নোবেলের আগ্রহ মডেলিংয়েই

আদিল হোসাইন নোবেল-- বিজ্ঞাপনের চেনা এই মুখকে মাঝে মাঝে দেখা যায় নাটকে। টেলিভিশন নাটকে অবশ্য তিনি প্রায় ডুমুরের ফুলই বলা চলে। কারণ ১৯৯৩ সাল থেকে কর্পোরেট চাকরি নিয়ে ব্যস্ত তিনি। আর তারপর তার ভালোবাসার জায়গা মডেলিং। দীর্ঘদিন পর এক থ্রিলারধর্মী ধারাবাহিক নাটক ‘ফেইস’-এ  অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদিন পর ধারাবাহিকে অভিনয়, মডেলিং এবং টুকিটাকি আরও নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন চিন্তামন তুষারের সঙ্গে।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2014, 06:40 AM
Updated : 11 August 2014, 07:01 AM

গ্লিটজ: দীর্ঘদিন পর ধারাবাহিকে অভিনয় করলেন, নাটকে আপনার চরিত্রটি নিয়ে কিছু বলুন।

নোবেল: একজন গোয়েন্দাকে নিয়োগ করা নিয়ে গল্প। আমার অভিনীত চরিত্রই সেই গোয়েন্দা। যে বাংলাদেশের একজন গবেষককে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। এই গবেষক ব্যাপক পরিমাণে ধান উৎপাদনের একটা উপায় বের করেছেন। খবরটা জানাজানি হয়ে যায়। তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সরকার। গবেষককে দেশের বাইরে পাঠানো হয়, তাকে রক্ষার দায়িত্ব পড়ে আমার কাঁধে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা আমাকে তার কাছে যেতে দেয় না। আমাকে হত্যার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু আমি পালিয়ে আসি তাদের ডেরা থেকে এবং গবেষককেও বাঁচানোর চেষ্টা করি।

গ্লিটজ: নাটকটা কেমন লেগেছে?

নোবেল: আমি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করি না অনেকদিন। নাটকটা হঠাৎ করেই করছি। বিদেশে শুটিং করতে যেতে হবে শুনে শুটিং শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে বাদ দেওয়া চিন্তা করেছিলাম। পরে পরিচালক, প্রযোজক বললেন, ছুটি নিলেই হবে এবং আমার যাতায়াতের দায়িত্ব তারা নেবে। সময় স্বল্পতার কারণে আমি তেমনভাবে ইউনিটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারিনি। তবে স্ক্রিপ্ট পড়ে আমার মনে হয়েছে খুবই ভালো কিছু একটা হবে এই নাটকটি।

গ্লিটজ: নাটক নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

নোবেল: নাটকে আগ্রহ নেই তা নয়, সময় বের করতে পারি না। আমার অবস্থা হচ্ছে, একসঙ্গে দশটা নাটক স্টাডি করতে পারবো না, অভিনয়ও করতে পারবো না আমি। যখন অফিস বন্ধ থাকে কিংবা লম্বা ছুটি পাই, তখনই নাটকের কাজ হাতে নেই। তাই নাটক নিয়ে আমার জ্ঞান কম। আর নাটক খুব বেশি দেখাও হয় না। হঠাৎ একটা দুটা দেখা হয়। তবে হ্যাঁ, অনেক কাজ হয় এটা বুঝতে পারি। আর বেশি কাজ হওয়ার কারণে হয়তো সবার সব কাজ ভালো হয় না। আর আমি কাজ কম করি, লক্ষ্য রাখি যেনো একটু আলাদা কিছু হয়। আমি কাজ করলে আমার একদল দর্শক নাটকটা দেখে। ঈদ, ভ্যালেন্টাইনস ডে-- এরকম বিশেষ দিনে আমার নাটক প্রচারিত হয়। বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু যেন হয়, সেদিকে পুরোপুরি মনোযোগ থাকে আমার। তবে এও জানি, আমি একা চেষ্টা করলে তো হবে না, নির্মাতা যেভাবে চাচ্ছে তার সঙ্গেও সংগতি থাকতে হবে। কোনও শর্টকার্ট কিছু করলেই তো হবে না। যেমন-- মাহফুজ ‘হাউস হাজবেন্ড’ বানালো, তখনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম একটা ভালো কিছু হবে এই নাটকটা। এর আগে আমি আর মিম একটা নাটক করলাম ‘শেষের কবিতার পরের কবিতা’। নাটকটা ওই ঈদের সেরা নাটক। আমরা ছয়দিন শুটিং করি ওই নাটকের জন্য। এজন্যই একটা দুটা কাজ করি, যাতে ভালো কিছু হয়। 

গ্লিটজ: সময় স্বল্পতাই কি মডেলিংয়ে বেশি সময় দেওয়ার মূল কারণ?

