আবারও ‘বীরাঙ্গনা’র নীরবতা ভাঙ্গার প্রয়াস

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার সংগঠন কমলা কালেক্টিভসের বীরাঙ্গনাদের ওপর নির্মিত গবেষণাভিত্তিক মঞ্চ নাটক ‘বীরাঙ্গনা’ বাংলায় প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মঞ্চে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2014, 10:30 AM
Updated : 15 Dec 2014, 11:06 AM

নাটকটি বাংলাদেশেই প্রথমবার প্রর্দশিত হয় গত বছর আয়োজিত আলতাফ মাহমুদ অন্তর্ধান দিবসের অনুষ্ঠানে। সেবার সংলাপ, গান, নেপথ্যকথন - সবই ছিল ইংরেজি ভাষায়। নাটকটির যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে। অফি পুরস্কারের জন্যে মনোনয়ন পেয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ভ্রমণের বিস্তারিত জানাতে, কমলা সমগ্র তাদের স্থানীয় সহযোগী যাত্রিকের সহায়তায় ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সোমবার সকালে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।

নাটকের মুখ্য অভিনয়শিল্পী লিসা গাজী, কণ্ঠশিল্পী সোহিনি আলম, পরিচালক ফিলিজ ওজকান এবং যাত্রিকের পক্ষ থেকে সাদাফ সাজ সিদ্দীকি উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন লিসা গাজী। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এই শিল্পী নাট্যচর্চা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের মাধ্যমে তার নাট্যচর্চার শুরু।

‘বীরাঙ্গনা’ নাটকটিকে গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত একটি প্রযোজনা হিসেবে উল্লেখ করেন লিসা।

তিনি বলেন, “বীরাঙ্গনা নাটকটি তাদেরই কথা বলে, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত হয়েছিল, সম্ভ্রম হারিয়েছিল। আমরা তাদের অনেক গল্প শুনেছি। তাদের অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু শব্দের পেছনে তাদের কখনও দেখিনি, তাদের গল্প বা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে তাদেরকে স্পর্শ করিনি। কমলা সমগ্র এ নীরবতাকে ভাঙ্গতে চায়।”

“নাটকটি তাদের ব্যাক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, মান-অভিমানের গল্প” বলেও জানান তিনি।

পরিচালক ফিলিজও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, “নাটকটি নির্মাণের আগে গবেষণা কাজের শুরু থেকে আমরা সেই নারীদেরই আবিষ্কার করেছি। আর এর মাধ্যমেই জানতে পেরেছি বীরঙ্গনারা কীভাবে নির্যাতিত ও অবমাননার শিকার হয়েছেন। তাদের নিয়ে কাজ করতে পেরে ভাগ্যবান মনে করছি নিজেদের।”

ফিলিজ ওজকান যুক্তরাজ্যের পেগাসাস থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয় দিবস পালনের প্রস্তুতিকালে এমন একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।”

তিনি আরও বলেন, “নাটকটির মাধ্যমে বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের প্রাণের বিষয়কে তুলে ধরছে কমলা সমগ্র।”

যাত্রিকের পক্ষ থেকে সাদাফ বলেন, “একটা সময় পর্যন্ত বীরাঙ্গনাদের কাউকে মুখ খুলতে দেখিনি। আজ এ জগৎ থেকে চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের অভিজ্ঞতা বলার ইচ্ছাটা দেখতে পেয়েছি আমরা। আজকের এ পর্যায়ে আসার জন্য তাদেরকে লড়াই করেই আসতে হয়েছে। তাদের একটা স্বীকৃতিরও দরকার আছে নিশ্চয়।”

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান নাটকটির শক্তিশালী চিত্রায়নের প্রশংসা করেছে এবং শেকড়স্পর্শী প্রযোজনা বলে মন্তব্য করেছে।

নাটকটির এবারের প্রদর্শনী শুরু হবে ১৭ই ডিসেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে। এরপর ১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘর ও ১৯শে ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শতি হবে নাটকটি।

কমলা সমগ্রের গবেষণায় সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের বিরাট অংশ সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করেন। নাটকটি সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে ২৬শে ডিসেম্বর। চট্ট্রগ্রামের থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়নে প্রদর্শিত হবে ৩০শে ডিসেম্বর।

বাংলাদেশে আরও কয়েকটি প্রদর্শনের তারিখ পরবর্তীতে জানান হবে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: যাত্রিক।