আমাকে বনবাসে পাঠানো হয়েছিল: তিন্নি

আবারো আলোচনায় অভিনেত্রী শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি। দীর্ঘদিন মিডিয়ার আড়ালে থাকার পর ফিরেছেন চেনা কক্ষপথে। দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে। ‘কুয়াশার ভিতরে একটি মৃত্যু’ নামে একটি নাটকে শুটিং করেছেন। জানালেন, অন্তরালের থাকার কারণ, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনের গল্প ও রিহ্যাবের সেই দিনগুলির কথা।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2017, 01:47 PM
Updated : 28 July 2017, 01:48 PM

গ্লিটজ: দীর্ঘ বিরতির পর কাজে ফিরলেন। কেমন লাগছে?

তিন্নি: একসময় প্রায়ই প্রতিদিন কাজ করতাম। খুব ব্যস্ততায় দিন কেটেছে আমার। সেকারণে এখন হুটহাট দু’একদিন শুটিং করে মনে হয়, শুটিংয়ের সময়গুলো যদি আরেকটু দীর্ঘ হত! কাজটা নিয়ে অনেক প্ল্যান করেছি। প্রচুর মিটিং হয়েছে। কিছুদিন আগে পারভেজ আমিন বললো, শুটিং করতেই হবে। শেষ অবধি কাজটা শুরুই করে দিলাম। সিলেটে শুটিং করেছি। দারুণ সময় ছিল। কো-আর্টিস্ট হিসেবে সজল অসাধারণ। ও অসম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন। যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে। আর আমি খানিকটা অগোছালো। সেকারণে সজল নিজের মেকআপগুলো আমাকে দিয়েছে। বলেছে, আপাতত কাজ চালিয়ে নে। এতোদিন সত্যিই লাইট-ক্যামেরা মিস করেছি। মেকআপ মিস করেছি। শুটিংয়ের সময় ননস্টপ ছবি তুলে তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। ভীষণ এক্সাইডেট আমি। সেই আগের মতোই।

গ্লিটজ: এই দফায় ফেরার জন্য আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে কে?

তিন্নি: আমার মা। আলাদীনের চেরাগের মতো উনি হুটহাট এমন কিছু কথা বলেন, অনুপ্রাণিত হই আমি। এতদিন ভেবেছিলাম ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে বাবা-মা হয়তো আমার উপর খুব অভিমান করে আছে। কিন্তু মা এখন আমার শুটিং করার কথা শুনলেই এক্সাইডেট হয়ে যায়। যে মা একসময় আমাকে বলতো, মিডিয়ায় কাজ করে কিছু হবে না। সেই মা-ই আজ আমাকে সাপোর্ট করছে। এটা আমার জন্য অবশ্যই অনেক ভালোলাগার।

গ্লিটজ: বিরতির সময়গুলো কেমন কেটেছে?

তিন্নি: সময়গুলো মোটেই ভালো ছিল না। যদি বলি ভালো ছিল, তাহলে এটা ভুল হবে। দীর্ঘদিন কাজের বাইরে থাকলেও আমি কিন্তু কাজ করতেই চেয়েছিলাম। পারিনি। আমার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সেরকম ছিল না। তবে নিজের প্রতি আস্থাটা ছিল, আমি এখনো শেষ হয়ে যাইনি। বরাবরই স্ক্রিণ আমাকে টেনেছে। প্রতিবারই ফেরার পর আমাকে নিয়ে নিউজ হয়। আমি বলবো, আমার কপাল ভালো। অন্যান্য অভিনেত্রীদের নিয়ে এমনটা হয় কীনা জানি না। দর্শক কতোটা ভালোবাসে এটা আমি জানি। এটাও জানি আমার ভক্ত, সহকর্মী ও সাংবাদিক বন্ধুরা আমার সঙ্গেই আছে। মাঝের সময়গুলোতে আমার ব্যক্তিগতজীবন নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। তখন সাংবাদিক বন্ধুরা লেখালেখি করে আমার লাইফে নতুন করে আর কোনো দুর্দশা তৈরি করেননি। গত তিনবছরে এমনটা দেখিনি। কিছু মানুষের জন্ম হয় মানুষের মনে থাকার জন্য। আমি হয়তো সেই ধরনের একজন মানুষ। সংবাদকর্মীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অনেক।

‘কুয়াশার ভিতরে একটি মৃত্যু’ নাটকের দৃশ্য

গ্লিটজ: ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন কাটিয়ে নিজেকে কতোটা গুছিয়ে নিয়েছেন?

তিন্নি: কয়েক বছর আগে আমাকে বনবাসে পাঠানো হয়েছিল। রিহ্যাবে ছিলাম। আমি জানি, কতটুকু ভুল করেছিলাম। সেটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই। ভুল করলে আশাকরি, আপনারা ধরিয়ে দেবেন। আপনারা নিশ্চয় চাইবেন না, খুব কুৎসিতভাবে আমি মরে যাই। আমার অনেক ফলোয়ার আছে। আমি চাইবো না, আমাকে ফলো করতে গিয়ে কোনো ইয়াং মেয়ে অন্য লাইফে চলে যাক।

গ্লিটজ: রিহ্যাবের দিনগুলি কেমন ছিল?

তিন্নি: আমি বলে বোঝাতে পারবো না, দিনগুলি কেমন ছিল। না বলতে পারছি, না সইতে পারছি। ওই সময়গুলোতে আমি দেখেছি, ‘তিন্নি নাই, ‘তিন্নি উধাও’-এমন নিউজ ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। খুব অসহায় বোধ হচ্ছিল তখন। আমি নিউজগুলো দেখেও বলতে পারিনি, আমি তো এখানে। এটা একধরনের কুরে কুরে শেষ হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। ওই সময়গুলো মনে হচ্ছিল, বোহেমিয়ান অ্যাক্টের কারণে এই পরিণতি হলো, আমার উচিত ছিল বোহেমিয়ান অ্যাক্টটা না করা। সেই দিনগুলি আমার লাইফে অনেক বড় একটা দাগ কেটেছে।

গ্লিটজ: ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা কী?

তিন্নি: একটা সময় দু’হাতে টাকা কামিয়েছি। ফুরিয়ে গেলে অনুধাবন করেছি, টাকা লাগবে। আমি একদমই হিসেবী মানুষ না। সেই জায়গা থেকে বলবো, আপাতত বাবা-মা’র ঘাড়ে ভর করে বসছি। ইচ্ছা আছে কয়েকদিন দিন ব্রেক নিয়ে পুরাতন সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করবো। যারা আমাকে নিয়ে এখনো কাজ করতে চায়।

গ্লিটজ: ভক্তদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

তিন্নি: স্যরি! বহুবার আমি আপনাদেরকে আশাহত করেছি। সত্যিই আমার করার কিছু ছিল না। আমি হয়তো অধরা হয়ে থেকেছি। সুনাম-বদনাম থাকা সত্ত্বেও আমাকে আপনারা এতো উৎফুল্লভাবে নেন, আমি আসলেই সৌভাগ্যবতী।