নোবেল: মডেলিংয়ের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি তাই কাজও বেশি করা হয়। এখন আমার কাছে যদি একজন অভিনয় আরেকজন মডেলিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। আমি মডেলিংয়ের প্রস্তাবকারীকে নিয়ে আলাদা করে বসবো প্রথমে। হয় না, ফুটবল, ক্রিকেট দুই খেলাই পছন্দ। কিন্তু ফুটবল ভালো পারলে কি আমি ক্রিকেটের ব্যাট-বল নিয়ে মঠে নামবো নাকি?

গ্লিটজ: হালের মডেলিং জগতকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

নোবেল: ক্ষেত্রটা অনেক ব্যাপক হয়েছে, বড় হয়েছে আগের চেয়ে। কিন্তু তারপরেও আমাদের মার্কেট অনেক ছোট বা আমাদের প্রোডাক্ট অনেক কম মনে হয় আমার। যে কারণে যারা এসেছে তারা শুধু মডেলিং নিয়ে থাকতে পারছে না। সঙ্গে হয় মুভি, নয় নাটক করতে হয় তাদের। যে কারণে টোটাল প্রফেশনালিজম এখনও গড়ে ওঠেনি।

কাজ হোক বা না হোক মডেলরা একটা এজেন্সি বা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকবে-- এমন হয় না বিদেশে? এরকম হলে ছেলেপেলেরা কাজ করতে আরও বেশি আগ্রহী হবে। কিন্তু এখনও সেরকম কিছু গড়ে ওঠেনি আমাদের। 

আগে একটা কোম্পানির সঙ্গে কাজ হলে, ওই কোম্পানি একসঙ্গে অনেকগুলো প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলতো। এই জিনিসটা আরও বেশি হওয়ার বদলে এখন কমে গেছে। যার জন্য যারা মডেলিং করে, তারা শুধু মডেলিং নিয়ে থাকতে পারে না বা বলতে পারে না আমি শুধুই একজন মডেল।

মডেলিংয়ে প্রফেশন গড়তে একটা ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার হয়। মডেলদের ওই সাপোর্টটা থাকে না। যারাই আসে তারাই তাড়াহুড়ো করে নাটকে নামছে। অনেক হাউজ, অনেক নাটক। শুটিং হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু মডেলিংয়ের কাজ একটা করার পর পরেরটা কবে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। তার চেয়ে নাটক করছে সবাই, পারুক বা না পারুক অভিনয় শেখার চেষ্টা করা যায়। তাই সবাই এটাতেই ঝাপিয়ে পড়ে। 

বিশ বছর পরে এমন যদি হতো, মডেলদের জন্য আলাদা সেট-আপ গড়ে উঠেছে। সারা বছর তাদের কেউ চুক্তিবদ্ধ করে রাখছে। কাজ হোক বা না হোক তারা সম্মানি পাচ্ছে। আমরা দেখছি, বিদেশে মডেলদের নিয়ে নানা কাজ করে কোম্পানিগুলো। ব্র্যান্ড প্রমোশন, কর্মাশিয়াল, ব্র্যাঞ্চ ওপেন করে তাদের দিয়ে। এই ব্যাপারগুলো বাংলাদেশে কম হওয়ায় আমরা শুধু মডেল হয়ে থাকতে পারছি না। কিন্তু অনেক কাজ হচ্ছে, ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। কোন কোন অ্যাড রেকর্ড করে রেখে পরে চালু করে বাচ্চাকে খাওয়ায়, ইদানিং এমন কাজ কম হচ্ছে কেনো জানি না।

গ্লিটজ: শুধু মডেলিংয়ে থাকার জন্য কি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

নোবেল: একজন মডেলকে দিয়ে একটা অ্যাড করাল, রেমুনারেশন দিলো এরপর থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ বলে বিদায় করে দিলো। এরকম না করে যদি তার বা তাদের সঙ্গে একটা লম্বা সময়ের চুক্তি করা হয়। কী কী করতে হবে সেসব বোঝাপড়া করে একটা বাৎসরিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদেরকে কাজের মধ্যে রাখা হয়। তবেই দেখা যাবে মডেলদের বাইরের অন্য কাজ না করলেও চলবে। এরকম কিন্তু দেশের বাইরে হয়। বড় বড় অ্যাড এজেন্সি আছে, তারা নানা কাজ পাইয়ে দেয় মডেলদের। অনেক রকমের চ্যানেল হয়েছে, অনেক কাজ হচ্ছে। মডেলরা মডেলিংয়ে না থেকে নাটকে ঝাপিয়ে পড়ছে। চ্যানেলগুলোতেও অনরবত নাটক প্রচারিত হচ্ছে, পাশাপাশি হচ্ছে কিছু টক শো।  

গ্লিটজ: আপনি নিজেকে কিভাবে মডেলিংয়ের জগতে রাখলেন?

