যেন বাবাকে হারালাম: শাবনূর

নায়করাজ রাজ্জাককে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন শাবনূর। হঠাৎ তাঁর মৃত্যুতে মাথার উপরের বিস্তৃত ছায়া হারালেন তিনি। অভিভাবকতুল্য এই অভিনেতাকে নিয়ে লিখলেন চিত্রনায়িকা শাবনূর।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 03:46 PM
Updated : 22 August 2017, 03:46 PM

গতবছর জন্মদিনে রাজ্জাক আংকেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তারপর আর দেখা হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হতো। খোঁজখবর রাখতেন উনি। হঠাৎ সোমবার (২১ অগাস্ট) রাতে উনার মৃত্যুর খবরটি শোনার পর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারিনি।

পরে মেকআপ ম্যান থেকে ডিরেক্টররা ফোন দিচ্ছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম সবাই ফাজলামি করছে। এর আগেও উনাকে নিয়ে বেশ ক’বার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল দিব্যি ভালো আছেন উনি। এমনকি আমাকে নিয়েও তো নিউজ হয়েছিল, ‘শাবনূর আর নেই।’ সেই অভিজ্ঞতা থেকে রাজ্জাক আংকেলের মৃত্যুর সংবাদটা শুরুতে আমলে নিই নি।

কিন্তু যখন নিশ্চিত হলাম উনি আসলেই আর নেই, তাৎক্ষণিক বেরিয়ে পড়লাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে কয়েকজন ফোনে জানালেন, লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে। এখন গিয়ে লাভ নেই। চাপা কষ্ট নিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।

 সকালে উঠেই বাচ্চাকে নিয়ে এফডিসিতে গেলাম। যেই মানুষটা কিছুক্ষণ আগেও আমাদের মাঝে ছিলেন। সেই মানুষটা আর আমাদের মাঝে নেই! ভাবতেও অবাক লাগছে। এটা জানি, সবাইকে ছেড়ে যেতে হয়। কিন্তু কিছু প্রিয় মানুষের শূন্যতা বুকটা ভীষণ পোড়ায়। আমার খুব শখ ছিল উনার প্রোডাকশনে কাজ করার। উনিও চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। আশাটা অসম্পূর্ণই রয়ে গেল।

উনি আমার বাবার মতো। উনাকে হারালাম মানে, যেন বাবাকে হারালাম। একবার দেশের বাইরে গিয়েছিলাম উনার সঙ্গে। অনেকেই ছিলেন, ছিলেন আমার মা-ও। কাজের ফাঁকে একটু ফুরসত পেলেই উনার কাছ থেকে গল্প শুনতাম। উনি গল্প বলতে ভালোবাসতেন খুব। হরেক রকম গল্পের পসরা সাজাতেন। সেই সময়ে কবরী, ববিতার সঙ্গে তাঁর অভিনয়ের গল্প শুনতাম। গল্পের মাঝে হঠাৎ মা’কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। উনি মজার স্বরে বললেন, ‘দেখ! দেখ! তোর মা কোথায় হারিয়ে গেল?’

বেশ ক’দিন ছিলাম দেশের বাইরে। পুরো আয়োজনটি মাতিয়ে রেখেছিলেন উনি। ফেরার সময় ট্রানজিটে আমার রেগুলার খোঁজখবর নিয়েছেন। উনি শুধুমাত্র মহানায়কই ছিলেন না, খুব কেয়ারিং পারসন তিনি। উনার চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এফডিসিতে গিয়ে দেখলাম, উনি ঘুমিয়ে আছেন। উনি সবার মনের রাজা হয়ে থাকবেন।

উনি চলচ্চিত্রের জন্য যা করেছেন সে ঋণ কিছুতেই শোধ করতে পারব না আমরা। চলচ্চিত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তাঁর। উনার পোশাক থেকে স্টাইল-সবই তরুণদের কাছে ছিল আদর্শ। ছোটবেলা থেকেই আমি উনার ভক্ত। মা’র সঙ্গে তাঁর ছবি দেখতাম। গলায় বাঁধা রুমাল আর সুইট হাসি দেখে যেকোনা তরুণী প্রেমে পড়তো। আমার মতো এই প্রজন্মের মানুষদের লাখো মানুষের আইডল। তার সঙ্গে যতক্ষণ থাকতাম কিছু না কিছু শিখেছি আমি।

উনার বলার ভঙ্গিটাও মুগ্ধ করার মতো ছিল। সেটা উনার সঙ্গে কথা না বললে কিছুতেই বোঝা যাবে না। উনি চলে যাওয়ার পরপর বারবার শুধু সেই স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। উনাকে কখনোই ভুলে থাকতে পারবো না।

অনুলিখন: সাইমুম সাদ