‘কপি’ করতে চান না মাহি

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির এখন যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই। সম্প্রতি মুক্তি পেল ‘অনেক সাধের ময়না’ আর এখন ব্যস্ত ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ এবং ‘অনেক দামে কেনা’ নামের দুটি সিনেমার শুটিং নিয়ে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2014, 11:10 AM
Updated : 27 Nov 2014, 11:10 AM

জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘অনেক দামে কেনা’ সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে একটুখানি সময় বের করে গ্লিটজকে সাক্ষাৎকার দিলেন মাহি।

গ্লিটজ: ব্যস্ততা খুব বেশি মনে হচ্ছে...

মাহি : তা তো বটেই। এই শুটিং মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। ভারত-লন্ডন-বাংলাদেশ ঘুরে শেষ করলাম ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’। এখন আবার ‘অনেক দামে কেনা’। সত্যি হাঁপিয়ে উঠেছি।

গ্লিটজ: ‘অনেক দামে কেনা’ সিনেমাতে আপনার চরিত্রটি কেমন?

মাহি: ‘অনেক দামে কেনা’র গল্পটি ভীষণ সুন্দর। আমি প্রথমবারের মতো এক অন্ধ মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার চরিত্রের নাম পুষ্প। ‘পুষ্প’ চরিত্রটিকে ঘিরে সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। সিনেমাতে আমার বিপরীতে আছে বাপ্পী। বাপ্পী অন্ধ মেয়ের প্রেমে পড়ে। মেয়েটির ভালোবাসা পেতে সে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। দারুণ এক প্রেমের সিনেমা হতে চলেছে এটি।

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ :  প্রথমবারের মতো অন্ধ মেয়ের চরিত্রে কাজ করছেন, কিছুটা গবেষণা নিশ্চয়ই করতে হয়েছে...

মাহি : অন্ধ মেয়ের গল্প নিয়ে অনেক চলচ্চিত্রই হয়েছে। আমি দেখেছি ওগুলো। এ সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে আমি শুধু এ সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়েই পড়াশোনা করেছি। অন্য কোনো সিনেমা থেকে কিছু শিখতে চাইনি।

সত্যি কথা হল, অন্য সিনেমা থেকে শিখতে গেলে ব্যাপারটি কপি করা হত। এমনিতেই স্কুল লাইফে কপি করতাম বলে আমার বদমান আছে। সিনেমাতে আমি কারও কপি করতে চাই না। আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজের ভেতর থেকে যা আসে তাই প্রকাশ করতে। তখন সেটা ন্যাচারাল মনে হয়।

গ্লিটজ : এ সিনেমাতে আপনি ডিপজলের সঙ্গে অভিনয় করছেন। কেমন দেখছেন তাকে?

মাহি : তার নাম শুনলেই আমার ভয় লাগে! ভাগ্যিস তার সঙ্গে আমার খুব বেশি সিকোয়েন্স নেই। তবে তার সঙ্গে এমনিতে আমার কথা হয়েছে। সাভারে তার বাড়িতেও এ সিনেমার শুটিং হয়েছে। তাকে ভীষণ আন্তরিক ও ভালো মানুষ মনে হয়েছে আমার। তবে কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। বাপ্পীর কপাল পুড়েছে। এই সিরিয়াস মানুষটির সঙ্গেই বাপ্পীর অনেকগুলো সিকোয়েন্স।

গ্লিটজ: ‘অনেক দামে কেনা’ সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

মাহি : প্রতিটি সিনেমাতে আমি নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাই। গতানুগতিক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের বিরক্তির কারণ হতে চাই না। এই সিনেমাতে অন্ধ মেয়ের চরিত্রটি দর্শক কিভাবে নিলো, তা দেখি। ব্যাপারটি এমন নয় যে দর্শক গ্রহণ করলো না বলে আমি আর অন্ধ চরিত্রে কাজ করব না। যদি দর্শক গ্রহণ না করে তবে আমি নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারব।

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ : ‘ময়নামতি’ সিনেমায় কবরী অভিনীত ‘ময়না’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনি। ‘অনেক সাধের ময়না’ সিনেমাটি করার আগে ‘ময়নামতি’ সিনেমাটি দেখেছিলেন কি? কবরীর চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে কি চাপ অনুভব করেছেন?

