অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের ‘আত্মহত্যা’

যুক্তরাষ্ট্রের অস্কারজয়ী অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিউজ ডেস্ক>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2014, 03:18 AM
Updated : 12 August 2014, 08:22 AM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৬৩ বছর বয়সী এই অভিনয়শিল্পী আত্মহত্যা করেছেন বলে ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশের ধারণা।

‘গুড মর্নিং ভিয়েতনাম’ ও ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি পাওয়া রবিন উইলিয়ামস বেশ কিছুদিন ধরে মারাত্মক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এজেন্ট। 

গত কয়েক বছরে নিজের অ্যালকোহল ও মাদক ছাড়ার চেষ্টা নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে রসিকতা করেছেন রবিন উইলিয়ামস। গত জুলাই মাসে তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রেও ঘুরে আসতে হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার মেরিন কাউন্টি পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা এই অভিনেতার বাসায় ছুটে যান এবং সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।  

পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “শেরিফ অফিসের করোনার বিভাগের ধারণা, এটা শ্বাসরোধে আত্মহত্যার ঘটনা। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

মঙ্গলবার তার লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই অভিনেতার মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তার স্ত্রী সুজান স্নাইডার।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আজ আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি, আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে হারিয়েছি। আর বিশ্ব হারিয়েছে একজন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীকে, চমৎকার একজন মানুষকে।” 

১৯৫১ সালে শিকাগোতে জন্ম নেয়া রবিন উইলিয়ামসের অভিনয়ে হাতেখড়ি সেই স্কুল জীবনে, নাটকের ক্লাবে। পরে নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত জুলিয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি।

সেখানেই এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় নিজেকে একজন দক্ষ কমেডিয়ান হিসাবে গড়ে তুলতে থাকেন উইলিয়ামস।  

১৯৭০ এর দশকে টিভি শো মর্ক অ্যান্ড মিন্ডিতে এলিয়েন চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকদের কাছে রবিন উইলিয়ামস হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। মঞ্চে কমেডিয়ান হিসাবে দর্শকদের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন।

প্রায় চার দশকের ক্যারিয়ারে অ্যাওয়াকেনিংস, দ্য ফিশার কিং, পপাই, হুক, আলাদিন, জুমানজি, দ্য বার্ডকেইজ, নাইট অ্যাট মিউজিয়ামের মতো বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।

বহু ছবিতে দর্শকরা রবিন উইলিয়ামকে কমেডিয়ান হিসাবে দেখলেও ‘গুড উইল হান্টিং’ এ তাকে দেখা যায় একজন মনোবিদের ভূমিকায়। ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৯৭ সালে তিনি অস্কার পান।

১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া ডেড পোয়েটস সোসাইটিকে অনুপ্রেরণাদায়ী একটি কালজয়ী চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচনা করেন বোদ্ধারা। এই ছবিতে রবিন উইলিয়ামসকে দেখা যায় একজন সাহিত্যের শিক্ষকের ভূমিকায়, যিনি শিক্ষকতার প্রথাগত ধারণা ভেঙে ফেলে ছাত্রদের নতুন চোখে জীবন দেখতে শেখান।  

ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা থেকে ডেড পোয়েটস সোসাইটি ছবিতে ব্যবহৃত ‘ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন!’ সংলাপটি এখনো চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মুখে ঘুরে ফিরে আসে।

অস্কার ছাড়াও দুইবার এমি, চারবার গোল্ডেন গ্লোব, পাঁচবার গ্র্যামিসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন উইলিয়ামস।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, “উইলিয়ামস আমাদের মাঝে এসেছিলেন এলিয়েনের বেশে। কিন্তু যাবার আগে তিনি ছুঁয়ে দিয়ে গেছেন মানব চেতনার প্রতিটি বিন্দু।”    

উইলিয়ামসের দীর্ঘদিনের সহকর্মী কমেডিয়ান স্টিভ মার্টিন বলেন, “সে ছিল এক অনন্য প্রতিভা, চমৎকার অভিনয়সঙ্গী আর নিখাঁদ একজন মানুষ।”

টেলিভিশন টক শোর উপস্থাপক এলেন ডি জেনেরেস এক টুইটে বলেন, “আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। বহু মানুষকে বহু কিছু দিয়ে গেছে উইলিয়ামস। আমি দারুণ মর্মাহত।”

রবিন উইলিয়াম বিয়ে করেছেন তিনবার। আগের দুই স্ত্রীর ঘরে তার তিন সন্তান রয়েছে।