নোবেল: আমি স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই মডেলিং করছি, নেশা থেকে। কিন্তু ১৯৯৩ সাল থেকেই করপোরেট জব করছি। আমার সহকর্মীরা ছুটিতে অবসর সময় কাটায়, আমি সকাল সাতটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ করি। এটাকে অনেকে সহজ মনে করে, আমার কিন্তু খুব কষ্ট হয়। তবে পেশাজীবি হিসেবে আমার পক্ষে প্রতিদিন শুটিং করা সম্ভব না এবং আমি তা করবো না। মডেলিংয়ে আমি বেশি সম্পৃক্ত, আমার পরিচিতিও আছে এদিকে। নাটকেও আমাকে ডাকে অনেকে। হয়তো আমার জন্য উপযুক্ত চরিত্র পেলেই ডাকে। এই নাটকটাতেও আমি লাস্ট মোমেন্টে জানিয়েছিলাম কাজ করতে পারবো না। কারণ আমি লম্বা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে শুটিং করতে পারবো না। পরে প্রযোজক-পরিচালকের ভরসাতেই কাজ করলাম। আর তারা বলল, এই গল্পের চরিত্রটি নাকি আমি ছাড়া বেমানান।

গ্লিটজ: তাহলে মানানসই চরিত্র পেলেই শুধু নাটকে কাজ করছেন...

নোবেল: এরকম অনেক নাটকই হয়েছে, শুধু আমাকে নিয়েই গল্পটা। আমার জন্য এটা অনেক ভালো হয়েছে। আমি শুধু সেসব নাটকই করি, যেসব নাটক আমার সঙ্গে যায় বা যেসব নাটকে আমাকে নতুনভাবে দেখা যাবে। আমার গল্পটাও ভালো লেগেছে। আমার নিজের একটা প্রফেশন আছে। আমি এটাকে একটু সাইডে রেখে কাজ করতে পারি। অন্যরা ব্যাবসা বা অন্য কাজে না থেকে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেয়। রেগুলার কাজ করতে হয় তাদের। ওরা নানা ধরনের কাজ করে। এই দূরত্বটা আমার সঙ্গে থেকে যায়। আমি আমার আসল পেশাকে ঠিক রেখে মডেলিংয় করি এবং অভিনয়।

গ্লিটজ: নতুন একটা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন...

নোবেল: ‘আমব্রেলা’ নামে নতুন ব্র্যান্ডটির সঙ্গে জড়িত হয়েছি আমি। ব্র্যান্ডটির প্রচার-প্রসারের কাজ করব। পাশাপাশি ফ্যাশন সম্পর্কে আমার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, জ্ঞান তাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। লুবনান, ইনফিনিটির পরে অফিসিয়ালি আমি কোথাও কিছুতে সেইভাবে যুক্ত হতে পারছি না। কিন্তু আমব্রেলার উদ্যোক্তারা আমার খুব ঘনিষ্ঠ।

গ্লিটজ: ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে দেখতে পাওয়া যাবে কি?

নোবেল: ইদানিং লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের লোকজন বেশ ফ্যাশনসচেতন। কম টাকায় ফ্যাশনেবল কাপড়চোপড় তারা পড়ে বা চেনে। বিষয়টা আমার ভালো লাগে। এরকম জায়গায় আমি যদি কিছু করতে পারি, কেন করব না। সেটা তো এখন সম্ভব না, এখন চাকরিতে পুরো সময় দিতে হচ্ছে। পরে যদি সময় করতে পারি তবে হবে।

গ্লিটজ: সিনেমার প্রতি কী একেবারেই আগ্রহ নেই?

নোবেল: না, এটা আমি অফিসিয়ালি জানিয়েছি। আমাকে আগেও অনেক ডেকেছে। এমনকি বাসায় এসে মায়ের কাছেও ধর্ণা দিয়েছেন অনেকে। তখনও আমি বলেছি অন্য কিছু না, আমার ইচ্ছা নেই সিনেমায় অভিনয় করার।

গ্লিটজ: যদি কখনও ইচ্ছা হয়, তবে কেমন সিনেমায় দেখা যাবে আপনাকে?

নোবেল: যদি ইচ্ছা হয়, তখনই সেটা জানা যাবে।

গ্লিটজ: কোন ধরনের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন আপনি?

নোবেল: সিনেমায় শিক্ষনীয় কিছু থাকতে হবে, কিছু একটা পাওয়া যাবে এবং সেটা থেকে অবশ্যই আনন্দ পাই যেন।

গ্লিটজ: পরবর্তীতে কোন কোন কাজে দেখা যাবে আপনাকে?

নোবেল: যেহেতু রোজায় কোন কাজ করতে পারিনি। বেশ কয়েকটা কাজ হাতে রয়েছে, তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দুটা কাজ করতে পারি। একটার কথা বলতে পারি, কৌশিক শংকর দাসের নাটক। আমি স্ক্রিপ্ট পেয়েছি, আর কে থাকছে তা বলতে পারছি না। নতুন একটা প্রোডাক্টের মডেল হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ইনফিনিটি