‘গানেই বাঁচিয়ে রাখব ফিরোজা বেগমকে’

ফিরোজা বেগম চলে গেলেও তার গাওয়া নজরুলের গান অক্ষয় করে রাখার শপথ নিলেন তার স্নেহধন্য সংগীত শিল্পীরা।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2014, 06:16 PM
Updated : 11 Sept 2014, 06:16 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউটে ফিরোজা বেগমের স্মরণসভায় তারা এই প্রতিজ্ঞা করেন।

আর তার সহযাত্রী হতে নজরুল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন, ফিরোজা বেগমের রেকর্ড করা গানগুলো সংগ্রহ করে নজরুল সংগীত চর্চা হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে পৌঁছিয়ে দেবেন তারা। 

গত মঙ্গলবার মারা যান নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম। সবার শ্রদ্ধা নিয়ে বুধবার সমাহিত হন তিনি।

ফিরোজা বেগমের এই স্মরণসভায় ছিলেন সংগীতশিল্পী খালিদ হোসেন, সুধীন দাশ, ফাতেমা তুজ জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, শাহীন সামাদ। সালাউদ্দিন আহমেদ ও সেলিনা হোসেনও ছিলেন এই সভায়।

ফিরোজা বেগমকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন খালিদ হোসেন, তারই অংশবিশেষ সভায় পড়ে শোনান তিনি।

অনুজপ্রতীম খালিদ হোসেনের চোখে ফিরোজা বেগম ছিলেন একজন ‘সংগ্রামী কণ্ঠশিল্পী’, তার কণ্ঠের বিচিত্রতা যুগে যুগে শ্রোতাদের মোহিত করেছে।

পঞ্চাশের দশকে কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে নিজ উদ্যোগে গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে নজরুল সংগীত রেকর্ড করার ক্ষেত্রে ফিরোজা বেগমের ভূমিকা উঠে আসে এই শিল্পীর লেখায়।

“তারপরই সাধারণ শ্রোতাদের কাছে নজরুল সংগীত নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়। সঙ্গত কারণেই নজরুলের নাম উচ্চারিত হলে সেসঙ্গে ফিরোজা বেগমের মুখটিও ভেসে উঠে। আমার মনে হয়, এটাই তার শিল্প জীবনের বড় অর্জন।”

ফিরোজা বেগমের সাধনা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা করেন খালিদ হোসেন।

ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারণায় সুধীন দাশ বলেন, “নজরুলের গানের ভুবনে ফিরোজা বেগম ছিলেন অনন্য, অসাধারণ। তার গান শুনলে মনে হত, নজরুল যেন তার জন্যই গান লিখে গেছেন। তার মতো মহান শিল্পীর প্রয়াণে যে শূন্যতা তৈরি হল, তা কখনোই পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না।”

অসুস্থ ফিরোজা বেগমকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা ও শাহীন সামাদ। প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো দেখার স্মৃতি যেন ভুলতে পারছেন না তারা।

“শেষ জীবনে তিনি বেশ নিভৃতচারী ছিলেন। হয়ত অনেক অভিমান পুষে রেখেছিলেন তিনি। এখন ভীষণ দুঃখ আর আফসোস হচ্ছে, কেন শেষসময়ে তাকে আমরা এতটুকু সময় দিতে পারলাম না,” আক্ষেপ ফাতেমা তুজ জোহরার।

নিজের সংগীত জীবনের শুরুতেই ফিরোজা বেগমের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা। তার স্মৃতিতে যেন এখনও অম্লান ১৯৭৮ সালে বিটিভি ভবনের সেই দিনটি।

“মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে সবে গান করছি। ফিরোজা বেগমের গান প্রচুর শুনতাম। তার গান শুনে নজরুল ও তাকে কখনও আলাদা সত্ত্বা বলে মনে হত না। বিটিভিতে গাইতে এসে আমি তার দেখা পেলাম। কী অপূর্ব সুন্দর ছিলেন তিনি! আমার স্বপ্নের মানুষটি প্রথম দেখাতেই আমাকে ভীষণ আপন করে নিয়েছিলেন।”

শেষ সময়ে ফিরোজা বেগমের কাছে যেতে পারেননি বলে আফসোসের অন্ত নেই আরেক নজরুল সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিলের।

“তার নিভৃত দিনযাপনে আমরা যদি জোর করতাম, যদি জানতে চাইতাম নজরুলকে নিয়ে, তিনি কখনও আমাদের ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। তাকে পেলে আমরা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশকে কবি নজরুল রেকর্ডিংয়ের সময় শিল্পীদের কিভাবে নির্দেশনা দিতেন, সে গল্পটি শুনতে পারতাম। নজরুলের চিন্তার মতো করে নজরুল সংগীত উপস্থাপন করতে পারতাম।”