্যপদ বাতিল হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন কোনো চলচ্চিত্রে তারা কাজ করবেন না। 

এই সিদ্ধান্ত ২১শে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জানায় প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি।

এ বিষয়ে সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন দিলু, যুগ্ম সদস্য সচিব সামসুল আলম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান, চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সরোয়ার আলী ভুঁইয়া দিপুসহ অন্য সমিতির নেতৃবৃন্দ।