ইতিহাস গড়া দশটি চরিত্র

সেলুলয়েডের পর্দায় অনেক সময় এমন কিছু চরিত্রের জন্ম হয় যারা ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে। রূপালীর পর্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা তেমনই দশটি চরিত্র নিয়ে লিখেছেন শরীফুল হক আনন্দ ।

শরীফুল হক আনন্দবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2014, 09:56 AM
Updated : 31 Oct 2014, 10:20 AM

ক্রিশ্চিয়ান বেল অভিনীত ‘দ্য মেশিনিস্ট’ সিনেমার দৃশ্য।

১০. ট্রেভর রেজনিক (ক্রিশ্চিয়ান বেল)- দ্য মেশিনিস্ট

হলিউডে কৃতী অভিনেতাদের কাতারে অন্যতম হলেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। নিজের শারীরিক গঠনকে বেশ কয়েকবার দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছেন চরিত্রের প্রয়োজনে। ৬৩ পাউন্ড ওজন কমিয়ে ফেলেছিলেন ট্রেভর রেজনিক চরিত্রটির পর্দায় রূপায়ন সার্থক করতে। ‘আমেরিকান সাইকো’ এবং ‘রেইন অফ ফায়ার’-এর মতো সিনেমার পর ‘দ্য মেশিনিস্ট’ সিনেমাটি ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বেলের। এক বছর অনিদ্রায় ভোগা কঙ্কালসার ট্রেভর রেজনিককে অনেক কাল মনে রাখবে হলিউডি সিনেমাপ্রেমীরা।

জন হার্ট অভিনীত ‘দ্য এলিফ্যান্ট ম্যান’ সিনেমার দৃশ্য।

০৯. জন মেরিক (জন হার্ট)- দ্য এলিফ্যান্ট ম্যান

অনেকে বলে থাকেন জন মেরিক চরিত্রটি উৎরেছে কড়া মেক আপ আর ভারী কস্টিউম ব্যবহারের জন্য। কিন্তু চতুর অঙ্গভঙ্গির আর বুদ্ধিদীপ্ত কথার ভাঁজে চরিত্রকে অনবদ্য করে তুলেছেন জন হাটর্। এত ভারী কস্টিউম নিয়ে অভিনয় করাটাও ছিল বেশ কষ্টকর। কথাগুলোও যাচ্ছিল কিছুটা জড়িয়ে। কিন্তু ‘দ্য এলিফ্যান্ট ম্যান’ সিনেমায় দুর্দান্ত এক চরিত্রের জন্ম হয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

টনি কার্টিস অভিনীত ‘সাম লাইক ইট হট’ সিনেমার দৃশ্য।

০৮. জো (টনি কার্টিস)- সাম লাইক ইট হট

ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব কেবল একটি চরিত্রের মাধ্যমে একই সিনেমায় প্রদর্শন করা রীতিমতো অসম্ভবই বলা চলে। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন টনি কার্টিস। সংগ্রামী শিল্পী জো থেকে তারকা হয়ে ওঠা জোসেফিন, আবার কখনও বিত্তশালী মিলিওনিয়ার জুনিয়র- একই চরিত্রের তিনটি রূপকেই দক্ষতার সঙ্গে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন জো। স্বীকৃতি তেমন একটা পাননি বটে, কিন্তু দর্শকের মন জিতে নিয়েছিলেন নিঃসন্দেহেই।

কেট ব্ল্যানশেট অভিনীত ‘আই অ্যাম নট দেয়ার’ সিনেমার দৃশ্য।

০৭. জুড (কেট ব্ল্যানশেট)- আই অ্যাম নট দেয়ার

ছয়টি চরিত্র, ছয়জন বব ডিলান- এমন এক গল্প নিয়ে সাজানো সিনেমা ‘আই এম নট দেয়ার’। কিংবদন্তী কান্ট্রি-রক শিল্পী বব ডিলানের জীবনের ছয়টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তারকা অন্তর্ভুক্তি ছিলেন কেট ব্ল্যানশেট। ক্রসজেন্ডার অ্যাক্টিং এখনকার হলিউডপাড়ায় নতুন কিছু না হলেও, ২০০৭ সালে এরকম একটি চরিত্রে ব্ল্যানশেটের অভিনয় ছিল সাহসিকতার পরিচয়ই।

‘জুড’ চরিত্রটির মাধ্যমে তিনি রেখে গেছেন পরিপূর্ণ এক অভিনয়ের ছাপ। জেদী, একরোখা, নিজেকে অসামাজিক হিসেবে চিন্তা করা জুডকে দেখে কেউ ভাবতেও পারবে না এই সেই ব্ল্যানশেট, যিনি পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন রানি এলিজাবেথরূপে।

শার্লিজ থেরন অভিনীত ‘মনস্টার’ সিনেমার দৃশ্য।

০৬. আইলিন উয়রনর্স (শার্লিজ থেরন)- মনস্টার

দক্ষিণ আফ্রিকান অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন নিঃসন্দেহেই সারা বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের মধ্যে একজন। তবে চরিত্রের প্রযোজনে সেই সৌন্দযর্ও অবলীলায় বিসর্জন দিয়েছিলেন থেরন। আইলিন উয়রনর্সেন মতো একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ওজন বাড়িয়েছিলেন ৩০ পাউন্ড। মেক-আপবিহীন স্থূল এক নারীতে রূপান্তরিত করেছিলেন নিজেকে। নিজের ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়টা যে এই ‘মনস্টার’ সিনেমাতেই করেছেন তার স্বীকৃতিও মিলেছে সেরা অভিনেত্রীর অস্কারে।

পিটার সেলার্স অভিনীত ‘ড. স্ট্রেইঞ্জলাভ’ সিনেমার দৃশ্য।

০৫. ড: স্ট্রেইঞ্জলাভ/মারকিন মাফলে/লিওনেল ম্যানড্রেক (পিটার সেলার্স)- ড: স্ট্রেইঞ্জলাভ

 পিটার সেলার্স এ সিনেমায় কখনও জার্মান বিজ্ঞানী, কখনও সুদর্শন চাটুকার ব্রিটিশ পাইলট আবার কখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট - একই সিনেমায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে সফলভাবে অভিনয় করাটা সত্যিই দুষ্কর। আর তা সাফল্যের সঙ্গেই করতে পেরেছেন সেলার্স, পেয়েছেন অস্কার মনোনয়নও।

হিথ লেজার অভিনীত ‘দ্য ডার্ক নাইট’ সিনেমার দৃশ্য।

০৪. দ্য জোকার ( হিথ লেজার)- দ্য ডার্ক নাইট

ব্যাটম্যানের শত্রু জোকার ছোট ও বড় পর্দায় বেশ কয়েকবারই আবির্ভুত হয়েছে। তবে 'দ্য ডার্ক নাইট' সিরিজের জোকারের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। এর এক দশক আগেই কিংবদন্তী অভিনেতা জ্যাক নিকলসন এই চরিত্রটিকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তা ছাড়িয়ে যাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব হবে - এমনটাই হয়তো কেউ ভাবতে পারেনি। আর তাই হিথ লেজারকে জোকার হিসেবে নেওয়ার জন্য প্রথমদিকে সমালোচনাই বেশি শুনতে হয়েছে পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানকে।

ক্ষ্যাপাটে চরিত্রটিকেই অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়ে যান ক্ষণজন্মা লেজার। ইতিহাস গড়েছিলেন বটে, তবে সিনেমা মুক্তির দুমাস পরেই মারা গেলেন। নিজের অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পাওয়া অস্কারও হাতে তুলে নিতে পারেননি এই কৃতী অভিনেতা। 

ড্যানিয়েল ডে লুইস ‘দেয়ার উইল বি ব্লাড’ সিনেমার দৃশ্য।

০৩. ড্যানিয়েল প্লেইনভিউ (ড্যানিয়েল ডে লুইস)- দেয়ার উইল বি ব্লাড

ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় এবং সেই চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলার ব্যাপারে খ্যাতি রয়েছে ব্রিটিশ অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে লুইসের। তেমনই এক চরিত্র ড্যানিয়েল প্লেইনভিউ। বিশ শতকের গোড়ার দিকের প্রেক্ষাপটে জেদী এক তেল ব্যবসায়ীর এই চরিত্রটির ছাঁচে নিজেকে ঢালতে গিয়ে দৈহিক গঠন, মুখের অভিব্যাক্তি, বাচনভঙ্গী - প্রায় সবই বদলেছেন এই অভিনেতা। এই সিনেমার জন্যই দ্বিতীয়বারের মতো সেরা অভিনেতার অস্কার জিতে নিয়েছিলেন তিনি।

রবার্ট ডি নিরো অভিনীত ‘রেজিং বুল’ সিনেমার দৃশ্য।

০২. জেইক লামোত্তা (রবার্ট ডি নিরো)- রেজিং বুল

রবার্ট ডি নিরো এবং মার্টিন স্করসেজি- সত্তর ও আশির দশকের সবচাইতে সফল অভিনেতা-পরিচালক জুটি। বিশেষ করে ‘রেজিং বুল' সিনেমাটি ডি নিরোর ক্যারিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং সিনেমা। সিনেমায় প্রথমে স্বাস্থ্যবান, সুদর্শন বক্সার লামোত্তাকে দেখা গেলেও পরে দেখা যায় বক্সিং থেকে অবসর নেওয়া স্থূলকায় লামোত্তাকে। সিনেমার প্রথমার্ধের দৃশ্যায়ন চার মাস সময় নিয়ে ৬০ পাউন্ড ওজন বাড়াতে হয়েছিলো ডি নিরোকে। আর এই কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ কিংবদন্তী এক চরিত্র আজ জেইক লামোত্তা।

মারলন ব্র্যান্ডো অভিনীত ‘দ্য গডফাদার’ সিনেমার দৃশ্য।

০১. ভিতো করলিওনি (মারলন ব্র্যান্ডো)- দ্য গডফাদার

ভিতো করলিওনি - হলিউডি সিনেমার গডফাদার। নকল চোয়াল ও ফোলা গাল নিয়ে আর ফিস ফিস করে কথা বলে মারলন ব্র্যান্ডো হলিউডের ইতিহাসের এই আইকনিক চরিত্রটি রূপায়ন করেছেন যা নির্মিত হয়েছিল বাস্তবের এক মাফিয়ার জীবনের ওপর ভিত্তি করে। অপরাধ জগতের এই সর্দারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মানুষটিকেও বের করে এনেছিলেন ব্রান্ডো; ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে মত্ত যে ব্যাক্তি পিতা হিসেবে নিজের দায়িত্ব নিয়েও সচেতন।