বলিউড ২০১৪: সালমানই রাজা

বলিউডে ২০১৪র শুরুতে ছিল নতুন প্রজন্মের দাপট। এরপর ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা পর্দার দখল নিতে শুরু করে। বড় বাজেটের বহুল প্রতিক্ষিত বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পেলেও বলিউডের জন্য বছরটি ছিল হতাশার। 

জেনিফার ডি প্যারিসআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 08:01 AM
Updated : 17 Dec 2014, 08:01 AM

২০১৪ সালে এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে প্রায় ১৮০টি হিন্দি সিনেমা। এর মধ্যে মাত্র সাতটি সিনেমা ছাড়াতে পেরেছে একশো কোটির মাত্রা আর একে মোটেও ভালভাবে দেখছেন না ট্রেড পণ্ডিতরা। এই সাতটি সিনেমা এ বছর বলিউডকে দিয়েছে প্রায় ২৩৫০ কোটি রুপি। বছর শেষে সবার চোখ এখন আমির খানের ‘পিকে’র দিকে।

টাইগার শ্রফ-ক্রিতি শ্যাননের ‘হিরোপান্তি’, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা-শ্রদ্ধা কাপুর-রিতেশ দেশমুখের ‘এক ভিলেইন’, ভারুন ধাওয়ান-ইলিয়ানা ডি ক্রুজের ‘ম্যায় তেরা হিরো’, আলিয়া ভাট-রানদিপ হুডার ‘হাইওয়ে’ এবং অর্জুন কাপুর-আলিয়া ভাটের ‘টু স্টেটস’—বছরের প্রথম ছয় মাস বক্স-অফিসে ছিল এই সিনেমাগুলোর রাজত্ব। এই সিনেমাগুলো কেবলমাত্র লগ্নিকৃত অর্থ উঠিয়েই নেয়নি, ভালো ব্যবসাও করেছে।

কিন্তু বছরের বাকিটা সময় পরিবেশকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি কেউ।

পরিবেশক রাজেশ থাদানি বলেন, "বছরের বাকি সময়টা ছিল সবচেয়ে বেশি হতাশাব্যঞ্জক। বেশীরভাগ সিনেমা প্রত্যাশার সীমা ছুঁতে পারেনি। সব মিলিয়ে বছরটা খারাপ কেটেছে...খুবই খারাপ।" 

২০১৪ সালকে ‘গড়পড়তা’ একটি বছর বলেই অভিহীত করেছেন বক্স-অফিস বিশ্লেষক কোমাল মেহতা, "এই বছরের শুরুটা ভালো ছিল, কিন্তু সময় যেতে যেতে নিচে নামতে শুরু করে আয়ের রেখা। সবচেয়ে খারাপ ছিল নভেম্বর মাস, ‘হ্যাপি এন্ডিং’, ‘দ্য শওখিনস’ এবং ‘কিল দিল’-এর মত সিনেমাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।"

মনমরা বক্স-অফিসের এই বছরে খানিকটা উষ্ণতা ছড়িয়েছে যেই সিনেমাগুলো, সেগুলো হল—সালমান খানের ‘জয় হো’ (প্রায় ১১০ কোটি), আক্শায় কুমারের ‘হলিডে’ (১১০ কোটি), অর্জুন-আলিয়ার ‘টু স্টেটস’ (১০৫ কোটি), সালমানের ‘কিক’ (২০০ কোটির বেশি), হৃত্বিক রোশান-ক্যাটরিনা কাইফের ‘ব্যাং ব্যাং’ (১৪৫ কোটি), শাহরুখ খান-দিপিকা পাড়ুকোনের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ (১৮৮ কোটি) এবং অজয় দেবগন-কারিনা কাপুর খানের ‘সিংহাম রিটার্নস’ (১৪০ কোটি রুপি)।

একশো কোটির কাছাকাছি যেতে পেরেছে ‘এক ভিলেইন’ (৯৬ কোটি) এবং ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া’ (৮৬ কোটি)। ২০১৩ সালে একশো কোটির মাত্রা ছাড়াতে পেরেছিল মাত্র পাঁচটি সিনেমা, সেই তুলনায় সংখ্যা বেশি হলেও ব্যবসা ভালো বলতে রাজি নন পরিবেশক থাদানি।

বক্স-অফিস বিশেষজ্ঞ ভিনোদ মিরানির মতে, একশো কোটি এখন আর কোনো বেঞ্চমার্ক নয় হিন্দি সিনেমার বাজারের জন্য। কারণ যেসব সিনেমা একশো কোটি ছাড়াচ্ছে, সেগুলোর নির্মাণব্যয়ও কিন্তু অনেক বেশি। হিসেব করলে দেখা যায়, কোনো মতে লাভ উঠাতে পারছে সিনেমাগুলো।

আবার বিশ্ববাজারের একটা বড় অংশ দখল করে বসেছে হিন্দি সিনেমা। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী হিন্দি সিনেমার আয় ছিল ১২৫০ কোটি রুপি, এ বছর যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে এফআইসিসিআই-কেপিএমজি ইন্ডিয়ান মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি।

এছাড়া এ বছর বাণিজ্যিক ধারায় নারীকেন্দ্রিক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটি। ‘মারদানি’, ‘কুইন’, ‘মেরি কম’, ‘দেড় ইশকিয়া’সহ দর্শকের মনোযোগ কেড়েছে ‘হাইওয়ে’, ‘রিভলভার রানি’। 

এছাড়া সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে ‘সিটিলাইটস’, ‘হাওয়া হাওয়াই’, ‘জাল’, ‘লাক্শমি’ এবং ‘হায়দার’এর মত সিনেমাগুলো।

থাদানি বলেন, "সম্পূর্ণ নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও ‘হাইওয়ে’ আয় করেছে ৩০ কোটি রুপি, ‘মেরি কম’-এর আয় ছিল ৫৪ কোটি, ‘মারদানি’ ৪০ কোটি, ‘রাগিনি এমএমএস টু’ পেয়েছে ৫০ কোটি আর ‘কুইন’ ৫৫ কোটি রুপি......যা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।"

অপরদিকে অফবিট সিনেমাগুলোর বাজেট ছিল কম, কিন্তু সেই তুলনায় ব্যবসা হয়েছে ভালোই। ৫০ কোটি রুপি আয় করেছে ‘হায়দার’, ‘হাওয়া হাওয়াই’ এবং ‘সিটিলাইটস’ ঘোরে তুলেছে ১০ কোটি রুপির মতো।

বছরের শেষে এসে এবার সবাই অপেক্ষা করছে আমির খান অভিনীত ‘পিকে’র জন্য। রাজকুমার হিরানি-বিধু বিনোদ চোপড়া-আমির খান এর আগে জন্ম দিয়েছিলেন ‘থ্রি ইডিয়টস'।  তাই এই তিনজনের প্রতি সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি।

এক নজরে ২০১৪ সালের বলিউড

১। বছরটি ছিল নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের বছর। দর্শকের মন কেড়েছেন টাইগার শ্রফ, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, শ্রদ্ধা কাপুর, আলিয়া ভাট, ভারুন ধাওয়ান, অর্জুন কাপুরের মতো তারকারা।

২। সব হিসাব মেলালে দেখা যায়, ‘কিক’-এর মাধ্যমে সালমান খানই পড়েছেন বক্স-অফিসের রাজার মুকুট। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ নিয়ে বীরদর্পে মাঠে নামলেও শেষ হাসি হাসতে পারেননি শাহরুখ খান। ১৮৮ কোটি রুপি আয় করেও ডিঙ্গাতে পারেননি সালমানের ২০০ রুপির সীমা।

 ৩। ‘হাইওয়ে’ দিয়ে শুরু হয়ে ‘কুইন’, ‘দেড় ইশকিয়া’, ‘মেরি কম’ এবং ‘মারদানি’—চলতি বছর তৈরি হয়েছে সিনেমায় নারীকেন্দ্রিক সিনেমার আলাদা বাজার।

৪। ‘সিটিলাইটস’, ‘হায়দার’, ‘জল’, ‘হাওয়া হাওয়াই’র মতো সিনেমাগুলো এখন সাধারণ দর্শকেরও মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে।