শিল্পকলায় নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’

সমাজের তৈরি কঠিন বিধি নিষেধের বেড়াজালে আটকে যান্ত্রিক হয়ে যায় মানুষ, হারিয়ে ফেলে তাদের নিজস্ব বোধশক্তি। কী করে নতুন ও তারুণ্যের উদ্দীপনা তাদের এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি এনে দেয়, তারই ব্যঙ্গাত্বক প্রকাশ ‘তাসের দেশ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2017, 04:36 PM
Updated : 18 August 2017, 04:36 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’ যৌথভাবে মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস-বিপা।

শিল্পকলা একাডেমি ও বিপার এই যৌথ প্রযোজনায় অংশ নিতে নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছে ২০ সদস্যের একটি দল। তাদের সঙ্গে আরো যোগ দেন শিল্পকলার আটজন নৃত্যশিল্পী এবং কিছু শিশু নৃত্যশিল্পী।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ। ছবি: জয়ন্ত কুমার সাহা

এই নৃত্যনাট্যের মূল পরিকল্পনা, নৃত্য পরিচালনা ও পোষাক পরিকল্পনা করেছেন এ্যানি ফেরদৌস।

তিনি বলেন, ঢাকার মঞ্চে ‘তাসের দেশ’র উপস্থাপনা বিপার অন্যান্য পরিবেশনা থেকে একটু আলাদা। সুদূর নিউ ইয়র্ক শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা একদল কিশোর-কিশোরী এই নৃত্যনাট্যে অভিনয় করেছে।

বিপা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্মের অভিভাবকদের একান্ত আগ্রহে বাংলা সংস্কৃতিকে জানানোর ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ্যানি জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই রচনাকে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম ও আমেরিকান মূল ধারায় বোধগম্য করার উদ্দেশ্যে এই নৃত্যনাট্যের সংলাপ ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ। ছবি: জয়ন্ত কুমার সাহা

তিনি বলেন, “ইংরেজিতে অনুবাদের কারণে এই ‘ল্যান্ড অফ কার্ডস’ নৃত্যনাট্য প্রবাসে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, বিভিন্ন দেশের তরুণসহ সকল বয়সের দর্শকদের কাছেও। তবে সংলাপ ইংরেজিতে হলেও রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাধুর্য সকল দর্শককে বাংলা সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করবে।”

নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশের’ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে মুখোশ। এই মুখোশ তৈরি করেছেন আমেরিকান শিল্পী জিল রাইনিয়ার।

নৃত্যনাট্যের সংগীত পরিচালনা করেছেন পরিচালক নাদিম আহমেদ। নিউ ইয়র্কের মিডি মিউজিক রেকর্ডিং স্টুডিওতে এই সব গানে কন্ঠ দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের কজন উদীয়মান শিল্পী।

শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে বিপার ‘তাসের দেশ’ হল দ্বিতীয় আয়োজন। প্রথম আয়োজন ছিল ২০১৫ সালে ‘নৈবেদ্য’।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ। ছবি: জয়ন্ত কুমার সাহা

১৯৯৩ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম বিপার। বাংলা সংস্কৃতি শিক্ষাদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ও অনুশীলনের অন্যতম এই কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নিউ ইয়র্কের কুইন্স ও ব্রুকলিনে বিপার তিনটি শাখায় নিয়মিতভাবে বাংলা ভাষা, সঙ্গীত, নৃত্য ও যন্ত্রসঙ্গীত শিক্ষা দেওয়া হয়।

‘সেলিম আল দীন উৎসব’ শুরু

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৬৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ছয় দিনব্যাপী ‘সেলিম আল দীন উৎসব’।

‘তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেছে সেলিম আল দীন উৎসব পর্ষদ।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ। ছবি: জয়ন্ত কুমার সাহা

শুক্রবার সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে নাট্যকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বিকালে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ছিল প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা সভা।

‘শকুন্তলা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আফসার আহমেদ, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ও শিমুল ইউসুফ।

শনিবার বিকাল ৪টায় জাতীয় নাট্যশালার লবিতে আয়োজন করা হয়েছে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার।

পরে সন্ধ্যায় উৎসবের মূল আয়োজনের উদ্বোধন করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এ অনুষ্ঠানেই প্রদান করা হবে ‘সেলিম আল দীন পদক’, এ বছর এই পদকটি পাচ্ছেন নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ। ছবি: জয়ন্ত কুমার সাহা

এছাড়া এ অনুষ্ঠানে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম পদক’, ‘ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক’ প্রদান করা হবে।

পদক প্রদানের পর নাট্যশালার মূল মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা থিয়েটারের নাটক ‘ধাবমান’।

রোববার এ উৎসবে মঞ্চস্থ হবে বোধন থিয়েটারের নাটক ‘চন্দ্রাবতীর কথা’, বঙ্গলোক পরিবেশন করবে সেলিম আল দীনের গান ও রচনা নিয়ে আলেখ্য ‘রূপচান সুন্দরীর পালা’।

উৎসবে সোমবার ঢাকা থিয়েটারের নাটক ‘নিমজ্জন’, মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ‘স্বপ্নরমণীগণ’, বুধবার মঞ্চস্থ হবে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘লীলাখ্যান’।

অন্যদিকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণে স্বপ্নদল শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ করছে ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘হেলেন কেলার’, ‘হরগজ’।