নিষিদ্ধ সাত হিন্দি সিনেমা  

কোন সিনেমাকে ঘিরে বিতর্ক মুম্বাই সিনেপাড়ায় নতুন নয়। আইনি ঝামেলাও পোহাতে হয় অনেক সিনেমাকে। কিন্তু বেশ কিছু সিনেমা রয়েছে যেগুলোর বিরুদ্ধে উঠেছে রাজনৈতিক বক্তব‍্য্য দেওয়ার অভিযোগ আর তাই হতে হয়েছে নিষিদ্ধ।   

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2014, 01:21 PM
Updated : 24 August 2014, 01:31 PM

সাম্প্রতিক এক উদাহারণ দিয়েই শুরু করা যাক। চলতি বছরই ভারতের সেন্সর বোর্ডে আটকে যায় একটি পাঞ্জাবী সিনেমা। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দুই হত্যাকারীকে নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি ভারতে নিষিদ্ধ হবার পর ১৪ মার্চ বেশ কয়েকটি দেশে মুক্তি পায়। এরপর সিনেমায় বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনেন নির্মাতারা। অবশেষে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পায় ‘কউম দে হিরে’। তবে মুক্তির ঠিক আগ মুহূর্তে দ্বিতীয়বারের মত নিষিদ্ধ হয় সিনেমাটি।

হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে আরও কয়েকটি বিতর্কিত সিনেমা রয়েছে যেগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সামাজিক কিংবা নৈতিক কোনো কারণে নয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে সিনেমাগুলো।

‘আন্ধি’ (১৯৭৫)

পলিটিকাল ড্রামা ‘আন্ধি’কে বলা হয় গুলজার পরিচালিত অন্যতম সেরা সিনেমা। একজন নারীর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে সুচিত্রা সেন অভিনীত সিনেমাটির মুক্তিতে বাধ সাধেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়ার পরপরই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় সিনেমাটি। কারণ ধারণা করা হচ্ছিল সিনেমাটি ইন্দিরা গান্ধী এবং তার স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত হয়েছে। 

১৯৭৭ সালে সরকার বদলের পর আবার মুক্তি পায় ‘আন্ধি’। 

‘কিসসা কুর্সি কা’ (১৯৭৭)

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিদ্রুপাত্মক বয়ানের দায়ে ‘কিসসা কুর্সি কা’ সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে কংগ্রেস সরকার। সিনেমাটিতে ইন্দিরা গান্ধী এবং তার ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর রাজনীতির সমালোচনা করা হয়েছিল। সিনেমাটির পোস্টার ও ফিল্ম পুড়িয়ে ফেলে রাজনৈতিক কর্মীরা। ঘটনাচক্রে, সিনেমাটির নির্মাতা অমৃত নাহাতা ছিলেন একজন সংসদ সদস্য।

বরাবরের মত সরকার বদলের পরপরই মুক্তি দেয়া হয় সিনেমাটি।

‘ফায়ার’ (১৯৯৬)

সমকালীন ভারতীয় সিনেমায় সমকামিতা গ্রহণযোগ্যতা পেলেও, নব্বইয়ের দশকে বিষয়টা সহজভাবে নেওয়া হতো না। দিপা মেহতা পরিচালিত ‘ফায়ার’কে ধরা হয় সমকামিতানির্ভর প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্র হিসেবে। সিনেমাটি কেবল দুই নারীর সম্পর্ককেই তুলে ধরেনি, সেই সঙ্গে ভারতীয় সমাজে নারীকে যে ক্রমাগত দমনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাও ফুটিয়ে তুলেছে।   

সিনেমাটি মুক্তির দিনেই হিন্দু চরমপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো সিনেমাহলে ভাংচুর চালায়। এরপর ‘ফায়ার’-এর প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়।  

অবাক করার মত ব্যাপার হল, ঠিক দুই বছর পর ভারতজুড়ে মুক্তি পায় ‘ফায়ার’, সেন্সরবোর্ডের কাঁচি চালানো ছাড়াই।  

‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ (২০০৫)

‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে ঘটে যাওয়া মুম্বাই বোমা হামলার কাহিনি নিয়ে। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও মুম্বাই হাইকোর্টে দায়ের করা এক মামলার কারণে দুই বছর পরে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’।

‘ওয়াটার’ (২০০৫)

লিসা রে এবং জন আব্রাহামকে নিয়ে ‘ওয়াটার’ নির্মাণ করে আবারও আলোচনায় আসেন দিপা মেহতা। ১৯৩৮ সালের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছিল ভারতের বেনারসের এক বিধবা আশ্রমকে নিয়ে। 

সিনেমাটির শুটিং চলাকালীনও হামলার শিকার হতে হয় কলাকুশলীদের। বেনারসে শুটিং সেট ধ্বংস করে দিয়েছিল হিন্দু চরমপন্থীরা। এক পর্যায়ে এতে হস্তক্ষেপ করে ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার, আর তখন শুটিং বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় নির্মাতাদের।

এরপর দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘ওয়াটার’।

‘মাই নেইম ইজ খান’ (২০১০)

নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছিল শাহরুখ খান অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমাটিকেও। তবে এবার সিনেমার কাহিনি নিয়ে নয়, বিতর্ক শুরু হয় শাহরুখের এক মন্তব্য নিয়ে। সে বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে মন্তব্য করায় চটে যায় হিন্দু চরমপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন শিব সেনা।

শিব সেনার প্রবল বিরোধিতার মধ্যেই মুক্তি পায় কারান জোহার পরিচালিত সিনেমাটি। বেশ কয়েকটি সিনেমাহলে হামলা চালানোর পর মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে দর্শকের নিরাপত্তা চান কারান। অবশেষে পাঁচ ব্যাটালিয়ন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয় এবং ৬৩টি হলে নির্বিঘ্নে চলে ‘মাই নেইম ইজ খান’-এর প্রদর্শনী। 

‘ফানা’ (২০০৬)

ইয়াশ রাজ ফিল্মসের এই সিনেমাটিও ফেঁসে গিয়েছিল নায়কের মন্তব্যের কারণে। সেবছর গুজরাটের সারদার সারোভার বাঁধ প্রকল্প নিয়ে করা আমির খানের মন্তব্যের পর বিতর্কের ঝড় ওঠে। 

আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলা হয় আমিরকে, যা করতে তিনি রাজি হননি। এমন অবস্থায় আসন্ন গণ্ডগোলের কথা ভেবে আগেই হাত তুলে নেন গুজরাটের কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের মালিক। তারা জানান, আমিরের সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের নিরাপত্তার কোনো রকম দায়িত্ব নেবে না হল কর্তৃপক্ষ। এমনকি ‘ফানা’ প্রদর্শন না করার কথাও বলেন কয়েকজন হল মালিক।

এরপর ব্যাপারটিতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে পিটিশন করেন প্রযোজক আদিত্য চোপড়া। গুজরাট সরকারের কাছে সিনেমাহলগুলোর নিরাপত্তা দাবী করে আবেদনও করেছিলেন তিনি। তবে সেই আবেদন গৃহীত হয়নি।