সমবেত জাতীয় সংগীতে উৎসবের সূচনা

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় আসরের পর্দা উঠল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। মালবিকা সারুক্কাই, রাজরূপা চৌধুরী, ওস্তাদ শহীদ পারভেজ খান এবং বরাবরের মতো অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় মুগ্ধ হলেন শ্রোতারা। 

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2014, 06:24 AM
Updated : 28 Nov 2014, 06:24 AM

উদ্বোধনী পরিবেশনায় সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত গাইলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা।

শিল্পীরা হলেন— ইফফাত আরা দেওয়ান, ফরিদা পারভিন, সুবীর নন্দি, শাহিন সামাদ, শামা রহমান, মিতা হক, কিরণচন্দ্র রায়,মহিউজ্জামান চৌধুরী, বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, ইয়াকুব আলি খান, ইয়াসমিন মুশতারি, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমেদ লিসা, নাসিমা শাহিন, ইলোরা আহমেদ শুক্লা, তানিয়া মান্নান, অদিতি মহসিন, শারমিন সাথি ইসলাম, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী, ঝুমা খন্দকার, অনিন্দিতা চৌধুরী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শহিদ কবির পলাশ, সুমা রাণি রায় ও সেমন্তি মঞ্জরী।

ফোয়াদ নাসের বাবুর সঙ্গীতায়োজনে তারা আরও পরিবেশন করেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’।

বাংলা গানের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এবারের আয়োজনে বাংলা গান ও বাংলাদেশের শিল্পীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। উৎসবে বাংলাদেশের নামটিও এবারই সংযুক্ত করা হয়েছে।

সম্মেলক গানের পালা শেষ হতেই মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন তরুণ তবলাশিল্পী আজিনক্যা জোশি। তিনি গৌরব চট্টপাধ্যায়ের হারামোনিয়াম সহযোগে তিনতাল পরিবেশন করেন।

এরপর মঞ্চে আসেন ভরতনাট্যমশিল্পী বিদুষী মালবিকা সারুক্কাই। নৃত্যাঞ্জলি দিয়ে তিনি পরিবেশনা শুরু করেন। এরপর মানিমা রাগে ‘মারীচ বধ’, কাপি রাগে ‘ইয়ান্নাবাথাম’ এবং বৃন্দাবন রাগে ‘তিল্লানা’ নামে তিনটি নাট্যাংশ পরিবেশন করেন। মালবিকার সঙ্গে মৃদঙ্গমে সঙ্গত করেন বালাজি আঝওয়ার, কন্ঠসংগীতে মুরালি পার্থসারথী, নাট্টুভঙ্গমে নীলা সুকন্যা শ্রীনিভাসন, বেহালায় ভেঙ্কটারামানি শ্রীলক্ষী এবং শব্দ ও আলোক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সুরেশ রাজেন্দ্রন।

এরপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের সরোদ প্রতিভা রাজরূপা চৌধুরী। তিনি মালকোশ রাগ পরিবেশন করেন। এরপর বাজান রাগ হোসেইনী কানাড়া। রাজরূপা চৌধুরীর সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন পরিমল চক্রবর্তী।

রুচিরা কেদার পরিবেশন করেন রাগ বাগেশ্রী। একতালে বিলম্বিত দিয়ে শুরু করে তিনতালের দ্রুত ও একতালের দ্রুত গেয়ে রাগ পরিবেশনা শেষ করেন তিনি। মিশ্র পিলু রাগে একটি ঠুমরীও পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত দেন সঞ্জয় অধিকারী।  

সেতারে রাগেশ্রী বাজিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন ওস্তাদ শহীদ পারভেজ খান। এরপর মিশ্র খাম্বাজ এবং রাগ মাঁড় বাজিয়ে শোনান তিনি। ধুন দিয়ে শেষ হয় তার পরিবেশনা। তাকে তবলায় সঙ্গত দেন ওস্তাদ আকরাম খান।

দিনের অন্যতম আকর্ষণ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী মঞ্চে ওঠেন সবশেষে। তবে একা নন সঙ্গে ছিলেন পণ্ডিত দেবাশিস ভট্টাচার্য। তরুণ এই স্লাইড গিটারিস্টের সঙ্গে এক অনন্য যুগলবন্দী পরিবেশন করেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। বসন্ত মুখারি রাগে জোড় আলাপ, মধ্য লয়ের খেয়াল ও দ্রুত খেয়াল পরিবেশন করেন দুজনে। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী আরও পরিবেশন করেন রাগাশ্রয়ী বাংলা গান ‘শ্যাম বধুয়া’। তাদের তবলায় সঙ্গত দেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি, হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবন সান্যাল।

উৎসব উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুটি পরিবেশনার পর। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “১৯৫২-৫৩ সালের দিকে বাংলাদেশ সফরে এসে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব সলিমুল্লাহ হলে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আমাদের কিছুটা সময় দেন। তিনি বেশ কিছুটা সময় বাজনা শুনিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেন।” সেই মুগ্ধতার রেশ ধরেই তাই এখনও উচ্চাঙ্গ সংগীতের ভক্ত তিনি।

১৯৫৫ সালে ওস্তাদ বঁড়ে গুলাম আলী খাঁ সাহেবের ঢাকা সফরের কথাও স্মরণ করেন তিনি।

এ সময় মঞ্চে আরও ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সভাপতি আবুল খায়ের লিটু।

আবুল খায়ের বলেন, “১৯৪৭ সালে ‘দেশভাগ’-এর আগে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিল্পীরাই উচ্চাঙ্গসংগীতকে শুধু ভারতে নয়, পুরো বিশ্বে বিখ্যাত করে তুলেছিলেন।”

উচ্চাঙ্গ সংগীতের চর্চা, প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আয়োজিত উৎসবটি চলবে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে পল্লীকবি জসিমউদ্দিনকে। স্মরণ করা হচ্ছে সদ্যপ্রয়াত বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, গুরু রামকানাই দাস এবং সংস্কৃতিকর্মী ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সুবীর চৌধুরীকে।

শুক্রবার উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের উৎসবে অংশ নেবেন গৌতম সরকার (তবলা), মোহম্মদ জাকির হোসেন (তবলা), এনামুল হক (মৃদঙ্গ), বিশ্বজিত নট্ট (তবলা) সুপ্রিয়া দাশ (কণ্ঠ),আবির হোসেন (সরোদ), উমাকান্ত ও রমাকান্ত গুন্ডেচ্চা (কণ্ঠ), রাহুল শর্মা (সন্তুর), কড়াইকুডি মানি (কর্নাটকি তালবাদ্য) এবং রাজন মিশ্র ও সাজন মিশ্র (কণ্ঠ)।

উৎসব প্রাঙ্গণ হিসেবে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। স্টেডিয়ামের ভেতরেই রয়েছে খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা, এটিএম বুথ। বই-পত্রিকা, সিডি, বুটিক পণ্যের স্টল। যাতায়াতের জন্য বাস সার্ভিসও দিচ্ছে আয়োজকরা।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, উৎসবটিতে ২০১২ সালে মোট ৭০ হাজার ও ২০১৩ সালে ১ লাখ ১০ হাজার শ্রোতা যোগ দেন। ২০১৩ সালে উৎসবের তৃতীয় দিনে ৩৩ হাজার শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন।