জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আজিজের পরিচালনায় সিনেমাটির শুটিং হচ্ছে গাজীপুরে। সেখানেই গ্লিটজের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ আলাপ করলেন টালিগঞ্জের এই নবীন তারকা।
গ্লিটজ : ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ আপনার অভিনীত দ্বিতীয় যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে কি ভাবছেন?
আমরা দুই বাংলা মিলে যদি ভালোভাবে সিনেমা নির্মাণ করতে পারি তাহলে আমাদের এই সিনেমার বাজার আরও বড় হবে। আমি চাইব, বাংলাদেশের ও টালিগঞ্জের সব শিল্পী যেন যৌথ প্রযোজনার সিনেমার অংশ হতে পারে। এখানে আমি একা কিছুই করতে চাই না।
গ্লিটজ: ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ সিনেমার নায়িকা মাহির সম্পর্কে কিছু বলুন?
অঙ্কুশ: মাহির সঙ্গে আগে আলাপ ছিল না। সিনেমার শুটিংয়ে এসেই পরিচয়। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম মাহির কাছ থেকে কতটুকু সহযোগিতা পাব। ওর সঙ্গে যে আগে থেকেই পরিচয় নেই। টালিগঞ্জের নুসরাত, শুভশ্রী আর শ্রাবন্তীর সঙ্গে আমার একটি কমফোর্ট জোন রয়েছে। ভয়েই ছিলাম মাহির ব্যাপারে। কিন্তু মাহির সঙ্গে আলাপ করে মনে হল, ও খুব ভালো বন্ধু হতে পারে। রোমান্টিক বা অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলোতে মাহি কিন্তু দারুণ কাজ করেছে। সে খুবই মেধাবী একজন অভিনেত্রী।
গ্লিটজ: সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?
অঙ্কুশ: ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’- সিনেমাটির চেয়ে ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ দারুণ ব্যবসা করবে। জাজ মাল্টিমিডিয়া আর এসকে মুভিজ সিনেমাটি নির্মাণ করছে। সঙ্গে আছে মাহি। আমার তো মনে হয়, সিনেমাটি দুদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তুলবে। দারুণ ব্যবসা করবে। রোমান্টিক গল্প নিয়ে কত সুন্দর সিনেমা হতে পারে, এ সিনেমাটি একটি উদাহরণ তৈরি করবে। বাকিটা মুক্তির পরই দেখবেন।
গ্লিটজ: আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘কেল্লাফতে’। তখন সবে কলেজে পড়েন। শুরুটা খুব দ্রুত হয়ে গেল না?
অঙ্কুশ: মিডিয়াতে কাজের ঝোঁক সবসময়ই ছিল। ক্লাস টুয়েলভে এসে পাগলামোটা বেড়ে গেল। রীতিমতো উঠে পড়ে লাগলাম। হায়ার সেকেন্ডারির পর কলকাতা কলেজে বিবিএ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েই বিভিন্ন স্টুডিওগুলোতে পোর্টফোলিও জমা দিতে শুরু করলাম। কপাল নেহাত ভালো ছিল। বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজগুলো থেকে কাজের জন্য আমার কাছে প্রস্তাব আসছিল। কিন্তু পরিচালক পীযূস সাহার সঙ্গে ‘কেল্লাফতে’ সিনেমাটিই করা হল। পীযূস দার প্ল্যান ভালো লেগেছিল ভীষণ।
গ্লিটজ: অভিনয়ের উপর পড়াশোনা সুযোগ ছিল। তা না করে পড়তে গেলেন ব্যবসা প্রশাসনে....
গ্লিটজ: সিনেমাতে অভিনয় করতে হলে ‘গড ফাডার’ থাকাটা খুব জরুরী?
অঙ্কুশ: আমি যখন ইন্ডাষ্ট্রিতে এসেছিলাম তখন নায়কের বেশ অভাব ছিল। ভাগ্যক্রমে আমি ক্লিক করে গিয়েছি। আমি মনে করি, সাফল্যের কোনো ফর্মুলা হয় না। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই গডফাদার পেয়ে গেছেন বলে সফলতা পেয়েছেন। আমি তাদের মতো হতে চাইনি। আমি নিজের কাজ দিয়েই আলোচনায় থাকতে চাই। আমি মনে করি আমাকে সবসময় সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে থাকতে হবে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লিটজ: ‘ইডিয়ট’, ‘কানামাছি’, ‘খিলাড়ি’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ পযর্ন্ত সবগুলো সিনেমাই তো এসকে মুভিজের ব্যানারে। এসকে মুভিজের সঙ্গে যোগাযোগ কিভাবে হয়েছিল?
অঙ্কুশ: ‘কেল্লাফতে’ সিনেমার শুটিং দেখতে এসেছিলেন প্রযোজক হিমাংশু ধানুকা। পরে তিনি টেলিভিশনে আমার সিনেমার প্রোমো দেখেছিলেন। ততদিনে ইন্ডাষ্ট্রিতে আমার সুনাম তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সে সুবাদে আমাকে হিমাংশু ধানুকা একটি মিটিংয়ে কল করেন। সেই মিটিংয়ের প্রায় নয় মাস পর আমরা ‘ইডিয়ট’-এর কাজ শুরু করি।
গ্লিটজ: দুর্গা পূজাতে আপনার ‘খিলাড়ি’র সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল প্রসেনজিৎ-এর ‘মিশর রহস্য’ এবং দেবের ‘রংবাজ’। সাফল্যের ব্যাপারে কতটা টেনশনে ছিলেন?
অঙ্কুশ: সত্যি বলি, আমি মোটেই টেনশনে ছিলাম না। আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দুর্গাপূজায় তিনটি সিনেমাই দারুণ চলছিল। এগারোদিন ছুটি ছিল। লোকে চুটিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল।
গ্লিটজ: এতগুলো সিনেমাতে অভিনয় করলেন। ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটাকে বলবেন?
অঙ্কুশ: আমার কারিয়্যারের গ্রাফটা প্রথম থেকেই খুবই লিনিয়ার ছিল। ‘কেল্লাফতে’ সিনেমাটি গড়পরতা লাভ করলেও নবাগত হিসেবে ইন্ডাষ্ট্রির ভিতরে আমি কিন্তু সুনাম কুড়িয়েছিলাম। ‘ইডিয়ট’ মুক্তির পরে সবাই আমাকে গ্রহণ করে নিল। ‘কানামাছি’ তে অন্যভাবে পেলেও ‘খিলাড়ি’ আসার পরে সবাই বলল, “বাহ! ফাটিয়ে দিয়েছে তো।” কিন্তু ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ আমাকে একেবারে অন্যধাপে নিয়ে গিয়েছে। বলতে গেলে আমার জীবনে সেই অর্থে কোনো টার্নিং পয়েন্ট নেই কারণ আমার কারিয়্যারের গ্রাফ আমাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গ্লিটজ: অভিনয় বা ফাইটিং-এ কোথাও কোনো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন? টালিগঞ্জের অনেক তারকা সিনেমার পাশাপাশি মঞ্চে অভিনয় করেন। আপনি কখনও কাজ করেছেন সেখানে?
গ্লিটজ: কখনও খলচরিত্রে অভিনয় করবেন?
অঙ্কুশ: অবশ্যই আমার খলচরিত্রে অভিনয়ের খুবই ইচ্ছা রয়েছে। স্টারডম-সুপারস্টার শব্দগুলোর চেয়ে আমি সবসময় অভিনয়কেই প্রাধান্য দেই। তবে আমি এমন কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই না যাতে আমার এত দিনে গড়া ইমেজ নষ্ট হয়ে যায়।
গ্লিটজ: সিনেমাতে তো অনেক প্রেম করেছেন। বাস্তবের অঙ্কুশের জীবনে প্রেম আসেনি?
অঙ্কুশ: এসব ব্যাপারে আমি চিরকালই লাজুক। কখনও যেচে গিয়ে কাউকে লাল গোলাপ দেওয়া হয়নি। আমার অনেক মেয়ে বন্ধু আছে। তাদের অনেককেই ভালো লাগে কিন্তু ‘আই লাভ ইউ’ বলতে কেমন লজ্জ্বা লাগে।
গ্লিটজ: বিয়ের পরিকল্পনা আছে?
অঙ্কুশ: এই সেরেছে! আমার মধ্যে এখনও শিশুতোষ ব্যাপারগুলো দারুণভাবে আছে। সেভাবে পরিপক্কতা এখনও আমার ভেতরে আসেনি। সিনেমাতে অভিনয় করবো, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরবো, মাস্তি করবো, .ফুসকা খাবো এখনই তো সময়। কারও দায়িত্ব নেওয়ার মতো সময় আসুক, তখন দেখা যাবে। তবে সেই সময় আসতে এখনও অন্তত সাত-আট বছর বাকি।
গ্লিটজ: সিনেমা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
অঙ্কুশ: আমি বছরে দুটির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করি না। কারণ বছরে অনেকগুলো বাজে সিনেমাতে অভিনয় করার চেয়ে আমি বাছাই করে বছরে দুটি সিনেমাতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ সিনেমার কাজ শেষ হলে আমি পরবর্তী সিনেমার কথা ভাববো।