‘ডেইজি’র বাংলায়ন: ‘ফুল এ্যান্ড ফাইনাল’

এবার ঈদে এক রকম একচেটিয়া ব্যবসা করেছে ‘ফুল এ্যান্ড ফাইনাল’। অনিবার্য কারণে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চলচ্চিত্র ‘অগ্নি’ মুক্তি না পাওয়া যদিও এর কারণ, সিনেমাটির আকর্ষণের জায়গাগুলো তবু অস্বীকার করা যায় না। একে তো সিনেমার নায়ক শাকিব খান, তার উপর ‘দেহরক্ষী’র পর আবার পর্দায় দেখা গেল ববিকে। আর পরিচালক মালেক আফসারীও অভিজ্ঞ; তার হাত দিয়ে এর আগেও অসংখ্য ব্যবসা-সফল চলচ্চিত্র পাওয়া গেছে। সুতরাং, প্রথম সপ্তাহে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেখলেও, ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’কে নেড়েচেড়ে দেখাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। পরে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে ‘কী প্রেম দেখাইলা’ ও ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’।

নাবীল অনুসূর্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2013, 03:16 AM
Updated : 31 Oct 2013, 03:16 AM

সিনেমাটির টাইটেল অংশটি বেশ; শুধু তাই না, টাইটেলের আগে ভূমিকার মতো কাহিনির একরকম সূত্রও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে শাকিবের ইন্ট্রো সিনও মারমার কাটকাট ধরনের। তারপর পাহাড়ি নদীতে ট্রলারে চড়ে যেতে থাকা শাকিবকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে টাইটেল দেখানোটা ভালো হয়েছে। টাইটেল অ্যানিমেশনও ভালো। তবে টাইটেলে বানান ভুল একটু বেশি হয়ে গেছে; সম্ভবত বানান ভুল করাটাই এখন বাংলা সিনেমার নতুন রীতি; সব সিনেমার টাইটেলেই প্রচুর বানান ভুল থাকছে।

‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’-এর কাহিনি সম্পর্কে একটি বাক্য বললেই ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়ে যায়-- ‘ডেইজি’র বাংলায়ন। এখন কাহিনির ‘ফুল’ আলোচনায় বিবেচ্য, ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় এই কোরিয়ান সিনেমার কাহিনির বাংলায়ন কতটা আকর্ষণীয় রাখা গেছে, এবং কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।

কাহিনি যে সম্পূর্ণই ‘ডেইজি’র অনুগামী, তা নয়; তবে “প্রায় সম্পূর্ণ অনুগামী” বললেও ভুল হয় না। কেবল কাহিনির লেজটুকু পাল্টে দেওয়া হয়েছে, আর তা হয়তো দর্শক বিবেচনায়। কোরিয়ানরা মেলোড্রামার ভক্ত হলেও, তারা ট্র্যাজিক ছবি দেখে কাঁদতে খুব বেশি অপছন্দ করে-- এমন বাক্য সব কোরিয়ান মেলোড্রামা সিনেমা সমর্থন করে না। কিন্তু আমরা এখনও সিনেমার শেষে কেবল নায়ক-নায়িকার মিলনই প্রত্যাশা করি। তার উপর নায়ক শাকিব খান শেষ পর্যন্ত নায়িকাকে না পেলে তার ভক্তকুলও সন্তুষ্ট হবে কিনা, তাও চিন্তার বিষয়। ফলে বিয়োগাত্মক সিনেমা হয়ে গেছে মিলনাত্মক। সব মিলিয়ে কাহিনি নষ্ট না করে, যতটা কম পরিবর্তন করে কাহিনিটির বাংলায়ন করা সম্ভব, চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু তা করেছেন। আর সে জন্য কাহিনির মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন করলেও, সেসব পরিবর্তনের প্রায় কোনোটিই অকস্মাৎ করেননি; প্রায় সব ক্ষেত্রেই সংলাপে বা কোনো সিনে তার ব্যাখ্যাও দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং, ‘ডেইজি’র বাংলায়নে চিত্রনাট্যকারকে সফল বলতে হচ্ছে।

বাংলায়ন করতে গিয়ে কাহিনিতে আরও কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে, যেগুলো মূল কাহিনিকে নষ্ট করেনি; এবং বিভিন্ন কারণে জরুরিও ছিল। ডেইজিতে নায়িকা দুইবার গুলি খায়; প্রথমবার গুলি খেয়ে বাকশক্তি হারায়, দ্বিতীয়বারে মারা যায়। ফুল এন্ড ফাইনালে ববি গুলি খায় একবারই; তাতে বাকশক্তিও হারায়, তবে দিন সাতেকের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়।

