শেষ হলো পাহাড় জয়ের চলচ্চিত্র উৎসব

ঘরকুনো বলে বাঙ্গালির কিছুটা বদনাম রয়েছে। একদম ঘরকুনো না হলেও সমতলভূমির এই মানুষেরা গৃহীতো বটেই। তবে হালের তরুণ-তরুণীরা ঘরে থাকতে রাজি নন। মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা থেকে শুরু করে সাইকেলে চেপে বিশ্বভ্রমণের রোমাঞ্চকর নেশা পেয়ে বসেছে তাদের।

কাজী শাহরিন হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2014, 04:21 AM
Updated : 21 Dec 2014, 04:21 AM

বাংলাদেশের মানুষকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার প্রেরণা জোগাতেই ২০১০ সাল থেকে ব্যানফ মাউন্টেইন ফিল্ম ফেস্টিভাল আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানালেন উৎসব সমন্বয়ক ও মাউন্টেনিয়ার মুনতাসির মামুন। কানাডাভিত্তিক সংগঠন ব্যানফ সেন্টার আয়োজিত রোমাঞ্চকর স্বল্পদৈর্ঘ্য  চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রামাণ্যটিত্রগুলো নিয়েই এ আয়োজন।

ব্যানফ মাউন্টেইন ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলো এবারের উৎসবে। ১৯ ও ২০শে ডিসেম্বর ঢাকায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।

ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এ প্রামাণ্যচিত্রগুলো। ঢাকায় এবার বসলো এর পঞ্চম আসর।

এবারের উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিলো আসরের সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাওয়া ‘থারটিফাইভ’। উৎসবের ৩৫তম আসরে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রটিতে অভিযাত্রিক ডেরেকের ৩৫তম জন্মদিনে ৩৫ রুটে অভিযানের রোমহর্ষক মুহূর্তগুলোকে পাঁচ মিনিটে তুলে ধরেছেন নির্মাতা নাজা খোস্কি, অস্তিন জিয়াদাক ও ম্যাথু ফান বিনা।

উৎসবে আরও প্রদর্শিত হয় বিশেষ জুরি পুরস্কারজয়ী ‘কিপার অফ দ্য মাউন্টেইনস’। কাঠমান্ডু বাসী মার্কিন সাংবাদিক দ্য হিমালয়ান ডাটাবেইসের জন্য হিমালয়ে অভিযানের ধারাবিবরণী সংরক্ষণ করছেন ১৯৬০ সাল থেকে।  ৯০ বছর বয়সে এসেও তিনি নির্ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজটি করছেন নিরলস নিষ্ঠার সঙ্গে।

এলিজাবেথের স্বর্ণযুগে কেমন ছিল হিমালয়ে অভিযান,নারীদের অবস্থান,আর তিনি কেন একা এই কাজটি শুরু করলেন- বিশেষ জুরি পুরস্কারজয়ী ‘কিপার অফ দ্য মাউন্টেইনস’ চলচ্চিত্রে এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুজেছেন নির্মাতা অ্যালিসন ওটো।

আরো প্রদর্শিত হয় নরওয়ের প্রামাণ্যচিত্র ‘নর্থ অফ দ্য সান’। ওয়েভ সার্ফিং পাগল দুই তরুণের প্রচণ্ড শীত ও তুষারঝড় উপেক্ষা করে নরওয়ের সমুদ্র সৈকতে কুড়ে ঘর বানিয়ে কয়েক মাস কাটিয়ে দেওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি এ প্রামাণ্যচিত্রটি।

প্রথম দিন আরো প্রদর্শিত হয় নিউজিল্যান্ডের সাত সাইকেলচালকের এক মাস ধরে পাহাড়ী পথে সাইকেল নিয়ে নানা অভিযানের গল্প ‘নট ব্যাড’, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় স্কি করার শারীরিক সক্ষমতার দিকটি ছাড়াও এর দার্শনিক দিক তুলে ধরে তৈরি ‘ইনটু দ্য মাইন্ড’,অন্ধ হয়েও এভারেস্টজয়ী এরিক ওয়াইনমায়ারের পাহাড়ি নদীতে কায়াকিং করার সংকল্প ও প্রস্তুতির ওপর তৈরি ‘সেন্সরি ওভারলোড’ এবং যুক্তরাজ্যের ২৪ বছরের তরুণী পাহাড় আরোহনকারী হ্যাজেল ফিন্ডলের জীবন নিয়ে তৈরি ‘স্পাইস গার্ল’।

গতবছর সাইকেলে চেপে আলাস্কা থেকে কানাডা যাওয়ার অভিযানে নামেন বাংলাদেশের মুনতাসীর মামুন, কনক আদিত্য ও বাংলাদেশে বসবাসকারী সারা জেইন। প্রথম দিনের আয়োজনে তাদের অভিযানের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থিরচিত্র প্রদর্শন করেন মামুন।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হয় কানাডার অভিযাত্রী ব্রুস কারবির প্যাডেল বোট নিয়ে ভ্যাঙ্কুভার থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত জর্জিয়া স্ট্রেইট পাড়ি দেওয়ার কাহিনী ‘দ্য কোয়েশ্চেন উই আস্ক’, স্কিয়িং নিয়ে কানাডীয় প্রামাণ্যচিত্র ‘দি বার্ন’, চিলির পাতাগোনিয়ায় দুটি নদীতে বাধ দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ নিয়ে ‘স্ট্রিম অব কনসিকুয়েন্স’, পাহাড়ে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার উপর নির্মিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাওয়া ‘হেভেনস গেইট’,দক্ষিণ মেক্সিকোর রেইন ফরেস্টে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ছয় কায়াকচালকের অভিযান নিয়ে ‘বিয়ন্ড দ্য ড্রপ’। আরো দেখানো হয়‘নাইন কুইনস-শেডস অফ উইন্টার’ ও ‘দ্য সেনসেই’।

ব্যানফ মাউন্টেইন ফিল্ম অ্যান্ড বুক ফেস্টিভালে পুরস্কারপ্রাপ্ত ও প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বব্যাপী দেখানো হয় নানা সংগঠনের মাধ্যমে। এ বছর ৪০টি দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শিত হচ্ছে চলচ্চিত্রগুলো।

বাংলাদেশে উৎসব আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে কেওক্রাডং বাংলাদেশ, সহযোগিতা করছে কোকা-কোলা।

উৎসব সহযোগী হিসেবে তাদের পাশে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

উৎসবটির আর্ন্তজাতিক সহযোগী ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক ও দ্য নর্থ ফেইস।