২১ এপ্রিল ইতালির এক মনোরম পরিবেশে সূচনা হল যে দাম্পত্য জীবনের, তার পেছনে রয়েছে ছয় বছরের ইতিহাস। যা অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই।
অতীতের কিছু কথা
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই রানির নাম জুড়েছে জনপ্রিয় সব নায়কের সঙ্গে। রানির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনের শিকার হয়েছেন আমির খান থেকে শুরু করে গোবিন্দ, এমনকি অভিষেক বচ্চনও।
রানির কথিত প্রেমিকদের তালিকায় প্রথম যার নাম আসে, তিনি হলেন আমির খান। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘গুলাম’ ছিল রানির জন্য বলিউডের টিকেট, যেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন আমিরের সঙ্গে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, ঐ সময়ে সাবেক স্ত্রী রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন আমির। আর তখনই ওয়েবসাইট গ্ল্যামশ্যামকে রানি বলে বসেন, আমিরের প্রেমে পড়েছেন তিনি।
এরপর মিডডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রানি বলেছিলেন, “আমির হলেন এমন একজন বন্ধু, যাকে রাত তিনটার সময় ফোন করেও সাহায্য চাইতে পারবেন তিনি।”
অবশ্য এই বন্ধুত্ব স্রেফ বন্ধুত্বই রয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।
২০০০ সালে ‘হাদ কারদি আপনে’ সিনেমার সেটে গোবিন্দর সঙ্গে পরিচয় হয় রানির। নিজের বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের জন্য বরাবরই পরিচিত রানি খুব সহজেই গোবিন্দর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাদের এই বাড়াবাড়ি ঘনিষ্ঠতা যেমন সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়ায়নি, তেমনি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে গোবিন্দর দাম্পত্য জীবনেও।
ওয়েবসাইট মাসালা ডটকম জানায়, রানির বাড়িতে একদিন রাতের পোশাক পরা অবস্থায় গোবিন্দকে দেখেছেন এক সাংবাদিক। জানা যায়, রানিকে নিয়মিত দামি অলংকার, পোশাক এবং গাড়ি উপহার দিতেন গোবিন্দ। অবশেষে এক পর্যায়ে গোবিন্দর বাড়ি ছেড়ে চলে যান তার স্ত্রী।
কিন্তু ঐ সময়ে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ কিংবা রানিকে বিয়ে করার মতো অবস্থায় ছিলেন না গোবিন্দ, তাই প্রেমের ইতি টানেন তিনি। এরপর থেকে রানির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছেন এই অভিনেতা। নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে কোনোদিন মুখ খোলেননি তারা।
জুনিয়র বচ্চন অভিষেকের সঙ্গে রানির বন্ধুত্ব তখন বেশ ঘনিষ্ঠ, আর এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশের পর গুঞ্জনের আগুনে হাওয়া লাগতে দেরি হয়নি একটুও। একসঙ্গে ‘ইউভা’, ‘বান্টি আউর বাবলি’ এবং ‘কাভি আলবিদা না ক্যাহনা’র মতো ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয়ের পর জুটি হিসেবে ভালোই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন তারা।
এমনকি পুত্রবধূ হিসেবে রানিকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে দেখেছিলেন অভিষেকের মা জয়া বচ্চন। কিন্তু পরবর্তীতে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অভিষেকের বিয়ের পর রানির সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় বচ্চন পরিবারের।
আদিত্য চোপড়া ১৮ বছর বয়স থেকে বাবা ইয়াশ চোপড়ার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। পুরোদস্তুর নির্মাতা এবং চিত্রনাট্যকার হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার মাধ্যমে।
৪২ বছর বয়সী আদিত্য মূলত প্রযোজক হিসেবেই কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়। চিত্রনাট্য লিখেছেন নিয়মিত, যার মধ্যে রয়েছে ‘দিল তো পাগাল হ্যায়’, ‘মোহাব্বাতে’, ‘ভির-জারা’, ‘বান্টি আউর বাবলি’র মতো সিনেমা।
বাবা ইয়াশ চোপড়া মারা যাওয়ার পর ইয়াশ রাজ ফিল্মসের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন আদিত্য। ধারণা করা হয়, ‘বান্টি আউর বাবলি’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় রানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন তিনি।
চোপড়া পরিবারের সঙ্গে রানির যোগাযোগ মোটেও নতুন নয়। রানির ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সফল সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ইয়াশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারেই।