ববির এই বাকশক্তি ফিরিয়ে দেওয়াটা এতটা জরুরি ছিল না; তবে যেটা জরুরি ছিল এবং অনিবার্যভাবেই করা হয়েছে, কাহিনিতে মূল নায়কের মারামারির দৃশ্যবৃদ্ধি। ডেইজির নায়ককে এতবার মারামারি করতে হয়নি, তার উপর তার মারামারিগুলো মূলত আগ্নেয়াস্ত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, হয়তো দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখেই, শাকিব খানকে একটু বেশি হাতাহাতি-মারামারি করতে হয়েছে।

তবে একটু অসঙ্গতি থেকে গেছে নায়িকা চরিত্রে; নায়িকা চিত্রশিল্পী, নাম রিমঝিম, বেশ প্রতিভাবান। রিমঝিমের আঁকা ছবি হিসেবে যে পেইন্টিংগুলো দেখান হয়েছে, সেগুলোও বেশ। তবে যে বা যারা ছবিগুলো এঁকে দিয়েছে, তারা যদি ববিকে দেখিয়ে দিতেন-- ওয়েল পেইন্টিংয়ের স্ট্রোক কীভাবে করে, তা মন্দ হত না। এটি অবশ্য অনেকেই জানে না, সুতরাং আপত্তিকর নয়। আপত্তি অন্যত্র, মূল কাহিনিতে এই রিমঝিম তেমন অবস্থাপন্ন নয়, কাজেই সে রাস্তায় বসে মানুষের পোর্ট্রেট করে দেয়। কিন্তু বাংলায়নে রিমঝিমের তথা ববির যে স্টুডিও দেখানো হয়েছে, আমাদের দেশে এমন স্টুডিও যে শিল্পীর থাকবে, তার আর্থিক অবস্থা সে পর্যায়েরই হয়, যে পর্যায়ের হলে তার এমনকি ছবি বিক্রি করারও খুব বেশি প্রয়োজন থাকে না। কাজেই রিমঝিমের রাস্তায় বসে মানুষের পোর্ট্রেট এঁকে দেওয়াটা একটু অবিশ্বাস্যই ঠেকে। অবশ্য পোর্ট্রেটের রেট বাড়িয়ে বিষয়টার এক রকম মীমাংসা করা হয়েছে; সাধারণত যেখানে একশ’ টাকায় পোর্ট্রেট আঁকা হয়, সেখানে রিমঝিম হাসিমুখে নেয় এক হাজার টাকা।

বাংলায়নের জন্য এমনি আরও যে সব পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলোরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কোনো না কোনোভাবে। এমনকি, সিনেমাতে অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যও তেমন নেই; এবং প্রতিটি ঘটনার বিপরীতেই আগে থেকে কোনো সংলাপে বা দৃশ্যে ইঙ্গিত দেওয়া আছে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাহিনির এই বাংলায়ন নিয়ে দুটো প্রশ্ন থেকে যায়; প্রথমত, স্ক্রিপ্ট কিনে নেওয়ার বা অনুমতি নিয়ে কাহিনি ব্যবহার করার কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আছে; সেটা মানা হয়েছে কি না? দ্বিতীয়ত, বাংলায়নের এই বিষয়টি দর্শকদের জানানো হয়েছে কি না?

সম্ভবত, দুটোরই উত্তর না; এবং এতে নৈতিক সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যাও নেই। কেননা উপরের দুটো প্রশ্নেরই নেতিবাচক উত্তর বহাল রেখে বহাল তবিয়তে সিনেমা বানানো হচ্ছে বলিউডেও; ওতে যদি গুরুতর দোষ না হয়ে থাকে, ঢালিউডের নির্মাতারাও এমন কোনো দোষ করেননি। অবশ্য, কাহিনি ‘ডেইজি’ থেকে নেওয়া হয়েছে, শুনলে দর্শকরা মনে হয় না খুব বেশি মান-অভিমান করত; হয়ত ডেইজি দেখা অনেকেও ¯্রফে এই আগ্রহ থেকেই সিনেমা হলে আসতেন যে, ‘ডেইজি’র বাংলায়ন হল কেমন।

‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ সিনেমার কাহিনি তো ‘ডেইজি’ থেকে নেওয়া হয়েছেই, আবার তাতে শাকিবের চরিত্রটিতে দেওয়া হয়েছে ‘শুট ’এম আপ’-এর নায়ক চরিত্রের খানিকটা ছোঁয়া। ‘শুট ’এম আপ’-র অলিভ ওয়েইনের মতো ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’-এর শাকিবও প্রায়শই গাজর চাবায়; এবং সিনেমার লেজে গিয়ে, খলনায়ক অমিত হাসান শাকিবের পাঁচ-পাঁচ দশ আঙুল পিস্তলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিলে, শাকিবও পিস্তলে গাজর ঢুকিয়ে গুলি করে।

সব মিলিয়ে অবশ্য অভিযোজিত কাহিনি মন্দ নয়। আর সিনেমাটোগ্রাফি প্রায়শই অসাধারণ। দু-এক জায়গার দুর্বলতা বাদ দিলে, পুরো সিনেমায় সিনেমাটোগ্রাফার লাল মোহাম্মদের কাজ মুগ্ধ করার মতো। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনের শটগুলোর সিনেমাটোগ্রাফি। ফ্রেমিংও অসাধারণ। দুরবিন বোঝাতে গোল ফ্রেমটাও ভালো হয়েছে; তবে ফ্রেমটা আরও মসৃণভাবে গোল হলে আরও ভালো হত; আর দুরবিন দিয়ে জুম ইন-জুম আউট করাটা কাট-টু-কাট না দেখিয়ে ক্যামেরায় জুম ইন-জুম আউট করে দেখালে আরও বেশি জমত; বিশেষ করে দুষ্টু ফ্রেমগুলোতে ঝাঁপিয়ে যাওয়ার চেয়ে জুম ইন করে যাওয়াটা হত আরও উপভোগ্য।

অ্যাকশন দৃশ্যগুলো নিতান্ত খারাপ হয়নি; অন্তত সেগুলোকে বাংলা সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যই মনে হয়েছে, তামিল সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য মনে হয়নি। অ্যাকশন দৃশ্যে স্ক্রিন ফ্রিজ করে দেওয়ার কৌশলের ব্যবহার ভালোই হয়েছে; তবে জার্ক-এফেক্টগুলো মনে হয় একটু দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেছে। অ্যাকশন স্টান্টগুলোও চটকদার। সব মিলিয়ে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোকে ভালোই বলা যেত, যদি কেবলের ব্যবহার ঠিকমতো করা যেত। কয়েক বারই পর্দায় অ্যাকশন দৃশ্যে ব্যবহৃত কেবল দেখা দিয়েছে। আর কাস্টদের গায়ে কেবলগুলো ঠিকভাবে লাগানোও হয়নি; প্রায়ই কাস্টদের গায়ের জামাকাপড়ের যেখানে কেবল লাগানো হয়েছে, সেই জায়গাটা বেঢপভাবে ফুলে থাকতে দেখা গেছে।

একটি অ্যাকশন দৃশ্যে বড় ধরনের গলদও ছিল; শাকিবের দিকে প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারা হয়, অথচ শাকিবের হাতে লেগে ভাঙে কাচের বোতল। আর ম্যাট্রিক্সের মতো শাকিবের নাকের উপর দিয়ে গুলি যাওয়ার দৃশ্যটা না রাখলে মন্দ হত না; আর রাখা যখন হয়েছেই, শাকিবের শরীর ও গুলির শরীরের রেশিও ঠিক রাখা উচিত ছিল।

সিনেমাটিতে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কাজ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে আগেও, প্রত্যেক ঘটনার জন্যই আগে থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে; অকস্মাৎ ঘটেনি কোনো ঘটনাই। পুরো সিনেমার প্রায় সব সিকোয়েন্স এবং শটই কার্যকারণ শৃঙ্খলে আবদ্ধ। যেমন, প্রত্যেকটা খুনের পর শাকিব-অমিত হাসানের দৃশ্যগুলোর কথাই ধরা যাক। এই সিকোয়েন্সগুলোর দুটি ঘরের বাইরে, বাকি সবগুলো ঘরের ভেতরে। প্রথম যে সিকোয়েন্সটি ঘরের বাইরে আনা হয়েছে, সেখানে সন্ধ্যা দেখানো হয়েছে। শাকিব যে গোপনীয়তার শর্ত ভঙ্গ করে প্রেম করছে, সে ব্যাপারে অমিত হাসানের সন্দেহ হল কীভাবে? কারণ, শাকিব সকালে খুন করলেও, অমিত হাসানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বিকালে। ফ্রেমে বিকালে ঢলে পড়া সূর্য দেখিয়ে বিকাল নিশ্চিত করা হয়েছে। এই মাঝের সময় ও কী করেছে? সন্দেহ! আবার দ্বিতীয় সিকোয়েন্সটি ছাদে; বৈরি আবহাওয়া, ঝড়ো বাতাসে কাগজ-পাতা সব উড়ছে। আর সেই ‘ব্যাড ওয়েদার’-এর কারণে মোট খুনের লিস্টিটা চাইলেও শাকিব খানকে দিতে পারলেন না অমিত হাসান।

এমনিভাবে প্রায় সব সিকোয়েন্সকেই এক রকম কার্যকারণ শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কন্টিনিউয়িটি ব্রেকও তেমন হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে স্খলন ঘটান ঠেকান যায়নি; এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এডি কিছু হাস্যকর ভুল করেই ফেলেছেন। যেমন, কাহিনির এক পর্যায়ে আছে, নায়িকা রিমঝিমের প্রেমে পড়ার পর নায়ক রোমিও রীতিমতো পেইন্টিং বা চিত্রশিল্প নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিল। অথচ এর দৃশ্যায়নে নায়কের হাতে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ‘চটি’ মানে গাইড; গাইডে ইউনিএইড নামক কোচিং সেন্টারের নাম ভীষণ স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে! আবার সিনেমার আদ্যন্ত নিজেকে এএসপি পরিচয় দেওয়া শাকিবের পরিচয়পত্র দেখা যায় সিনেমার একদম লেজে, আর তাতে বড় বড় করে লেখা ‘সিআইডি’!

সিনেমার সাউন্ড ডিজাইন নিয়েও বেশ কাজ করা হয়েছে। গানগুলোও মন্দ হয়নি; তবে মৌলিকত্ব নেই। মূল গানটি, ‘ভালোবাসা হয়ে যায়’ তেলেগু সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘ভানা ভানা বিল্লু বাই’-এর অনুকরণ। এর কোরিওগ্রাফি বেশ; তবে ববির পশ্চাদ্দেশে সাকিবের তবলা বাজানোটা বোধ হয় একটু স্থ’ূল হয়ে গেছে। আবার খানিকটা আইটেম সংয়ের ধরনের ‘হ্যালো ডার্লিং ডার্লিং/ ফিলিং সামথিং সামথিং’ গানটি জনপ্রিয় হিন্দি গান ‘হানি বানি’র অনুকরণ। সিনেমায় আরও দুটি গান আছে; খুব সম্ভবত এ দুটোই মৌলিক; শুনতেও মন্দ নয়। একটি সিনেমার শুরুতেই, ‘যেখানে যাই সেখানে’। আরেকটি গান কান্নাভেজা, দুই নায়ক ও এক নায়িকার ত্রিমুখী-কান্নায় বিষাদ ভারাতুর গানটিও বেশ। আর নির্ভেজাল আইটেম সংটির কোরিওগ্রাফি মন্দ নয়; তবে নাসরিনকে একটু ওজন কমাতে বললে মন্দ হত না। আর গানটির কোরাসের কথাগুলোও অনেকগুলো গানের সামষ্টিক ঋণে ঋদ্ধ; তাতে আছে মমতাজের ‘আগুনের গোলা’ আর সালমান খানের ‘ক্যারেক্টার ঢিলা’ গানের শব্দাবলি।

সিনেমার মূল লোকেশন এফডিসি। কেবল পাহাড়ি শটগুলোই এফডিসির বাইরে ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটগুলো মোটামুটি জুতসই হওয়ায় তাতে কোনো গোল বাঁধেনি।

মূল নায়ক রোমিওর চরিত্রে শাকিব খানের অভিনয়ও ভালো হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় দুর্দান্ত হয়েছে। কেবল পাহাড় থেকে নেমে আসার সময় তার দৌড়টি একটু কেমন যেন দেখা গেছে; আর তার কান্নার দৃশ্যায়নটিও অন্যভাবে করা যেত। বিপরীতে নায়িকা রিমঝিমের চরিত্রে ববিও ভালো করেছেন। নতুন হিসেবে পার্শ্বনায়ক আবিদের চরিত্রে তানভীরও মন্দ করেনি। খলনায়ক ডিআইজি বখতিয়ারের চরিত্রে অমিত হাসান খারাপ করেননি। কাবিলা বরাবরের মতোই বিনোদন জুগিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, কারও অভিনয় নিতান্ত বিরক্তিকর লাগেনি।

সব মিলিয়ে ‘ফুল এ্যান্ড ফাইনাল’ সিনেমাটি মন্দ হয়নি। কাহিনি ধার করা হলেও, ‘ডেইজি’র মতো অসাধারণ একটা কাহিনি ধার করে সিনেমা বানানোটা নিতান্ত মন্দ নয়। আর তাতে ‘শুট ’এম আপ’-এর ছোঁয়াটিও ভালো। তাতে আর কিছু না হলেও, কাহিনির ফাঁকফোঁকর তেমন মুখব্যাদান করতে পারেনি। শুধু গানগুলো যদি মৌলিক রাখা যেত, সিনেমাটিকে এমনকি দুর্দান্ত বলা যেত। আশা করি, শীঘ্রই দুর্দান্ত কাহিনির এমন বাংলা সিনেমা বানানো হবে, যেটির কাহিনি একেবারেই মৌলিক; কোনো বিদেশি সিনেমার বাংলায়ন নয়।