গ্লিটজ: আপনি অভিনয়ে আসলেন কিভাবে?
সুমন: একটা গানের মডেল হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার মিডিয়া জীবন। এরপর পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুল হঠাৎ করে একদিন জানায় তার দুটি বিজ্ঞাপনে কাজ করতে হবে। এরপর আরও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে থাকলাম। একসময় এসে অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিজ্ঞাপন, নাটকে অভিনয় করলাম। এরপর থেকে মোটামুটি নিয়মিত কাজ করছি।
গ্লিটজ: সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন বলে জানি। কীভাবে শুরু হলো?
সুমন: আমরা বন্ধুরা মিলে একটা ব্যান্ড করতাম। শুরুটা হয় নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে। সে সময় আমাদের ব্যান্ডের প্রচারণার জন্য একটা ব্যান্ড পরিচিতি লিখে পাঠানো হয় দৈনিক ভোরের কাগজে। আমার বন্ধু সাংবাদিক ওমর শরীফের মাধ্যমে সে লেখা গিয়ে পৌছায় সঞ্জীব চৌধুরীর হাতে। ভোরের কাগজের ফিচার বিভাগে তখন ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। তিনি আমার লেখা পড়ে নিয়মিত লিখতে বলেন। আমিও লেখা শুরু করলাম। আর সংবাদপত্রের অফিস সে এক মোহময় জায়গা। সেখানেই পরে থাকতাম সারাদিন।
গ্লিটজ: সঞ্জীবদাকে কেমন দেখেছেন?
সুমন: সঞ্জীব দাকে আমি পেয়েছিলাম একজন গুণী সম্পাদক হিসেবে। তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ঈর্ষণীয়। যে কোনও লেখার কাজে দেখেছি অসাধারণ প্রতিভাধর তিনি। অন্যান্য ক্ষেত্রে তার জ্ঞানের কথা বলাবাহুল্য। তবে গান নিয়ে অগাধ জ্ঞান ছিল তার। গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বা গুরুর কাছে গান শিখেছেন এমন যে কারও চাইতে তিনি বেশি জানতেন। সঞ্জীবদা কিন্তু ভীষণ অমায়িক মানুষ ছিলেন। দাদাকে গান গাইতে বললেই লজ্জায় নুইয়ে পড়তেন। অনেক অনুরোধের পর মাথা নিচু করে মৃদু গলায় গাইতেন। এদিকে আমরা কিন্তু অফিসের টেবিল চাপড়িয়ে তার সবগুলো গান মুখস্থ করে ফেলেছি এবং তার চর্চাও চলতো তার চেয়ে উঁচু গলায়। ওই সময়ে দেখতাম সঞ্জীবদার কাছে হালকা-পাতলা গড়নের একজন এসে বসে থাকতো। পরে তার সঙ্গেও পরিচয় হয়, তিনি আর কেউ নন। আমাদের বাপ্পা মজুমদার।
গ্লিটজ: ব্যান্ডে বেইজ বাজাতেন শুনেছি। এটা কি ব্যান্ড সংগীতের আরও দুই বেজিস্ট সুমনের সঙ্গে যুক্তি করে?
সুমন: এটা একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা। দুজনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে আমার। আমি তাদের দুজনকেই শ্রদ্ধা করি। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। খালেদ সুমনের ঝুলিতে রয়েছে দেশের প্রথম সারির প্রত্যেকটি ব্যান্ডে বাজানোর অভিজ্ঞতা। সুমন জামানও তার চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
গ্লিটজ: বন্ধুদের সঙ্গে আপনাকে হরহামেশাই আড্ডা দিতে, ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বন্ধুত্ব আপনার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।
সুমন: কিছুদিন আগে ফেইসবুক খুলে দেখলাম কেউ একজন মেসেজে লিখেছে— আমাকে তিনি চেনেন। তিনি আমার ছোটবেলার খেলার সাথী। আমি কৌতুহলবশত জানতে চাইলাম, আমাকে কেমন করে চেনেন? পরে উদ্ধার করলাম, তার সঙ্গে আামার শেষ দেখা হয়েছিল তিরিশ বছর আগে। তিনি আমার সরকারী কোয়ার্টারে থাকার সময়ের বন্ধু। আমি বড় হয়েছি ঢাকার শুক্রাবাদ সরকারী কোয়ার্টারে। সেখানে স্কুল জীবন শেষ হয়েছ। মূলত এই সময়ে যাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি তারাই রয়ে গেছে বন্ধুতালিকার শীর্ষে।
আমি খুব বন্ধু প্রিয় মানুষ। আমার কাছে সবকিছুর আগে প্রাধান্য পায় বন্ধুত্ব। একটা প্রবাদ আছে না— আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে জঙ্গল। আমার মনে হয়, জঙ্গলে যাওয়ার আগের পর্যায়ে আছি আমি। একটা ব্যাপার, বন্ধুত্ব করার চাইতে রক্ষা করাটা কিন্তু কঠিন। তবে আমি জানি বন্ধুত্ব কিভবে রক্ষা করতে হয়। যে কারণে আমার সঙ্গে সেই ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগটা এখনও রয়ে গেছে। এখনও তাদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া হয়। হুট করে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া হয়। নানা উপলক্ষে প্রচুর দাওয়াত পাই। সেসবে সময়মতো হাজিরাও দিই। আমার কাছে বন্ধুরা যেমন সবার আগে, বন্ধুরাও কিন্তু আমাকে সেভাবেই দেখে। আমার ছোটবেলার বন্ধু তালিকায় আছেন পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী। আমাদের কাছে তিনি বুলু নামে পরিচিত।
গ্লিটজ: বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বা বেড়াতে গিয়ে ভক্তদের সামনে পড়ে গেলে কেমন লাগে?
