হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে যৌনতাকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু ২০০২ সালে ‘রাজ’ সিনেমার মাধ্যমেই অপরাধ, রহস্য আর যৌনতার মিশেলে পরিপূর্ণ ইরটিক থ্রিলার তৈরির চল শুরু হয়। পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময়ে বলিউড দেখেছে ‘জিসম’, ‘মার্ডার’, ‘হেইট স্টোরি’র মতো সিনেমাগুলো। বক্স-অফিস সাফল্যের কারণে এর প্রতিটিরই একাধিক সিকুয়াল হয়েছে।
স্বল্প বাজেটেই রহস্য, অপরাধ এবং যুৎসইভাবে ব্যবহৃত যৌনদৃশ্য - নামী দামী তারকার জৌলুস ছাড়াই সিনেমা হিট করার ভালো একটি ফর্মুলাই উদ্ভাবিত হয়েছে ইরটিক থ্রিলারের বদৌলতে। যে কারণে ভাল গল্প না থাকা সত্ত্বেও পর্নো তারকা থেকে নায়িকা বনে যাওয়া সানি লিওনির উপস্থিতির কারণেই সাত কোটি রুপি বাজেটের সিনেমা ‘জিসম টু’ ব্যবসা করে ২১ কোটি রুপি।
তাহলে কি ভাল গল্প, বড় বাজেট অথবা ভালো অভিনয়- এসব ছাড়াই কেবলমাত্র রগরগে দৃশ্য আর উত্তেজনাময় অ্যাকশন দিয়েই সিনেমাকে টেনে নেওয়া সম্ভব? দীর্ঘয়াদে এই ঘরানার ভবিষ্যত কী? সব মহলের দর্শকদের কাছেই বা ‘ইরটিক থ্রিলারের’ আবেদন কতখানি?
হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত পরিচালকদের একজন, মহেশ ভাট দাবি করেন, ইরটিক থ্রিলারই এখন মুম্বাইভিত্তিক সিনেমাগুলোর ভবিষ্যৎ।
“ইরটিক থ্রিলারই হল সেই ঘরানা যাকে আশ্রয় করে ভারত এবং ভারতের বাইরে অনেক বই লেখা হয়েছে। বলিউডে আজকাল টিকে থাকার একমাত্র উপায় হল ‘থ্রিল’, ‘সেক্স’ আর ‘ক্রাইম’-এর সঠিক মিশ্রনে সিনেমা তৈরি করা।”
ভিশেশ ফিল্মসের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, “ ‘রাজ’, ‘মার্ডার’ এবং ‘জিসম’ ভারতে সিনেমার এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। এই সময়েই ভারতের নতুন প্রজন্ম নারীদের যৌনাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রথমবারের মতো পরিচিত হয়, যা এতদিন অবদমিত ছিল গতানুগতিকতার লক্ষ্মণরেখায় ।”
“ জিসম সিনেমায় এর প্রধান নারী চরিত্রের অভিনেত্রী বিপাশা বাসুকে বলতে দেখা যায়, শরীরের ক্ষুধা কেবল যৌনতার, ভালবাসার নয়। সে বিয়ের বাঁধনের বাইরেও যৌন সম্পর্কে যেতে দ্বিধা করে না; নারীর সম্পূর্ণ অপরিচিত এক রূপ প্রকাশ করে সে সাহসিকতার সঙ্গেই। আমরা ‘মার্ডার’-এও একই ঘটনা দেখিয়েছি এবং সেখানে এর সঙ্গে অপরাধকে যুক্ত করেছি।”
ভিশেশ ফিল্মসের ব্যানারে সবগুলো ইরটিক থ্রিলার সিরিজই সাফল্য পেয়েছে। সিনেমার কলাকুশলীদের ক্যারিয়ারেও সিনেমাগুলো রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
‘রাজ’ এবং ‘জিসম’-এর মাধ্যমে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের কাতারে চলে আসেন বিপাশা বাসু। ‘মার্ডার টু’-এর আগে শ্রীলঙ্কান সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না বলিউডে। কিন্তু এই একটি সিনেমাই পাল্টে দেয় সব। ২০১২ সালের ‘জিসম টু’ তো ছিল ইন্দো-কানাডীয় পর্নো তারকা সানি লিওনির জন্য বলিউডের প্রবেশপত্র। ওদিকে ‘হেইট স্টোরি’র পোস্টারে খোলা পিঠে আবির্ভুত হয়ে হই-চই ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি অভিনেত্রী পাওলি দাম।
প্রযোজকদের জন্যও লগ্নিকৃত অর্থ বক্স-অফিস থেকে উঠিয়ে আনার মোক্ষম অস্ত্র এই ইরটিক থ্রিলার।
যৌন আবেদনের তকমা গায়ে লাগিয়েই ২০১২ সালে সাফল্যের মুখ দেখে পুজা ভাট পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘জিসম টু’।
“রমজানের মধ্যে মুক্তি পেয়েও ৭ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমার ২১ কোটি আয় করাটাকে আমি অসাধারণ অর্জনই বলবো।” জানিয়েছিলেন পুজা ভাট।
“পাঞ্জাবে ‘মার্ডার টু’ আর ‘জান্নাত টু’র রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ‘জিসম টু’। আর এই দুটি সিনেমা ছিল আমাদের এখনও পযর্ন্ত সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা।”
তবে এতসব সাফল্যের উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও ইরটিক থ্রিলার টিকে থাকতে পারবে না বলেই দাবি করেন বাণিজ্য বিশ্লেষক তারান আদার্শ।
“ইরটিক থ্রিলারের আকর্ষণ কেবল প্রথমদিকেই কাজ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাল কাহিনি না থাকলে এসব সিনেমা খুব বেশি সফল হয় না। আপনি যতোই যৌনতা দেখান না কেন, শেষ পর্যন্ত তা কাজ করবে না।”
এ প্রসঙ্গে ‘হেইট স্টোরি’র উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, “ ‘হেইট স্টোরি’র শুরুটা ভাল হলেও ‘ভিকি ডোনার’ মুক্তির পরপরই এর ব্যবসা পড়তে শুরু করল। ক্ষেত্রবিশেষে তো প্রযোজকদের ক্ষতির কারণ হয় এই সিনেমাগুলো।”
এক্ষেত্রে অবশ্য দ্বিমত প্রকাশ করেন পুজা ভাট। তার মতে, এই ধরনের সিনেমাগুলোর লক্ষ্য ব্লকবাস্টার হিট হওয়া নয়।
“এসব সিনেমা একশ কোটি ক্লাবের জন্য নয়। আমি ৪০-৫০ কোটি রুপি খরচ করে সিনেমা বানাই না, যেখান থেকে আমার ১০০ কোটি রুপি আয় হবে। আমি ৭ কোটির কম বা বেশি রুপি খরচ করে সিনেমা বানাই এই লক্ষ্যে যেন তা ২০-২৫ কোটির ব্যাবসা করে। তারা তাদের ক্লাব নিয়ে থাকুন। আমরা, ভাটরা, নিজেদের মতো করে ব্যাবসা করতেই পছন্দ করি।”