বক্স-অফিস বিশ্লেষক কোমাল নাহতা মনে করেন, দর্শকের চাহিদার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় নারী কিভাবে উপস্থাপিত হবে। তিনি বলেন, "গতানুগতিক যে কোনো সিনেমায় অভিনয়ের চেয়ে নায়ক-নায়িকার পোশাক, আচার আচরণ এবং সংলাপে ওপর নির্ভর করে সিনেমা নির্মাণ করতে হয় পরিচালককে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন নারীদের চরিত্রকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার অনেক সুযোগ এসেছে।”
নির্মাতা প্রহলাদ কাক্কারের মতে, মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই তৈরি হয় বেশীরভাগ হিন্দি সিনেমা। ফলে চিত্রনাট্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ঝুঁকি কেউ নিতে চান না।
আর তাই মূলধারার হিন্দি সিনেমায় কয়েকটি নির্দিষ্ট অবতারেই আবির্ভূত হন নারী।
অবলা নারী
‘ছেড়ে দে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না!’ এমন সংলাপ যুগ যুগ ধরে উচ্চারিত হচ্ছে নায়িকাদের মুখে।
খলনায়কের সামনে অসহায় নায়িকা, যে কোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে তার শ্লীলতাহানী - এ রকম দৃশ্যের শুরুতেই সিনেমা হলের ভেতরে বেজে উঠত শিষ, চলত হই হুল্লোড়। সত্তরের দশকের ভারতে এটি ছিল চিরচেনা দৃশ্য।
আজও সুন্দরী, লজ্জাবতী নায়িকাকে বাঁচাতে হাজির হন প্রবল পরাক্রমী নায়ক আর দর্শকের প্রশংসা কুড়ান।
ঘরোয়া মেয়ে
ঘরোয়া, পতিভক্ত স্ত্রী - যিনি শত নির্যাতন সয়েও বুক দিয়ে আগলে রাখেন ঘর-সংসার। যুগ যুগ ধরে হিন্দি সিনেমায় মা, ভাবী, বৌমা, স্ত্রীরা এমনই আদর্শ স্থাপন করে যাচ্ছেন।
অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা ‘কালিয়া’ সিনেমার কথাই ধরা যাক, আধুনিকা পারভিন ববি শাড়ি পড়ে লক্ষ্মী মেয়েটি সাজেন প্রেমিকের ভাবীকে খুশি করতে।
মানসিকতা আধুনিক হলেও তার বেশভূষা হবে ভারতীয় সংস্কৃতির অনুসারী। বিলেত ফেরত নায়কেরা তেমন মেয়েকেই ঘরণী করবেন, যেমনটা দেখা যায় ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ কিংবা ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমায়।
সাম্প্রতিক সময়েও একই ধরনের মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে সাইফ আলি খান অভিনীত ‘ককটেইল’-এ। ‘ব্যাড গার্ল’ দিপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে প্রেম করে অবশেষে ঘরোয়া নারী ডায়না পেন্টিকেই জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
মা
‘মেরে পাস মা হ্যায়’—শশি কাপুরের মুখে উচ্চারিত এই বিখ্যাত সংলাপ হিন্দি সিনেমাপ্রেমীদের অজানা নয়। ‘দিওয়ার’ সিনেমার এই একটি সংলাপই বলে দিতে পারে হিন্দি সিনেমায় মায়ের জনপ্রিয়তা কেমন। তবে মা হবেন সর্বংসহা এবং স্নেহশীলা, সন্তানই যার জীবনের সবকিছু, নিজের অস্তিত্ব বলে কিছু নেই।
কর্মজীবী ‘খারাপ’ মায়ের ভূমিকায় ‘কাভি আলবিদা না কেহনা’তে অভিনয় করেন প্রিতি জিনটা, কাজের চাপে যিনি সময় দিতে পারেন না পরিবারকে। ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’-এ অভিনেত্রী হওয়ার জন্য সন্তানকে ত্যাগ করা মনিষা কৈরালাকে ভালো চোখে দেখেন না দর্শক।
ব্যাড গার্ল
স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার সাহস দেখালে নারীরা সেলুলয়েডে হয়ে যান ‘ব্যাড গার্ল’ বা খারাপ মেয়ে। কিন্তু আখেরে তাদের পরিণতি কখোনো ভালো হয় না।
‘কাটি পাতাং’ সিনেমায় আশা পারেখের চরিত্রটির কথা ধরা যাক, বাবা-মার পছন্দের পাত্র নয় বরং নিজের প্রেমিককে বিয়ে করতে চাওয়া চরিত্রটিকে শেষ পর্য ন্ত বাধ্য মেয়ে হতেই হয়।
সাম্প্রতিক সময়ের সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘অ্যায়তরাজ’, ‘জিসম’ বা ‘ককটেইল’- এ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, বিপাশা বাসু ও দিপিকা পাড়ুকোন অভিনীত চরিত্রগুলোকে শেষ পর্য ন্ত মেনে নিতেই হয় যে ভুল পথে হাঁটছিলেন তারা।
আইটেম গার্ল/ খলনায়িকা
খলনায়কের কোলের উপর বসে তার সিগারেট জ্বালিয়ে দেয়া এবং নিজের শরীরী সৌন্দর্য দেখানোই ছিল একসময় ‘মোনা ডার্লিং’দের কাজ।
স্বল্পবসনা আর সিগারেট ও মদ হাতে নারীদের দেখলেই দর্শক বুঝে নিত তিনি একজন খলনায়িকা।
এতো গেল ষাটের দশকের কথা। সত্তর এবং আশির দশকে ক্যাবারে নাচ দেখানো খলনায়িকারা সিনেমায় আবির্ভূত হতে থাকেন যৌন আবেদনের প্রধান উৎস হিসেবে।
‘মেহেবুবা মেহেবুবা’, ‘মনিকা ও মাই ডার্লিং’, ‘হুসন কে লাখো রাং’ গানগুলো হেলেন এবং পদ্মা খান্নার মত শিল্পীদের এনে দিয়েছিল অন্যরকম জনপ্রিয়তা।
এই ধারা খানিকটা বদলে শুরু হয় আইটেম গান। উদ্ভব হয় রাখি সাওয়ান্ত, কাশ্মিরা শাহের মতো আইটেম গার্লদের। শুরুর দিকে এদের জনপ্রিয়তা থাকলেও পরবর্তীতে এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নেন প্রথম সারির নায়িকারা।
প্রতিশোধপরায়ণা নারী
আশির দশকের গোড়া থেকেই শুরু হয় পর্দায় প্রতিশোধপরায়ণা নারীদের আগমন। শ্রিদেবির ‘শেরনি’, রেখার ‘খুন ভারি মাং’, ডিম্পল কাপাডিয়ার ‘জাখমি আউরাত’-এর মত সিনেমাগুলো সব হারানো নারীর প্রতিশোধ নেওয়ার কাহিনি তুলে ধরে।
সাম্প্রতিক সময়ে সে ধারাকে ধরে রেখেছে ‘হেইট স্টোরি’ সিরিজ।