মাহি: টেনশন তো হবেই। হ্যাঁ, ‘ময়নামতি’ সিনেমাটি আমি দেখেছি। ‘অনেক সাধের ময়না’ সিনেমাতে আমি চেষ্টা করেছি কবরী অভিনীত ‘ময়না’ চরিত্রের মূলভাব ঠিক রাখতে, যেন খুব বেশি হেরফের না হয়। পরিচালক রাজু স্যারের সঙ্গেও আমার অনেকবার আলোচনা হয়েছে। আমি নিজের মতো করে চরিত্রটিকে রূপায়নের চেষ্টা করেছি।  আমি কতটা সফল হলাম তা দর্শক ভালো বলতে পারবে।

তবে, কবরী ম্যাডামের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা আমার মোটেই পছন্দ না।  তার মতো অভিনেত্রী হতে গেলে আমাকে অনেকবার জন্ম নিতে হবে।

গ্লিটজ : ‘পোড়ামন’ এবং ‘অনেক সাধের ময়না’র পর ফের জাকির হোসেন রাজুর পরিচালনায় অভিনয় করছেন। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন?

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মাহি : অসাধারণ ! তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্যি দারুণ। সিনেমা শুরুর আগে চিত্রনাট্য, সিকোয়েন্স, মেকআপ, ক্যামেরা, লোকেশন সবকিছু নিয়ে আমরা প্রচুর পড়াশোনা করি। পারস্পরিক মত বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে আমাদের। ক্যামেরার পেছনে জাকির হোসেন রাজু অনবদ্য। কোনো একটি কান্নার দৃশ্য দেখাতে গিয়ে তিনি এমনভাবে কেঁদে ফেলবেন যে তার কান্না দেখে সবাই কেঁদে ফেলে। কাজের সময় রাজু স্যার যেন অন্য মানুষ।

গ্লিটজ: প্রথমবারের মতো যৌথ প্রযোজনার সিনেমাতে অভিনয় করছেন। এতে নায়ক অঙ্কুশ। গ্লিটজকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে অঙ্কুশ আপনার বেশ প্রশংসা করেছেন। তার সম্পর্কে আপনার মত কি?

মাহি: অঙ্কুশ ভীষণ ভালো বন্ধু হয়ে গেছে আমার। ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’-এর শুটিংয়ে লন্ডনে গিয়েই ভালো করে জানাশোনা হল আমাদের। ও কাজের ব্যাপারে এত সিরিয়াস, সাত সকালে আমার আগে সেটে হাজির হতো। ওর দেখাদেখি আমাকেও খুব ভোরে উঠতে হতো। কাজের ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছে সে আমাকে। নাচের মুদ্রা তুলতে পারছি না তো সে তুলে দিয়েছে, কোনো সিকোয়েন্স বুঝতে পারছি না তো বুঝিয়ে দিয়েছে।

গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ব্যাপারে নানা আলোচনা চলছে। শোনা যাচ্ছে জাজ মাল্টিমিডিয়া বেশ কটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ করবে যাতে আপনি থাকছেন প্রধান নায়িকা হিসেবে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে আপনার কি অভিমত?

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মাহি : খুব কঠিন প্রশ্ন। এসব কঠিন বিষয় নিয়ে ভাবতে গেলে মাথা হ্যাং হয়ে যায় আমার।

তবে হ্যাঁ, আমি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে তখনই কাজ করছি যখন দেখি সিনেমাটির সঙ্গে আমার দেশ, আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বার্থ জড়িত আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরই যদি কোনো লাভ না হয়, তাহলে আমি সেসব সিনেমাতে অভিনয় করব না।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরর্বতী সিনেমা ‘অগ্নি-২’ এ আমি থাকছি। তবে আমার বিপরীতে কে থাকছেন, তা এখন আমি বলতে পারবো না। পরবর্তী যৌথ প্রযোজনার সিনেমা তারা কটি করবেন, সেসব সিনেমাতে আমি থাকব কি না সে ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

গ্লিটজ : আপনার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্করপিয়নসের ব্যানারে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন বলেছিলেন। অগ্রগতি কতদূর?

