শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ষোড়শ আসরের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিনোদন আমাদের জীবনের প্রাণশক্তি এবং এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ। সুপথে যদি জীবন পরিচালিত করতে হয়, বিনোদনের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি।
“বিনোদনের ক্ষেত্রে আজকে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে আমরা এটাকে সব সময় সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
সিনেমার বিকাশের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “আমি ২০০৯-১০ সাল থেকে চেষ্টা করছি, এই সিনেমাকে একটু বিকাশের। সেটার মূলে ছিল (তারেক) মাসুদ, সেও এখন নেই। সে আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিল, আমি এখনও সেগুলো অনুসরণ করি।”
সিনেমার প্রতি নিজের অনুরাগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন অশীতিপর মুহিত, ছোটবেলায় সিনেমা হলে গিয়ে সম্রাট বাবরের জীবনী নিয়ে সিনেমা দেখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
“আমাদের তরুণ বয়সে তরুণ-যুবকদের মধ্যে একটা সিনেমা বেশ জনপ্রিয় ছিল, টারজান। আমি এখনও মাঝেমধ্যে টারজান দেখি।”
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “ছবির ব্যাপারে আমাদের ইতিহাস বেশ জটিল। কলকাতা বেশ পুরনো শহর নয়, কিন্তু সেখানে চলচ্চিত্র বড় জায়গা করে নিয়েছে, ভারতীয় ছবির বিকাশে কলকাতা কোনো অংশ কম ছিল। ঢাকা অনেক পুরনো শহর হলেও সেখানে চলচ্চিত্র সেভাবে বিকশিত হয়নি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চলচ্চিত্র উৎসবের ব্যয় নির্বাহ সহজ করার স্বার্থে একটি ট্রাস্ট গঠনে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য নমিনাল ফান্ড করার প্রস্তাব এসেছে। আর রেইনবো সংসদ থেকে বলা হয়েছে, এখন যে অনুদান তারা পান সেটা অব্যাহত রাখতে। এ দুটিই আমি গ্রহণ করতে রাজি আছি।”
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ দমনের যুদ্ধে আছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই যুদ্ধ আমরা সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করি।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা গিরীশ কাসারাবালি ও উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা কামাল বক্তব্য দেন।
এর আগে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর গত বছর প্রয়াত চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। শেষে তুরস্কের নির্মাতা কাজিম ওজর আলোচিত চলচ্চিত্র ‘জার’ এবারের উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
এবারের উৎসবে বাংলাদেশের পাশাপাশি আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইরান, ইরাক, ফ্রান্স, চীন, কাজাখস্তান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কি ও সুইজারল্যান্ডসহ ৬৪টি দেশের ২১৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
এসব চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সেমিনারের ভেন্যু থাকছে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল ও প্রধান মিলনায়তন। এছাড়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, রাশিয়ান কালচার সেন্টার ও স্টার সিনেপ্লেক্সে উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে।
কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে উৎসব চলাকালীন সময়ে নিয়মিত মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিয়মিতভাবে মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন।