শিল্পকলায় যাত্রা উৎসব

‘অপশক্তির বিরুদ্ধে ঝলসে উঠুক সত্যের শাণিত কৃপাণ’– এই স্লোগান নিয়ে শিল্পকলায় চলছে যাত্রা উৎসব। যাত্রাদল দেশ অপেরার ২১ বছর পূর্তিতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। যাত্রাপালা প্রদর্শনের পাশাপাশি উৎসবে স্মরণ করা হচ্ছে একুশে পদকপ্রাপ্ত  কিংবদন্তী যাত্রাশিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাসকে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 09:29 AM
Updated : 16 Sept 2014, 09:29 AM

সোমবার শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, বিশ্ব আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, দেশ অপেরার স্বত্ত্বাধিকারী মিলন কান্তি দে।

অনুষ্ঠানে আসা যাত্রাশিল্পীরা অভিযোগ করেন, গ্রাম বাংলার বিনোদনের অন্যতম এই মাধ্যমের বিরুদ্ধে নানা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়ত। বিনোদনের সুস্থ মাধ্যমটিকে পুঁজি করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী অপসংস্কৃতির চর্চা করছে। এদের কারণে সুস্থ ধারার দলগুলোও হারিয়ে যেতে বসেছে।

এসব অভিযোগ স্বীকার করে সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস জানান, যাত্রাপালার নামে অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই সহ্য করবে না সরকার। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

বিশ্ব আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, “যাত্রা বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। প্রকৃত ও সৎ উদ্দেশ্যে গঠিত যাত্রাদল একটি অনগ্রসর সমাজে ভ্রাম্যমান বিদ্যালয়ের ভূমিকা পালন করতে পারে। শুদ্ধ, সৃজনশীল এবং অপসংস্কৃতিমুক্ত যাত্রাচর্চায় সকল যাত্রা মালিক, শিল্পীকে  একযোগে কাজ করতে হবে।” 

যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে শিল্পকলা একাডেমিও উদ্যোগী হয়েছে। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সারাদেশের ৬১টি যাত্রাদলকে নিবন্ধিত করেছেন তারা। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

উৎসবে নাট্যচর্চা ও যাত্রাপালায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান, পালাকার এমএ মজিদ, যাত্রা অভিনেত্রী কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে ‘অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক’ প্রদান করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমলেন্দু বিশ্বাসের জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে একক যাত্রাপালা ‘আমি অমলেন্দু বিশ্বাস’ মঞ্চস্থ করে দেশ অপেরা।  রচনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি এ পালায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন মিলন কান্তি দে।  

মঙ্গলবার  সন্ধ্যা সাতটায় শিল্পকলা একাডেমির  এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হবে যাত্রাপালা ‘মা-মাটি-মানুষ’। ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনা ও  এম আলীমের নির্দেশনায় পালাটি মঞ্চস্থ করবে আকাঙ্ক্ষা শিল্পীগোষ্ঠী।

১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে দেশ অপেরা। ২১ বছরের পথচলায় তারা মঞ্চস্থ করেছে ‘বিদ্রোহী নজরুল’, ‘স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ’, ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’, ‘আনারকলি’, ‘সতী করুণাময়ী’, ‘বাংলার মহানায়ক’,  ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ পালাগুলো। ২০১১ সাল থেকে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা ও পরিবেশ বিষয়ক গণসচেতনতামূলক যাত্রাপালা প্রদর্শন করছে।

পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে নাট্যাভিনয়ের মাধ্যমে অমলেন্দু বিশ্বাস অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যার ১৫। ১৯৬১ সালে তিনি যাত্রাপালায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮৭ সালে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত বিভিন্ন দলে ১৭৫টি যাত্রাপালায় অভিনয় করছেন।