জীবন থেকে শিখতে পছন্দ করি: আতাউর রহমান

এ দেশের মঞ্চ নাটকে আতাউর রহমান একটি সুপরিচিত নাম। নির্দেশক, নাট্যকার, অভিনেতা আতাউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য একুশে পদকসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তার নির্দেশিত নাটক বিদেশেও মঞ্চস্থ হয়েছে বহুবার। সর্বাধিক মঞ্চনাটক নির্দেশনার রেকর্ডও তার ঝুলিতে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আতাউর রহমান গ্লিটজকে জানালেন মঞ্চনাটক নিয়ে তার ভাবনার কথা।

মলয় গাঙ্গুলীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2013, 11:01 AM
Updated : 4 Dec 2013, 11:01 AM

গ্লিটজ: আপনার নাট্যপ্রীতির সূচনা কবে এবং কীভাবে?

আতাউর: আমি জন্মলগ্ন থেকে মাতৃকুলের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমার প্রিয় মানুষ ছিলেন নানা, যার কাছ থেকে আমি স্পষ্টবাদিতা ও জীবনকে উপভোগ করার শিক্ষা পেয়েছি। জুলে ভার্নের ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ বইটি নানাবাড়িতেই পড়ি। নানাবাড়িতে পরিচয় ঘটে রবীন্দ্রনাথের কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, শরৎ গ্রন্থাবলি, বঙ্কিম গ্রন্থাবলির সঙ্গে।

আমার মা, খালা, খালাতো ভাইবোনেরা সংস্কৃতিমনা ছিলেন। বাবা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ ছিলেন। বাবার সারল্য ও নাট্যপ্রীতি এবং মায়ের কাছে বিদ্যালয়ের বাইরের বই পড়ার শিক্ষা পাই। এভাবেই শৈশবে নাট্যপ্রীতি জন্মে।

গ্লিটজ: আপনার নাট্যচর্চা কখন শুরু হয়?

আতাউর: আমার আসল নাট্যচর্চা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। যদিও সংস্কৃতির বীজ হৃদয়ে ছোটবেলাতেই বুনেছিলাম। সে সময় বন্ধু জিয়া হায়দার আমেরিকার ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার থেকে পাস করে এসেছেন। তার সঙ্গে মিলে ১৯৬৮ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করি। প্রয়াত ফজলে লোহানীর বাসায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই দল।

গ্লিটজ: আপনার প্রথম নির্দেশিত নাটক কোনটি?

আতাউর: আমরা পছন্দমতো মৌলিক নাটক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ১৯৭২ সালে আমার নির্দেশনায় প্রথম মঞ্চস্থ হয় মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ”। এ পর্যন্ত আমি তেত্রিশটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছি।

গ্লিটজ: ঐ নাটকে কারা অভিনয় করেছিলেন?

আতাউর: ওই নাটকে অভিনয় করছিলেন লাকি ইনাম, আবুল হায়াত, এনামুল হক, আলী যাকের, ফখরুল ইসলাম। আলোক নির্দেশনা দিয়েছিলেন বাদল রহমান।

গ্লিটজ: বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চনাটকের নির্দেশক হিসেবে নিজেকে কতটুক সার্থক মনে করেন?

আতাউর: সব নাটক ভালো হয়, এমনটা নয়। জীবনে অনেকেই আমার প্রশংসা করেছেন। প্রখ্যাত নাট্য সমালোচক ধরণী ঘোষ ‘ঈর্ষা’ নাটক দেখে বলেন, “নাসির উদ্দিন শাহর চেয়ে ওর কল্পনা শক্তি অনেক বেশি এবং স্যামুয়েল বেকেটের ভুলটি আতাউর রহমান বুঝেছেন।”

‘জ্বরের ঘোরে তরাজু কেঁপে যায়’ নামে একটি বই উৎসর্গ করেন ভারতীয় লেখক অলকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সৈয়দ শামসুল হক আমাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নাট্যনির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

গ্লিটজ: মানসম্পন্ন শিল্পের ব্যাখ্যা কীভাবে করেন?

আতাউর: বড়শিল্প চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে না। বড়শিল্প অন্তরের তন্ত্রীতে আঘাত করে, অনুরণন তোলে, ঝংকার তোলে। আমার কাছে খোলাখুলি কোনো কাজকে বড়শিল্প মনে হয় না।

গ্লিটজ: আপনার জীবনে কারও বা কোনোকিছুর প্রভাব আছে কী?

আতাউর: আমি জীবন থেকে শিখতেই পছন্দ করি। তবে জীবনে দুটি বই প্রভাব বিস্তার করেছে ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ এবং ‘জোরবা দ্য গ্রিক’।

গ্লিটজ: অবসরে কী করেন বা কী করতে ভালো লাগে?

আতাউর: অবসরে আমি বেড়াতে ভালোবাসি। প্রচুর দেশ ঘুরেছি। সিরিয়া, রাশিয়া, মিশর, জাপান, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনেজুয়েলা, কোরিয়া, জার্মানি, গ্রিস। জার্মানিতে ঘুরতে যেতে বেশি পছন্দ করি। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেশি ভালো লাগে। আমি প্রচুর পড়ি। জানার আগ্রহ আমার সবসময়ই খুব বেশি। বিজ্ঞানের অজানা তথ্য জানতে বিপুল আগ্রহ আমার। আমার ভালো লাগে। আমি মজা পাই। গানও শোনা হয়।

গ্লিটজ: কার গান শুনতে পছন্দ করেন?

আতাউর: রবীন্দ্রনাথের গানের আমি বিশেষ অনুরাগী। ১৯০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড হয়েছে তার একটি বড় সংগ্রহ আছে আমার কাছে।

গ্লিটজ: শুধু কি রবীন্দ্রসংগীত শোনেন?

আতাউর: না আমি ব্যান্ডসংগীতও শুনি। কারণ, আমি জানি আমার ছেলে ব্যান্ডসংগীত শোনে। আমি কেন তার সামনে বোকা বনে থাকব। আমাকে আমার ছেলের ভালো লাগাটাও জানতে হবে। বর্তমানের সবধরনের গান শুনি।

গ্লিটজ: কেমন জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন?

আতাউরঃ আমি যেন সৎ জীবনযাপন করতে পারি, আমি যেন ক্রোধ দমিয়ে রাখতে পারি। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার প্রতি আমার খুব আগ্রহ কখনও ছিল না। মূলত বাবার জোরাজুরিতেই পড়াশোনা করেছি। বাবাকে এক সময় বলি, লেইট মি পুওরার বাট হ্যাপিয়ার।

আমি সবার সঙ্গে মিশতে চাই। উপভোগ করতে চাই। খুব সাধারণভাবে সবার সঙ্গে খেতে, হইচই করতে, আড্ডা দিতে ভালো লাগে।

গ্লিটজ: ভবিষ্যতে কী করার ইচ্ছে?

আতাউর: এখনও আমার হাতে দু-তিনটি নাটক আছে। আর আমার এই বুড়ো বয়সে সাধ হয়েছে একটি নাটকে অভিনয় করার। অনেক কষ্ট করে ইংল্যান্ড থেকে একটি নাটকের বই আমি আনিয়েছি। সেই নাটকে অভিনয় করব।