মাহি : কাজ চলছে। চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে। সিনেমার নাম আপাতত ‘নিয়তি’ ঠিক করেছি। পরিবর্তন হতে পারে। কলাকুশলী আর পরিচালক কারা থাকছেন তা বলতে পারবো না, তবে প্রধান নায়িকা কিন্তু আমি।

গ্লিটজ: ফেইসবুকে আপনার একটি অফিশিয়াল ফ্যান পেইজ রয়েছে। আপনি নিজেও ফেইসবুক আসক্ত। ফেইসবুকে প্রচুর ভক্ত রয়েছে। কাদের বেশি প্রাধান্য দেন - হলের দর্শক না ফেইসবুক ভক্তদের?

মাহি: এ প্রশ্নটি ভালো লাগছে। ফেইসবুকের ভক্ত নয়, আমার কাছে হলের দর্শকের মতামত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফেইসবুকে যত ভক্ত আমাকে নিয়ে আলোচনা করে তার দশভাগও তো হলে যায় না। এই ভক্তদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা হলে আসুন। হলে এসে আমাকে নিয়ে আলোচনা –সমালোচনা করুন। আমার অভিনয় যদি সত্যি পছন্দ করেন তাহলে বলবো হলে আসুন।

গ্লিটজ: তারকাদের ক্ষেত্রে ‘নাম্বার ওয়ান’ ইস্যুটি বেশ প্রভাব ফেলে। এই ‘এক নম্বর’ ফ্যাক্টর আপনাকে কতটা ভাবায়?

মাহি : আমি ‘নাম্বার ওয়ান’ হতে পারলাম কি পারলাম না, তা নিয়ে মোটেও ভাবি না।  এসব নিয়ে ভাবতে গেলে কাজের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। তবে আমার সমসাময়িক অভিনেত্রীদের সিনেমাগুলোও ভালো চলছে। দর্শক হলে ফিরছে আবারও। এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ‘এক নম্বর’ হতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার কাছে।

গ্লিটজ: ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার ভাবনা কী? এখন ঠিক কোন অবস্থানে আছি আমরা? কোন দিক দিয়েই বা পিছিয়ে আছি?

মাহি: আমাদের ইন্ডাস্ট্রি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। দর্শকের রুচির বড় পরিবর্তন হয়েছে। তারা ভালো-মন্দ বিচার করতে পারছে। তারা মন্দ সিনেমাকে প্রত্যাখ্যান করছে। তবে কারিগরি দিক থেকে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। এ ব্যাপারে আমাদের আরও বেশি মনযোগী হতে হবে।

নতুন পরিচালকরা আসছেন। টিভি নাটকের অনেক নির্মাতা সিনেমা বানাতে আসছেন। আমি তাদের স্বাগত জানাই। সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করা লোকজন চলচ্চিত্রাঙ্গনে এলে একদিন সত্যি বদলে যাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি।

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি : তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ: বাণিজ্যিক ধারার পাশাপাশি অফট্র্যাক সিনেমাতে কাজ করবেন কি?

মাহি : আপাতত কোনো ইচ্ছা নেই। আমি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা নিয়ে ভাবতে চাই। অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য অফট্র্যাক সিনেমাতে অভিনয় করতে চাই না। আর অমন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আলাদা প্রস্তুতি দরকার, যা নেই আমার।

গ্লিটজ: দর্শকের কাছে কিছু বলার আছে?

মাহি:  দর্শকের কাছে অনুরোধ, আপনারা প্লিজ হলে আসুন। হলে এসেই ভালো মন্দ বিচার করুন। হলে এসে বলুন আপনাদের কথা। হল না বাঁচলে সিনেমাকেই বাঁচানো যাবে না। মাহি অনুরোধ করছে আপনাদের কাছে।

গ্লিটজ : কদিন পরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘দেশা-দ্য লিডার’ সিনেমাটি। যেখানে আপনি একজন সাংবাদিক…

মাহি : দারুণ একটি সিনেমা হতে যাচ্ছে। আমি ভীষণ আশাবাদী সিনেমাটি নিয়ে। সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়ানো মাহি এবার নিজেই ইন্টারভিউ নেবে, খবরের পেছনে ছুটবে। ব্যাপারটি বেশ মজার!

গ্লিটজ : অনেক ধন্যবাদ মাহি…

মাহি: আমার দর্শক যারা ইন্টারভিউটি পড়বেন, তাদের সবাইকে বলছি, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনাদের ভালোবাসার মাহি হয়ে থাকতে পারি আজীবন।