জহির রায়হান বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন: সুচন্দা

কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ও ঔপন্যাসিক জহির রায়হানের জন্মদিনে (১৯ অগাস্ট) তাঁকে ঘিরে গ্লিটজের মুখোমুখি হলেন স্ত্রী ও অভিনেত্রী সুচন্দা।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 11:02 AM
Updated : 19 August 2017, 11:29 AM

জহির রায়হানের কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তির ৪৭ বছর পর শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। গতবছর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ছবিটির গল্প জহির রায়হানের না। আলাপচারিতার শুরুতেই এর প্রতিবাদ জানালেন সুচন্দা। বললেন, “এমন একটি মিথ্যা খবর কারা প্রচার করছে? ইতিহাসকে কারা পাল্টাতে চায়?”

গ্লিটজ: জন্মদিনে জহির রায়হানকে ঘিরে আমরা ইন্টারভিউটা শুরু করতে চাই।

সুচন্দা: জহির রায়হানকে নিয়ে তো নানা মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে পত্রিকায়। সত্যি বলতে এসব দেখে উনাকে নিয়ে আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করে না আমার।

গ্লিটজ: আপনি সম্ভবত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের বিষয়ে বলছেন?

সুচন্দা: হ্যাঁ। বলুন তো, ছবিটির গল্প নাকি জহির রায়হানের না! এমন একটা মিথ্যা সংবাদ কারা প্রচার করছে? পত্রিকাগুলো বানিয়ে বানিয়ে লিখছে, কার কাছ থেকে যেন সিনেমার গল্প ধার নিয়েছেন জহির রায়হান! ইতিহাসকে কারা পাল্টানোর চেষ্টায় লিপ্ত? কেন এই ধরণের কথা পত্রিকায় লেখা হবে? কিছুদিন আগে এক পত্রিকায় দেখলাম, উনি (জহির রায়হান) নাকি কার বাসায় গিয়ে গল্প নেওয়ার জন্য বসে থাকতেন!

‘জীবন থেকে নেয়া’ কি অন্যের গল্পে নির্মাণ হয়েছে? জলজ্যান্ত সত্য কথাটা কেন ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে? ছবির গল্পের কাহিনি তো আমি জানি। আমি তখন তার সামনেই ছিলাম। এমন অপবাদ কী সহ্য করার মতো? জহির রায়হানের মতো একজন মানুষকে এতোবড় অপবাদ দেয়া হচ্ছে কেন? উনি বেঁচে থাকলে তো এইরকম কথা লেখার সাহস পেতো না।

যেহেতু জীবিত নেই, তাই এ সমস্ত কাহিনি বানাচ্ছে। কিছুদিন আগে মাসিক একটা পত্রিকায় ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কায়দা করে ‘এই সেই’ ‘ওমুক তমুক’ লিখেছে। এসব দেখে আমি অনেক দুঃখ পাই। মিথ্যা কথা পছন্দ করি না। কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এসব কথা বলা হচ্ছে-সেটা তো খেয়াল রাখতে হবে। যে লোক দেশের জন্য, চলচ্চিত্রের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে। তার লেখা গল্প, ছোটগল্প, উপন্যাস চুরি করে প্রকাশ করে মানুষ কতো টাকার মালিক হয়ে গেছে। আর তাকেই কীনা এই অপবাদ নিতে হলো!

আপনারা ইন্টারনেটে দেখেন, ‘জীবন থেকে নেয়া’ কে বানিয়েছে? কার গল্প? টাইটেল তো আর এখন কেউ করে দেয়নি। টাইটেলের কী নাম মোছা যায়? একমাত্র জহির রায়হানই পারে ‘জীবন থেকে নেয়া’র মতো ছবি বানাতে। তার ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সঙ্গম’ বানানোর ক্ষমতা অন্য কারো নেই।

গ্লিটজ: কারা এমনটা ছড়াচ্ছে বলে আপনি ধারণা করছেন?

সুচন্দা: নিজস্ব কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিংবা হয়ত বড় কোনো কারণ আছে-সেটা আমি জানি না। বিশেষ গোষ্ঠিটি জহির রায়হানকে একেবারে নিচে নামাচ্ছে। তাদের কথা মতো, জহির রায়হান একজন মূর্খ। এরকম একটা মানুষ সম্পর্কে এইরকম তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কী অর্থ হতে পারে? আমার মনে হয় পয়সা খেয়ে কিছু মানুষ এসব করছে।

গ্লিটজ: বিষয়টি নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কীনা?

সুচন্দা: আমি এখনও চুপ করে আছি। সব পত্রিকার কাটিং রেখে দিয়েছি। একদিন মুখ খুলব। জহির রায়হান মরে গেছে কিন্তু তার সন্তানরা আছে। আমি বেঁচে আছি। এগুলোকে কোনো ছাড় দেব না। এটা কোনো ভুল না। জেনে বুঝে এসব করছে। সন্তানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শিগগির অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নেবো আমরা। এর একটা বিহিত করতে হবে। প্রয়োজনে মামলা করবো।

গ্লিটজ: এই প্রেক্ষিতে যদি বলি, আমরা কি জহির রায়হানের সঠিক মূল্যায়ণ করতে পেরেছি?

সুচন্দা: সত্যজিৎ রায়ের মতো লোক ‘জীবন থেকে নেয়’ ছবিটি দেখে জহির রায়হানের পিঠ চাপড়িয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার মতো লোক ওইদেশে জন্মালো কেনো? ওই দেশে জন্মানোয় তোমার ভুল হয়েছে।’

আমরা তো তাকে কিছুই দিতে পারলাম না। উল্টা কতগুলো অপবাদ দিলাম। চলচ্চিত্র অঙ্গন, দেশের মানুষের জন্য উনি কী করেননি? জহির রায়হান বেঁচে থাকলে অনেক কষ্ট পেতেন। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা কষ্ট পাচ্ছি। এই কলঙ্ক মোছার না। সত্যি বিষয়টা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে এমনভাবে একটা কাহিনি সৃষ্টি করছে যে, জহির রায়হান কিছুই বানান নি। এতো বছর পর এই ধরণের কাহিনি হচ্ছে? আগে তো হয়নি।

গ্লিটজ: বিষয়গুলো সরকারকে জানিয়েছে কীনা?

সুচন্দা: সরকার ব্যাপারটা বড় কথা না। কথা হলো আমাদের কাছেই তো খারাপ লাগছে। যারা জহির রায়হান সম্পর্কে জানে-আমার মনে হয় আমাদের মতো মনে মনে কষ্ট পান। এতবড় কীভাবে লেখে? আমি অবাক হয়ে যাই। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আমাদের ভাষা নেই বলার। যেখানে জলজান্ত প্রমাণ রয়ে গেছে। এটা এমন না আমরাই মিথ্যা বলছি।

গ্লিটজ: সবশেষ ভক্তদের জন্য কী বলবেন?

সুচন্দা: জহির রায়হান মানুষ দেশের জন্য, সমাজের জন্য নিজের লাইফটা স্যাক্রিফাইস করেছে। তাঁর কবরটাও নাই। তাঁর কোনো চিহ্নও পাইনি আমরা যে আমরা সেখানে গিয়ে দু’ফোটা চোখের পানি ফেলবো। দুর্ভাগা আমরা। তাঁকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেখলে আমি নির্বাক হয়ে যাই।