মীনা কুমারী: নিজ রাজত্বে বন্দী এক বিষন্ন রানীর গল্প

‘সাহেব বিবি অউর গোলাম’, ‘বহু বেগম’, ‘পাকিজাহ’, ‘বাইজু বাউরা’ ‘মেরে আপনে’ সহ অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন পঞ্চাশ ও ষাট দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মীনা কুমারী। ৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে পড়ুন প্রয়াত এ অভিনেত্রীর জীবন কাহিনি।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2017, 02:26 PM
Updated : 1 August 2017, 03:42 PM

অভিনয়ের শুরু:

১৯৩৯ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে রূপালি দুনিয়ায় পা রাখেন মীনা কুমারী। বাবা-মায়ের দেয়া নাম মেহজাবিন বানু হলেও পর্দায় মীনা কুমারী নামেই সুপরিচিত ছিলেন অনিন্দ্যসুন্দরী ও লাস্যময়ী এ ভারতীয় অভিনেত্রী। বাবা-মা দু’জনই ছিলেন থিয়েটার কর্মী। তাই ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে পরিচিত হন ছোট্ট মেহজাবিন।

দারিদ্র্য ও সংগ্রামময় জীবনে ছোটবেলা বলে কিছু ছিলো না মীনার জীবনে। বুদ্ধি হবার আগ থেকেই শিখেছেন ক্যামেরার সামনে নিজেকে মেলে ধরতে। ১৯৪৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন ‘বাচ্চো কি খেল’ সিনেমায়। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে হাতে নেন একের পর এক সিনেমা।

মীনা কুমারীর সাড়াজাগানো চরিত্র:

কেবল সুর্দশনাই নয়, অভিনেত্রী হিসেবেও মীনা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী। ১৯৫৪ সালে ‘বাইজু বাউরা’ সিনেমার জন্য প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন তিনি। পরের বছর ‘পরিনীতা’র জন্য আবারও পুরস্কৃত হন তিনি। তবে ১৯৬৩ সালে ‘সাহেব বিবি অউর গোলাম’ ছবির জন্য সব বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে রেকর্ড গড়েন তিনি!

সমাজ ও পুরুষতন্ত্রের যাতাকলে পিষ্ট অত্যাচারিত নারীর চরিত্রে বেশি অভিনয় করতে দেখা গেছে এ অভিনেত্রীকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের আদর্শ ভারতীয় নারীর প্রতিরূপ হিসেবেই পর্দায় উপস্থাপিত হয়েছেন তিনি। তবে আদর্শ গৃহবধূ ও প্রেমিকা চরিত্রের বাইরে ‘মিস ম্যারি’ (১৯৫৭), ‘শরারত’ (১৯৫৯) ও ‘কোহিনূর’ (১৯৬০)-এর মতো বেশ কিছু কমেডি সিনেমায় স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

পর্দার রানী বনাম বাস্তব জীবনে বিষন্ন এক নারী:

রূপালি পর্দায় সাফল্যের শীর্ষে থাকলেও বাস্তব জীবন মোটেও সুখকর ছিলো না মীনা কুমারীর। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলো বনিবনার অভাব। ১৯৫২ সালে খ্যাতিমান পরিচালক কামাল অমরোহির সঙ্গে বিয়ে হলেও তাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো সংঘাতপূর্ণ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সিনেমায় কাজ করা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে তার। ফলে বিয়ের অল্পদিনের মাথায় স্বামী-সংসার ছেড়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে হতাশা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অত্যধিক মদ্যপান অল্প বয়সেই তার জীবনে বয়ে আনে লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগ। ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়েসে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান হিন্দি সিনেজগতের অন্যতম প্রতিভাবান এ নক্ষত্র। মীনা কুমারীর এ করুণ পরিণতির সঙ্গে তুলনা করা হয় হলিউড অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোকে। দু’জনই দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে খ্যাতির চূড়ায় ‍পৌঁছন। কিন্ত সহসাই যেন হারিয়ে যান বিস্মৃতির অতলে।