সুমন: ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, ছবি তোলা এসব সামলিয়ে নিতে পারি সহজেই। কিন্তু একটা সময় এসে অসহায়বোধ করি। যেমন-- কোনও একটা দোকানে গিয়ে এক কেজি জিলাপি নিলাম। ধরুন তার দোকানে সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকার খাবার আছে। তবু দোকানদার আমাকে দেখেই ওই এক কেজি জিলাপির দাম রাখবে না। কী করা যায় তখন?
গ্লিটজ: লেখালেখি করছেন, অভিনয় করছেন, চাকরিও করেন। আপনার কাছে কোন পেশা সবার আগে?
সুমন: অবশ্যই চাকরি। আমি অভিনয় করব, এটা যেমন পরিকল্পনা ছিল না, লেখালেখি করব তেমনও পরিকল্পনা ছিল না। ছাত্রাবস্থায় লেখালেখি করেছি শখের বশে, সংবাদপত্রের কাজ করতে করতে একসময় গান, বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছি। এরপর অভিনয়ও করছি। লেখালেখি করার সুবাদে আমার সঙ্গে অনেক শিল্পীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
একটা সময় অবশ্য অভিনয়ে বেশ মনোযোগ দিয়েছিলাম আমার মায়ের কারণে। সে সময় তার ক্যান্সার। আমার মা আমাকে টেলিভিশনে দেখতে পেলে খুব খুশি হতেন। তার আনন্দের জন্য আমি অভিনয়টা করেছি।
গ্লিটজ: চাকরি বনাম অভিনয় যুদ্ধ হয় নিজের মধ্যে?
সুমন: অভিনয় করতে গেলে অনেক সময়ই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়। একবার দুই নাটকের প্রস্তাব পেলাম। ইফতেখার আহমেদ ফাহমি ও রেদোয়ান রনি একই সময়ে ধারাবহিক নাটকে শুটিং করবে। তারা দুজনেই আমার বন্ধু পর্যায়ের। এখন কাকে না বলি আর কাকে হ্যাঁ বলি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রনির ‘হাউসফুল’ নাটকেই অভিনয় করলাম। চাকরির কারণে অভিনয়ের কাজটা করতে হয় ছুটির দিনগুলোতে। যে কারণে খুব বেশি কাজ করার সুযোগ আমার নেই। যে কারও প্রস্তাব পেলে আগে মিলিয়ে দেখি তার সঙ্গে আমার সিডিউলটা মিলছে কি না।
গ্লিটজ: আজকাল নাটকের সংলাপের উচ্চারণ ও ভাষা নিয়ে সমালোচনা শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন, ভাষার দূষণ ঘটছে নাটকের মাধ্যমে?
সুমন: ভাষা একটা চলমান বিষয়। কিন্তু তাই বলে ভাষার দূষণ ঘটানো ঠিক মনে করি না আমি। আবার একইসঙ্গে এও বলবো, নাটক, সিনেমায় আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ না। কারণ যে নাটক বা সিনেমার বিষয় যে সময়কে ধরে এগোয়, তার চরিত্রগুলো তো সেই সময়ের ভাষাতেই কথা বলবে। আর আমার অভিনীত নাটকের মাধ্যমে সেই দূষণ ঘটছে বলে মনে করি না।
গ্লিটজ: চিত্রনাট্য ছাড়া নাটকে অভিনয় করার বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
সুমন: আমি কোনটাতেই অসুবিধাবোধ করি না কিংবা কোনটাকেই খারাপ বা ভালো বিবেচনা করি না। এটা সম্পূর্ণ পরিচালকের ব্যাপার। আর পরিচালনার নানা মেথড থাকে, কেউ কেউ নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করে। আমার কাজ পরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিনয় করা। আমি তাই করি।
গ্লিটজ: বিয়ে করছেন কবে?
সুমন: আগে কিন্তু একবার বললাম, আমি কোনও কিছু পরিকল্পনা করে করি না। আর বিয়ে যেদিন হওয়ার কথা সেদিন হয়েই যাবে। এর জন্য কোনও কর্মতৎপরতা প্রয়োজন হবে না। কারও উদ্বেলিত বা উৎকণ্ঠিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
গ্লিটজ: অবসর সময় কী করতে পছন্দ করেন আপনি?
সুমন: বই পড়া ও গান শোনা আমার নিয়মিত কাজের মধ্যে দুটি। আমি নিয়ম করে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক পৃষ্ঠা হলেও বই পড়ি। গান শোনাও তেমন নিয়ম করেই হয়। সব ধরনের গান আর সব লেখকের বই পড়া হয়।
ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি/বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম