‘মাটির ময়না’, ‘রানওয়ে’, ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘আদমসুরত’, মুক্তির গানের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা সংকটকে যিনি শুধু চিহ্নিতই করেননি সারাদেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করে গড়ে তুলেছিলেন জনসচেতনাও।
ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের মাদ্রাসায় নির্মাতার বাল্য জীবনের অভিজ্ঞতার উপর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ ২০০২-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে এবং এটি প্রথম ‘বাংলাদেশী বাংলা চলচ্চিত্র’ হিসেবে ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
তার পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সোনার বেড়ি’ (১৯৮৫) এবং সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে।
এ নির্মাতার সর্বশেষ নির্মাণ প্র্রয়াস ছিলো ‘কাগজের ফুল’। কিন্তু সে ফুল ফোটার আগেই আকস্মিক প্রাণ হারালেন তিনি। তার নির্মাণ ও জীবনসঙ্গী মার্কিন নাগরিক ক্যাথরিন মাসুদ এগিয়ে নিয়ে চলছেন তার অবশিষ্ট কাজ ও স্বপ্নগুলো।
তারেক-মিশুক দু’জনকেই স্মরণ করে ক্যাথরিন বলেন, “তারা যদিও আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাদের কাজ তাদের স্বপ্ন আমাদের সামনের পথে আলো ফেলবে। এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার একটা জায়গা থাকবে।”
এদিকে, তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, শুধু বই’ই নয়। তারেক মাসুদের দুটি অসমাপ্ত প্রামান্যচিত্র সমাপ্তির পথে টানতেও কাজ করছেন ক্যাথরিন। তবে, থেমে যাওয়া ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের কাজ খুব সহসা শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তারেক মাসুদের প্রয়াণ দিবসে ক্যাথরিন অবস্থান করছেন তারেকের জন্মভূমি ও সমাধিস্থল ফরিদপুরের নূরপুর গ্রামে।
এদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি এবং তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট যৌথভাবে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে স্মৃতিতর্পণ এবং ‘তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা ২০১৭’ আয়োজন করেছে।