প্রয়াত নির্মাতা ইয়াশ চোপড়া, যার নির্দেশনায় কাজ করার স্বপ্ন দেখেন বলিউডের শিল্পীরা, তার সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন রানি। এমনকি রানির ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ধার্মা প্রোডাকশনসের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছিল ইয়াশ রাজ প্রোডাকশনস।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, রানির সঙ্গে আদিত্যর প্রেমকে শুরুতে মোটেও সহজভাবে নেয়নি চোপড়া পরিবার। বিশেষ করে আদিত্যর মা, পামেলা চোপড়া অনেকটাই বেঁকে বসেছিলেন।
অবশেষে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর পর ২০০৯ সালে পায়েলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় আদিত্যর, রানির সঙ্গে পাকাপোক্ত হয় সম্পর্ক। এরই মধ্যে বিগত কয়েক বছরে হবু শ্বশুর এবং শাশুড়ির মন জয় করে ফেলেন রানি।
এরপর থেকে চোপড়া পরিবারের যে কোনো অনুষ্ঠানে নিয়মিত দেখা গেছে রানির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। তবে কখনও নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ খোলেননি এই জুটি।
রানির স্বীকারোক্তি
২০১২ সালে ওয়েবসাইট আইডিভার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রানি বলেন, “আমি অস্বীকার করব না যে আমি প্রেম করছি, তবে কার সঙ্গে করছি তা আমি বলতে চাই না। কারণ আমি যদি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলা শুরু করি, তবে আমার সঙ্গীর জীবনেও এর প্রভাব পড়বে।”
অবশ্য নিজেদের প্রেম নিয়ে নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন রানি-আদিত্য। বিশেষ করে ২০১২ সালের পর থেকে তাদের বিয়ে নিয়ে চলেছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
ওদিকে লোকচক্ষুর আড়ালে ঠিকই বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এই জুটি। ধারণা করা হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে বাগদান করেছেন রানি-আদিত্য।
হিন্দুস্থান টাইমসের খবর অনুযায়ী, এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে রানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেন আদিত্য, আর তখনই রাজি হয়ে যান রানি। এরপর রানির আঙুলে বড় হীরার আংটি সহজেই ধরা পড়েছে পাপারাজ্জির ক্যামেরায়।
বিয়ের গুঞ্জন
চলতি বছরের শুরুতে গুঞ্জন উঠেছিল, ভালোবাসা দিবসে বিয়ের পর্ব সারবেন রানি-আদিত্য। ভারতের উদয়পুরের রাজবাড়ি উমেইদ ভবনে নাকি বসবে তাদের বিয়ের আসর।
কিন্তু এই কথা গুঞ্জনই থেকে যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও সম্প্রতি নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে তেমন একটা লুকোছাপা করেননি রানি-আদিত্য। ২০১৩ সালে চোপড়া পরিবারের বাড়ির আঙিনায় দিওয়ালি উৎসব পালন করতে দেখা গেছে রানিকে। এমনকি আদিত্যকে মিষ্টি খাইয়ে দেওয়ার সময়ও ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন তিনি।
গুঞ্জন ওঠে, গত দুবছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছেন এই জুটি। টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, জুহুতে অবস্থিত রানির বাংলো থেকে প্রায়ই বের হতে দেখা গেছে আদিত্যকে।
সম্প্রতি রানির ৩৬তম জন্মদিনে সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করেছিলেন আদিত্য। সেইসঙ্গে হবু স্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন এক বিলাসবহুল গাড়ি।
২১ এপ্রিল ইতালির এক গ্রামে ঘরোয়া পরিবেশে গাঁটছড়া বাঁধলেন রানি-আদিত্য। সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে বেশ গোপনীয়তার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বর-কনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয় এবং বন্ধু।
তবে রানি জানিয়েছিলেন, যদি কখনও তার বিয়ে হয়, তবে ভক্তদের সঙ্গে সেই আনন্দঘন মুহূর্ত অবশ্যই ভাগ করে নেবেন তিনি। রানি তার কথা রেখেছেন। ইতালি থেকে ফিরেই এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন নিজের বিয়ের কথা।
রানির ভাষ্যে, রূপকথার গল্পে বিশ্বাস করেন তিনি। কলেজপড়ুয়া এক মেয়ে, পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য অনেকটা হঠাৎ করেই এসে পড়েছিলেন বলিউডে। সময়ের সঙ্গে নিজের জীবনকে রূপকথার গল্পের মতোই সাজাতে পেরেছেন রানি।
জীবনের এই গল্পে এবার রানি-আদিত্য প্রবেশ করেছেন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে। নবদম্পতি মিস্টার এবং মিসেস চোপড়াকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেনি বলিউডবাসী। গুণী দুই শিল্পী দম্পতির নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন অনেকেই।