প্রজেক্ট কম্বলের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার দশেক দর্শককে মাতালেন তেরো ব্যান্ড এবং স্বতন্ত্র শিল্পীরা। যাদের অবদানে সংগৃহীত হয়েছে প্রায় বিশ হাজার কম্বল ও শীতবস্ত্র।
কলাবাগান মাঠ, ঘড়ির কাঁটা দুপুর দুটো ছুঁয়েছে। সারিবদ্ধ শ্রোতারা হাতে কম্বল নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ভেতরে প্রবেশ করার জন্য।
অল্টারনেটিভ হিপ-হপ ব্যান্ড রাজত্বের স্টেজে ওঠার মাধ্যমেই শুরু হয় কনসার্টটি। তারা গেয়ে শোনায় ‘দাসত্ব’ গানটি। এরপরই স্টেজে ওঠে ফিউশন-রক ধাঁচের ব্যান্ড ধারক। দেশাত্মবোধক কিছু গান ছাড়াও তারা শোনায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোমার খোলা হাওয়া’ গানটি।
শ্রোতা-ভক্তরা কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠতেই স্টেজে ওঠে ব্যান্ড ‘যাত্রী’। তাদের ‘তুমি চাও রোদ্দুর’, ‘এক পায়ে নূপুর’, ‘একটা গোপন কথা’, ‘মেয়ে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো যেন তপুর চেয়ে দর্শকরাই বেশি গাইলেন। এরপর দেখা গেল হার্ড রক ব্যান্ড ‘দৃক’কে। নিজেদের একটি গান ছাড়াও তারা পারফর্ম করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘ঝর্ণার মত চঞ্চল’ গানটি।
কনসার্টের এ পর্যায়ে মঞ্চে তাহসান আগমনের ঘোষণা আসতেই শ্রোতাদের মধ্যে যেন আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। শিল্পীও ভক্তদের মান রাখতেই নিজের অভিনব উপস্থাপনা আর গানের মাধ্যমে মাতিয়ে গেলেন তাদের।
তাহসান গাইলেন ‘ঈর্ষা’, ‘প্রেমাতাল’ এবং ‘আলো’র মত জনপ্রিয় গানগুলো। তার সাবেক ব্যান্ড ব্ল্যাকের ‘এখনও’ গানটিও শোনালেন। শেষে নতুন অ্যালবাম ‘উদ্দেশ্য নেই’-এর টাইটেল ট্র্যাক গেয়ে ইতি টানেন।
এরই মধ্যে সন্ধ্যা নেমেছে। দর্শকদের উন্মাদনা যেন ক্রমেই বাড়ছে। মাঠে আর খুব একটা জায়গা খালি নেই।
এরপর হাজির হলেন সিনিয়র ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক ও তার ব্যান্ড। গানে গানে দর্শকরা যেন ফিরে গেলেন নব্বইয়ের সেই দিনগুলোতে। ‘মৌসুমি’, ‘মেলায় যাই রে’, ‘প্রেমরসিক’-এর মতো গানগুলোর সঙ্গে নিজে নাচলেন, দর্শকদেরও নাচিয়ে ছাড়লেন মাকসুদ।
এ পর্যায়ে মঞ্চে হাজির হলো ‘চিরকুট’। পুরো মাঠে তখন 'চিরকুট', 'চিরকুট' রব। ইমন চৌধুরির আঙ্গুলের টোকায় সেতার মুর্চ্ছণা তুলতেই সবাই নিশ্চুপ। চিরকুট পারফর্ম করলো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’। এরপর ‘বন্ধু’, ‘জাদুর শহর’, ‘কানামাছি’ তো ছিলই।
এরপর ‘অবসকিওর’-এর পালা। নব্বইয়ের দশকের পপ-রক ধারার এই ব্যান্ডটি যে এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আরেকবার। ‘মাঝ রাতে চাঁদ’, ‘ভণ্ডবাবা’ গান দুটোর সঙ্গে গলা মেলালেন এ যুগের তরুণ শ্রোতারাও।
হাল আমলের ব্যান্ড ‘শূন্য’ স্টেজে এলো এরপরই। ‘শত আশা’, ‘ভাগো’ আর ‘সোনা দিয়া বান্ধায়াছি ঘর’ গানগুলো পারফর্ম করলো তারা।
ডিফারেন্ট টাচ শোনালো ‘মন কি যে চায়’ এবং ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গান দুটি।
একে শীতের রাত, তার ওপর ঘড়ির কাঁটায় সময় রাত প্রায় দশটা। বাপ্পা অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের সময় হলো মঞ্চে ওঠার। তুমুল হর্ষধ্বণির মধ্যে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে সবাই গাইল ‘বাজি’ এবং ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ গান দুটি।
কনসার্টের এ পর্যায়ে মাঠে শ্রোতার সংখ্যা সর্বোচ্চ। এবার মঞ্চে আসলেন জনপ্রিয় পপ তারকা হাবিব। শোনালেন ‘ডুব’ এবং ‘হৃদয়ের কথা’ গান দুটো।
কথা ছিল কনসার্টে আসতে হলে টিকিট হিসেবে আনতে হবে একটি করে কম্বল। পরে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা শুধু কম্বলই নিয়ে আসেনি, অনেকে শীতবস্ত্রও এনেছেন। কনসার্ট উপলক্ষে শুধু ঢাকা থেকেই নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও ট্রাকে করে এসেছে প্রচুর কম্বল এবং শীতবস্ত্র।
শীতাক্রান্ত মানুষদের সাহায্যে এ বছর এই উদ্যোগটি হাতে নেয় দাতব্য সংগঠন প্রজেক্ট কম্বল।