তারকাদের নববর্ষ

পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনে দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মেতে ওঠেন তারকারা। কেমন করে তারা নববর্ষ পালন করতেন অতীতে সেই স্মৃতিচারণ করলেন গ্লিটজের কাছে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2014, 11:10 AM
Updated : 11 April 2014, 11:10 AM

‘বিচিত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম’

আবুল হায়াত

আমার ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ ভীষণ মজার ছিল। পহেলা বৈশাখ এলে বন্ধুরা মিলে ‘বিচিত্রা’ অনুষ্ঠান করতাম। সে অনুষ্ঠানে চৌকির উপর মঞ্চ বানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতাম। আমি অভিনয় করতাম। আমাদের সে প্রোগ্রামে দর্শকের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না।

তারপর হালখাতা অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখের মেলাতে বন্ধুরা মিলে কত মজা করতাম। সেসব দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে পড়ে।

ঢাকায় থিতু হওয়ার পর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ধরন পাল্টে গেল। রমনা বটমূলের আয়োজনে নিয়মিত যেতাম। সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হত। তাদের সঙ্গে আড্ডা, গান আর নানা আয়োজনে সকাল গড়িয়ে দুপুর হত। তারপর ঘরে ফিরতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি কেমন ঘরকুনো হয়ে উঠলাম।

ওদিকে বিপাশা, নাতাশাদের নিয়ে মেলায় গেলে আরেক গোল বাঁধত। দর্শক মেলা রেখে আমাদের সঙ্গে ফটোসেশন শুরু করে দিত। রমনাতে এখন এত মানুষের ভিড়! ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারি না।

এবার ঘরে বেশ জম্পেশ আয়োজন করা হয়েছে। আমার স্ত্রী তার নাতিপুতিদের সঙ্গে মিলে কী সব জানি করছে। আমাকে নাকি বলতে মানা। বিপাশা-নাতাশারা সপরিবারে আসবে। তাদের সঙ্গে গল্প, আড্ডা আর গানে দিনটি কাটিয়ে দিব।

‘আনন্দের ছবিটা পাল্টে গেছে’

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

আমার শৈশব কেটেছে সাতক্ষীরায়। ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমাদের বাড়িতে আনন্দের ধুম পড়ত। পহেলা বৈশাখের আগের দিন মানে চৈত্র সংক্রান্তিতে বাড়ির পাশের শিবমন্দিরের সামনে চড়ক পূজা হত। চড়ক পূজা উপলক্ষে মেলা বসত। এ পূজা উপলক্ষে গাজন গানের আসর বসত। সে আসর উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা আসতেন। আমরা চোখ ছানাবড়া করে তাদের নানা কর্মকাণ্ড দেখতাম। চোখের পলকেই কেমন করে যেন দিনটা চলে যেত।

পরদিন পহেলা বৈশাখের মেলায় কে সবার আগে যাবে, এ নিয়ে অলিখিত একটা প্রতিযোগিতা ছিল। কে কী কিনে আনল, সেটার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল তুমুল।

ঢাকায় আসার পর চারুকলার নববর্ষের শোভাযাত্রায় প্রতিবার যেতাম। ফেস্টুন, মাস্কে সেজে মেলায় যেতাম। মনে পড়ে এস এম সুলতান, আহমেদ ছফা, মামুনুর রশীদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের নামি মানুষরা সে মেলায় আসতেন। সবার সঙ্গে কত আনন্দ করেছি।

এখন আনন্দের ছবিটা পাল্টে গেছে। উৎসব হয়ত হয়, কিন্তু সেই আনন্দ আর খুঁজে পাই না।

‘পহেলা বৈশাখে রিক্সা ট্যুরে বের হতাম’

ফাহমিদা নবী

পহেলা বৈশাখের আগে নানারকম পরিকল্পনা করতাম আমরা। আমি, সোমা (সামিনা চৌধুরী), পঞ্চম আর অন্তরা সবাই মিলে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রিক্সা করে রমনা যেতাম। খুব সকালে আম্মা সবাইকে সাজিয়ে দিতেন। আমাদের দলের নেতৃত্ব দিতেন খালারা। রমনা গিয়ে দেখি এলাহী কাণ্ড! বাবার সব সহকর্মীরা সেখানে হাজির। তারা গান করবেন। তাদের গানগুলো তো আমাদের ঠোঁটস্থ থাকত। আমরা তাদের সঙ্গে গলা মেলাতাম। ফেরার পথে আমি নাগরদোলা চড়ব বলে বায়না করতাম। এখনও মেলায় গেলে নাগরদোলা চড়ি।

এখন মেলায় যাবার সুযোগ নেই। নানা প্রোগ্রামে যেতে হয়। নানা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হয়।

‘সারাদিন নাচের প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম’

আঁচল আঁখি

ছোটবেলায় আমি খুলনায় থাকতাম। নাচের ছাত্রী বলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নাচের প্রোগ্রাম থাকত সারাবেলা। মেলায় যাব কি সারাদিন আমাকে এ স্টেজ থেকে ও স্টেজে নেচে বেড়াতে হত। তার আগে প্রস্তুতিরও ব্যাপার ছিল। আমার বন্ধুরা আমার পারফরমেন্স দেখতে আসত। প্রোগ্রাম শেষ হলে সদলবলে আমার বাসায় হামলে পড়ত সবাই। বন্ধুদের নিয়ে কত মজা হত।

এখন আমি সিনেমার অভিনেত্রী। রমনা বটমূলে গেলে লোকজন মেলা রেখে আমাকে ঘিরে ধরবে। খুব ইচ্ছা করে যেতে। কিন্তু আমি নিরুপায়।